parbattanews

পার্বত্য তিন জেলায় খৃষ্টীয়করণে বেপরোয়া মিশনারী চার্চগুলো

pahar 1

১৫ হাজার উপজাতি পরিবার ধর্মান্তরিত : পাহাড় জুড়ে উদ্বেগ
 ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষ্টি সামাজিক ধর্মীয় রীতিনীতি  হুমকিতে

বেলায়েত হোসেন, পার্বত্যাঞ্চল থেকে ফিরে:
(আট)
দেশের পার্বত্য তিন জেলায় খৃষ্টীয়করণের বেপরোয়া প্রতিযোগিতায় নেমেছে মিশনারী চার্যগুলো। উপজাতীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থিক অস্বচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা এ তৎপরতায় ইন্ধন দিচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় বসবাসরতরা। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের কর্মকান্ড সরকারের নজরদারিতে আছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত সময়ে খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিস্তৃণ অঞ্চলে প্রায় ১৫ হাজার উপজাতি পরিবার ধর্মান্তরিত হয়েছে। আর্থিক সহায়তার সুযোগে নৃ-গোষ্ঠীর দরিদ্র ও সহজ সরল সদস্যদের টার্গেট করে মিশনারী চার্চগুলো ধর্মান্তকরণের কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে। তারা ত্রাণসামগ্রী, নগদ অর্থ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে।  উন্নত জীবণ ধারণের লোভনীয় প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে ধর্মান্তরিত হবার পর মিশনগুলোতে তাদের আনাগোনা বেড়ে চলেছে। মিশনারীরা ধর্মান্তরিত নও-খৃষ্টানদের সহায়তায় অন্যদের একই প্রতারণার ফাঁদে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ইউএনডিপি, অস্ট্রেলিয় হাইকমিশনসহ পার্বত্য চট্রগ্রামে নিয়োজিত বিভিন্ন এনজিও উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করাসহ তাদের বাঙ্গালী বিদ্বেষী করে তুলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বসবাসরত উপজাতি, উপজাতি এবং বাঙালী নেতারা এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তারা জানান, বিদেশী কয়েকটি দূতাবাস, দাতাসংস্থা, মিশনারী কর্মকর্তা এবং তাদের মদদপুষ্ট এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। এলাকাবাসী এবং প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কামাল হোসেন নামের এক যুবকের কথিত অপহরণকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তাইন্দংয়ে গত ৩ আগস্ট ৩৮টি পাহাড়ী এবং তিনটি বাঙালী বাড়িতে দুর্বৃত্তের অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর এবং লুটপাটের সহিংস ঘটনাকে পুঁজি করে ফের চার্চগুলোর দৌঁড়ঝাপ বেড়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এসম্পর্কিত সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ব্যাপকহারে ধর্মান্তকরণের ঘটনাকে মহল বিশেষের দুরভিসন্ধির আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে।

এনজিও ব্যুরো, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অদূর ভবিষ্যতে পার্বত্যাঞ্চল খৃস্টান অঞ্চলে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে। ধর্মমন্ত্রণালয় পাহাড়ি এলাকায় এনজিওগুলোর অপতৎপরতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

ধর্মান্তকরণের সঙ্গে যুক্ত এজজিওগুলোকে চিহ্নিত করে শীর্ষ একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, পার্বত্য চট্রগ্রামে খৃস্টধর্মের দ্রুত বিকাশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতি,কৃষ্টি সামাজিক ও ধর্মীয় রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। উদ্বেগজনক এই তথ্য পাবার পর  সরকারের বিভিন্ন মহল নড়েচড়ে বসেছে। সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। জেলাপ্রশাসন এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতে দরিদ্র উপজাতিদের ধর্মান্তরিত করে খৃস্টান বানাচ্ছে ১৯৪ গীর্জা । দেশী বিদেশী এনজিও ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে গীর্জাগুলোকে কেন্দ্র করে। খাগড়াছড়ি জেলা ৭৩ টি গীর্জা আছে। সেখানে সক্রিয় এনজিও হচ্ছে : খৃস্টিয়ান ফেমিলি ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশ (সিএফডিবি), বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ ফেলোশীপ, খাগড়াছড়ি জেলা ব্যাপ্টিস্ট চার্জ ফেলোশীপ, খৃস্টান সম্মেলন কেন্দ্র খাগড়াছড়ি, সাধু মোহনের ধর্মপল্লী, বাংলাদেশ ইউনাইটেড খৃস্টান এসোসিয়েশন। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৪০৩১ পরিবার খৃস্ট দর্ম গ্রহণ করেছে। গত আড়াই বছরে আরো অন্তত: ৫০০ পরিবার ধর্মান্তরিত হয়েছে নানা প্রলোভনে।

অন্যদিকে বান্দরবানে  ১১৭টি গীর্জা অনুরুপ ধর্মান্তকরণের কাজ করে চলেছে। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী  ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সংগঠনগুলো সে এলাকায় ৬৪৮০ টি উপজাতি পরিবারকে ধর্মান্তরিত করেছে। রাঙ্গামাটিতে ক্যাথলিক মিশন চার্চ, রাঙ্গামাটি হোমল্যান্ড ব্যাপ্টিসট চার্চ এবং  রাঙ্গামাটি ব্যাপ্টিল্টস চার্চ ১৮৯০ উপজাতি পরিবারকে খৃস্টান বানিয়েছে। খৃস্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি), গ্রাম উন্নয়ন সংগঠন (গ্রাউস), কারিতাস বাংলাদেশ, অ্যাডভান্টিস চার্চ অব বাংলাদেশ, ইভেনজেলিক্যাল খৃস্টান চার্চ (ইসিসি) সেবার আড়ালে কৌশলে পাহাড়ী উপজাতিদের ধমান্তকরণের মাধ্যমে খৃস্টান বানাচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় লোকজন।

হিন্দুবৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি, চাকমা সম্প্রদায়ের বর্ষিয়ান নেতা প্রবীনচন্দ্র চাকমা, মারমা ঐক্য পরিষদ সভাপতি কংচাইরী মাস্টার এবং পার্বত্য নাগরিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ প্রতিষ্ঠাতা প্রকৌশলী আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া এ বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সীমান্তবর্তী ভারতের ত্রিপুরা এবং মিজোরামে ১৯৬০ সাল থেকে খৃস্টীয়করণে তৎপর রয়েছে মিশনগুলো। উপজাতীয়রা প্রলুব্ধ এবং বিভ্রান্ত হয়ে খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করছে। পার্বত্য এলাকার বিস্তৃত অঞ্চল খৃস্টান সংখ্যাগরিষ্ট অঞ্চলে পরিনত হলে পাহাড়ীদের ধর্মীয় পরিচয় হুমকিতে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

Exit mobile version