parbattanews

পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধনে আবারো বিতর্কে পার্বত্যবাসী

নিজস্ব প্রতিনিধি, পার্বত্য নিউজ:
মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও বাঙালি ভিত্তিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের পক্ষ থেকে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভুমি কমিশন আইন বাতিলের দাবি জানায়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাদের দাবি তুলে ধরে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০১৩ সংবিধানের সাথে সাংঘার্ষিক এবং এ আইন কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে এবং পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি হবে। তাই এ আইন বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছে। দাবি না মেনে যদি এ আইন পাশ করা হয় তাহলে পরদিন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে হরতালের মত কঠোর কর্মসুচি দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

নাগরিক পরিষদ সভাপতি আলকাছ আল মামুন প্রেস ব্রিফিংএ যে বক্তব্য পাঠ করেন গণমাধ্যমের কাছে তার থেকে আলাদা বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন। পঠিত বিবৃতিতে ভূমি কমিশনের বাতিল দাবী করলেও একই সাথে ভূমি কমিশনে পার্বত্য সংখ্যার জাতিগত সমানুপাতিকহারে প্রতিনিধি রাখা বাঞ্ছনীয় বলে দাবী করেছেন। এটি তাদের সংশোধনী দাবীর শর্ত। এ বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল দাবীকে বাতিল করা হয়েছে। তাছাড়া ভূমি কমিশনের কাছে যে স্মারক লিপি নাগরিক পরিষদ প্রদান করেছে তার কপিও সাংবাদিকের দেয়া হয়নি। বরং তার কয়েকটি ধারা সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিং এ বলা হয়েছে-

‘ক্রমিক নং ৫: ধারা ৭(খ)
 কমিশনের সদস্য সংখ্যা (০৫) এর মধ্যে চেয়ারম্যান ও বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার পদ দুটি উপজাতি-বাঙ্গালী নির্বিশেষে সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য হলেও অপর তিনজন উপজাতীয় এবং তারা উপজাতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে সর্বদা ঐক্যবদ্ধ বলে প্রতীয়মান। এমতাবস্থায় কমিশনের ভারসাম্য রক্ষায় কমিশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পদ ২টি সর্বদা বাঙ্গালী হওয়ার সুষ্পষ্ট বিধান রাখার পাশাপাশি বর্ণিত কমিশনে পার্বত্য জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে (জাতিগত ভাবে) প্রতিনিধি রাখা বাঞ্চনীয়।’
এটাকে কি বাতিল দাবী করা বলে না সংশোধন দাবী করা বলে সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দেয়া হলো। তবে এই বিভ্রান্তিই পার্বত্য বাঙালীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে।

অপরদিকে একই দিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি  চলতি সংসদ অধিবেশনে ভূমি কমিশন আইন পাশ করার দাবি জানিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয় ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এখনো পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১ এর সংশোধনার্থে আনীত বিলের উপর মতামত প্রদান রহস্যজনকভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে। এজন্য জনসংহতি সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, গত ২৭ মে ২০১৩ তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০১৩’ বিল মন্ত্রীসভায় উত্থাপিত হয়েছে এবং তারই আলোকে গত ৩ জুন ২০১৩ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে উক্ত বিল অনুমোদিত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুন ২০১৩ উক্ত সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে এবং বিধি মোতাবেক মতামত চেয়ে উক্ত বিল ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় গৃহীত ১৩ দফা সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে মাত্র ১০টি সংশোধনী প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাকী ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সংধোশনী প্রস্তাব সম্পূর্ণভাবে বাদ দেয়া হয়েছে এবং অপরদিকে উত্থাপিত ১০টি সংশোধনী প্রস্তাবের মধ্যে ২টি সংশোধনী প্রস্তাব উক্ত বিলে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানান। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন যথাযথভাবে সংশোধনকল্পে উক্ত বিলের উপর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে ১৮ জুন ২০১৩ সরকারের নিকট পাঁচদফা সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করা হয়।

নির্বাচনী অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও এ সরকারের মেয়াদকালে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হয়েছে, সরকারের শেষ মেয়াদে এসে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করা হলে পাহাড়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসবে বলে তারা মনে করে।

Exit mobile version