Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর ২১ বছরে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে নিহত ১০৮৩

শংকর কুমার দে:

পার্বত্য শান্তির চুক্তির পর ২১ বছরে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ১০৮৩ জন। আহত হয়েছেন ১৩৮২ জন। অপহৃত হয়েছেন ৩৫৩৮ জন। পার্বত্য অঞ্চলের আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, অস্ত্রের ঝনঝনাতিতে পরস্পর বিরোধী সংগঠনগুলোর দ্বন্দ্ব সংঘাতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

২০১৮ সালেই তিন পার্বত্য জেলায় ৪৮ জন নিহত হয়েছে, ১৩৭ অপহৃত, বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে শতাধিকেরও বেশি। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে গ্রেফতার হয়েছে ১৬৫ জন। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় দখলদারিত্ব, দখল নিয়ন্ত্রণে রাখা, চাঁদাবাজির পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ, বিশাল সশস্ত্র গ্রুপের কর্মীদের ভরণপোষণের ব্যয়ভার আদায়, প্রতিপক্ষের কর্মসূচিতে বাধা প্রদান-পাল্টা প্রতিরোধ এসবই তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধের কারণ।

গত বছর রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-এর প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ছয় খুনের প্রধান ও অন্যতম আসামি আনন্দ প্রকাশ চাকমাকে র‌্যাবের এক অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য এলাকার সমস্যা সমাধানে আলোচনা শুরু করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তি অনুযায়ী ১৯৯৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে শান্তিবাহিনীর ৭৩৯ সদস্যের প্রথম দলটি সন্তু লারমার নেতৃত্বে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অস্ত্রসমর্পণ করে। পাহাড়ীদের একটি অংশ চুক্তির বিরোধিতা করে প্রসীত খিসার নেতৃত্বে জন্ম নেয় ইউপিডিএফ। চুক্তির কয়েক বছর যেতে না যেতেই চুক্তির পক্ষের জনসংহতি সমিতি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একইভাবে ইউপিডিএফও দুইভাগে বিভক্ত হয়। এরপর থেকে ৪ ভাগের পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে শুরু হয় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘাত যতটা না আদর্শিক কারণে, তার চেয়ে বেশি এলাকার দখলদারিত্ব, দখল নিয়ন্ত্রণে রাখা, চাঁদাবাজির পয়েন্টগুলো নিয়ন্ত্রণ, বিশাল সশস্ত্র গ্রুপের কর্মীদের ভরণপোষণের ব্যয়ভার আদায়, প্রতিপক্ষের কর্মসূচীতে বাধা প্রদান-পাল্টা প্রতিরোধ এসবই তিনটি রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধের কারণ। খাগড়াছড়ির প্রায় পুরো জেলায়ই ইউপিডিএফের শক্ত নিয়ন্ত্রণ। সব উপজেলায়ই বিশাল কর্মী-সমর্থক বাহিনী। তবে দীঘিনালা, মানিকছড়ি, রামগড়, গুইমারা ও লক্ষ্মীছড়িতে মাঝে মাঝেই আক্রমণ চালায় জনসংহতি ক্যাডাররা। এসব উপজেলায় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমও আছে। পুরো জেলায় ইউপিডিএফের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রায় প্রতিটি উপজেলায়ই কমবেশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড আছে জনসংহতির। আবার খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, দীঘিনালা উপজেলায় শক্ত অবস্থানসহ সব উপজেলায়ই জেএসএস (এমএন লারমা)’র কার্যক্রম আছে। বান্দরবান জেলা সদরের বালাঘাটায় ঘাঁটি গেড়ে সদরের কিছু অংশ, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালায় ইউপিডিএফ।

এছাড়া পুরো জেলায় নিয়ন্ত্রণ মোটামুটি জনসংহতি সমিতির হাতেই। এই জেলায় এমএন লারমা গ্রুপের তেমন কোন কার্যক্রম নেই। আর রাঙ্গামাটিতে দুটি পক্ষই সমানে সমান। প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও পাহাড়ীদের চারটি রাজনৈতিক দলই সশস্ত্র কর্মী পোষে। প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী, যারা নিজ নিজ দলের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে সশস্ত্র ক্যাডার ও অস্ত্রের দিক দিয়ে স্পষ্টতই এগিয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি। পাহাড়ের প্রাচীন এই সংগঠনের প্রশিক্ষিত সাবেক গেরিলাদের প্রায় সবাই আর্থিক সক্ষমতা, বিদেশি কানেকশন ও সামাজিক কাঠামোয় শীর্ষে। সশস্ত্র লড়াইয়ে তারাই পাইওনিয়ার। তাদের সশস্ত্র ক্যাডাররা জলপাইরঙের পোশাক ব্যবহার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিভিন্ন সময় আটক হওয়া ক্যাডারদের এই পোশাকেই দেখা গেছে। দুই যুগের গেরিলা লড়াইয়েও তারা এই পোশাক ব্যবহার করতেন।

অস্ত্রের সক্ষমতায় দ্বিতীয় অবস্থানে ইউপিডিএফ। মূলত তরুণ ছাত্র ও যুবকদের এই সংগঠনটি সশস্ত্রভাবে বেশ উন্নত অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ মজুদ থাকা সত্ত্বেও জনসংহতির সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই পেরে উঠে না মূলত অভিজ্ঞতার অভাবে। নানা উপায়ে তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ ঠিকই সংগ্রহ করে নেয়। অস্ত্রের চালান আনতে গিয়ে সম্প্রতি ভারতের মিজোরামে গ্রেফতার হন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতা অংশুমান চাকমা। হাতছাড়া হয় অস্ত্রের চালানটিও। ফলে গত দুই বছরে বিভিন্ন আক্রমণে জনসংহতির হাতে তাদের সুদীর্ঘ চাকমাসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতা-কর্মী নিহত হলেও পাল্টা কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি তারা। তাই সশস্ত্র লড়াইয়ে একেবারেই ইউপিডিএফের মুখাপেক্ষী এই সংগঠনটি।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে পাহাড়ে হামলা-পাল্টা হামলা থাকতে হয়। ইউপিডিএফ হচ্ছে চুক্তিবিরোধী সংগঠন হিসাবে তারা সব সময় পাহাড়কে অশান্ত রাখতে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে পাহাড়ে খুনের ঘটনা বাড়ছে। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমা ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-এর প্রধান তপনজ্যোতি চাকমা বর্মাসহ ছয় খুনের অন্যতম ও প্রধান আসামি আনন্দ প্রকাশ চাকমা গ্রেফতারের পর পাহাড়ের দলাদলি, রক্তারক্তি, খুনোখুনি অনেকাংশেই কমে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের আগারগাঁও স্টাফ কলোনিতে অভিয়ান চালিয়ে রবিবার দুপুরে মেয়ের বাসায় আত্মগোপন করে থাকার খবর পেয়ে আনন্দ প্রকাশ চাকমাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করার পর এই ধরনের তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

 

সূত্র: জনকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন