পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সম্পদ লুট ও যুবতীদের অপহরণ, ধর্ষণ করছে স্থানীয় বাঙালীরা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

প্রাণ ভয়ে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মূল্যবান সামগ্রী লুটপাট চলছ্ইে। সীমান্তের প্রভাবশালী ও দালাল শ্রেণির লোকজন অবাধে এসব করে যাচ্ছে।

উখিয়া সীমান্তের আমতলী তুলাতলী পয়েন্টে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে রয়েছে মূল্যবান স্বর্ণলঙ্কারসহ অন্যান্য সামগ্রী। এছাড়া রয়েছে গবাদি পশুও।

অনুপ্রবেশ পয়েন্টে এক শ্রেণির দালাল অসহায় রোহিঙ্গাদের স্বর্ণ, মুল্যবান জিনিসপত্র ও গরু লুট করে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সুন্দরী যুবতীদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

কক্সবাজারের সংবাদকর্মীরা যারা নিয়মিত সীমান্ত এলাকায় গিয়ে এ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তাদের রিপোর্ট ও ফেসুবক স্ট্যাটাসেও বিষয়টি ফুটে উঠছে।

সাংবাদিক এম আর খোকন ফেসবুক স্ট্যাটাসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘না আর সহ্য হচ্ছে না।ওপারে মুসলমানদের উপর চরম নির্যাতন, বর্বরতা, গুলি, বাড়িঘরে আগুন, প্রাণ বাঁচাতে ছুটে আসার পথে নাফনদীতে ডুবে অসংখ্য নারী-শিশুর মৃত্যু। আর যারা জীবিত এপারে পৌঁছে তাদের স্বর্নালংকার লুটপাট, যুবতীদের শ্লীলতাহানি। এই যেন আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হারমানায়।এ অবস্থায় সোচ্ছার না হয়ে কোন পরিণতিতে গেলে আমাদের মানবাধিকার সংগঠনগুলো কথা বলবে।’

উখিয়ার সংবাদ ও সমাজকর্মী নুর মোহাম্মদ সিকদারের ক্ষোভ এভাবেই‘ মাননীয় জেলা প্রশাসক, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমতুল্লাহ। উখিয়াবাসীর পক্ষ থেকে ঈদুল আযহার আগাম শুভেচ্ছা রইল। আপনি অবগত থাকলে ও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসাবে আবেদনের সাথে অভিযোগ করিতে চাই, পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারেরর আরকানে রক্তের হুলিখেলা থেকে প্রাণ, ইজ্জত বাচাঁতে নারী, শিশু, বৃদ্ধরা দুর্বল চিত্তের যুবকরাও বান্দরবান, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় নিচ্ছে, সরকার নমনীয় হওয়ায়।

কিন্তু অত্যন্ত দু:খ এবং লজ্জার বিষয় আমাদের উখিয়া উপজেলা ঘেষে বর্ডারের বিশেষ করে রেজু আমতলী, ঘুমধুম জলপাইতলী, পালংখালীর রহমতের বিল বালুখালী দিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশের পূর্বে চলছে লুটপাট, ছিনতাই, রাহজানি। যা মুসলিম হিসাবে পরকালে অবশ্যই জবাবদিহীর সম্মুখীন হতে হবে। আপনি এই জবাবদিহীতার বাইরে নয়।

আপনি সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর জেলার একমাত্র কর্তা। গত কদিনে শত শত গরু রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে, লুট করেছে স্বর্নালংকার। সুন্দরীযুবতীদের ধর্ষনের অপচেষ্টায় লিপ্ত অনেকেই। সর্বহারা রোহিঙ্গা আবাল,বৃদ্ধ, বণিতারা ফুফিয়ে কাদঁছে। যা অল্লাহার আরশ কাপঁছে। কারন এরা মজলুম। তাই এদের সবক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

অতএব মহোদয় পবিত্র মাসে পবিত্র হজ্ব দিবসে আপনার কাছে বিনীত আরজ সরকারি দলের অংগ সংগঠনের কতিপয় যুবক, সাবেক, বর্তমান রাজাপালং ইউপির কয়েক মেম্বারকে আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্র, জাতির ভাবমূর্তি ও আইন শৃংখলা পরিস্তিতির উন্নয়নে আপনার পবিত্র কঠোর হস্তক্ষেপ আশা করি।

সাংবাদিক সরওয়ার আলম শাহীনের ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ১২ মহিষ লুট করেছে জালিয়াপালং ইউনিয়নের মেম্বার মোজাম্মেল ও মুছা। ১২ টি মহিষের মধ্যে ২ মেম্বার ৪ টি মহিষ রেখে বাকী ৮ টি মহিষ বিক্রি করে দেয় ডিলার কবির, মৌলভী নুরুন্নবী, মোস্তাক, মোসলেম মিয়া, বদি আলম তৈয়বের নিকট।

বুধবার রাত সাড়ে ১১ টায় উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের লুটকৃত মহিষগুলো জালিয়াপালং ইউনিয়ের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরীর জিম্মায় নিতে নির্দেশ দেন। বিজিবি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদের বলছি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাঁধা দিবেন ঠিক আছে, কিন্ত বাংলাদেশ যারা চলে এসেছে তারা এপারে লুটপাট সহ আরো কয়েক দফা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

পালংখালী ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা শাহাদত হোসেন জুয়েল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মায়ানমারের সামরিক জান্তার আগ্রাসনের স্বীকার মুসলমানদের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহবান সত্ত্বেও পালংখালী আন্জুমান পাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের সাথে নিয়ে আসা তাদের সামান্য সম্বল গরু-মহিষ লুট করে নিচ্ছে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ঘাপটি মারা নরপশু। গতকাল মধ্যরাতেও বেশ কিছু মহিষ লুট করেছে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে।

হাইরে মানুষ! পশুর উপর দিয়ে চালালি তুদের নেতৃত্বের কর্তৃত্ব! নির্যাতিতদের সহযোগিতা না করি…কিন্তু লুট করার অধিকার তো কেও দেয়নি!!! কেমন দল করিস তুরা? মমতাময়ী নেত্রীর আহবানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে? কারা অসহায় মানুষের মানবতা লুট করছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মুখোশ উম্মোচন করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি।

আশ্রয়হীন, নির্যাতিত, অসহায় রোহিঙ্গাদের শেষ সম্বল গরু জোর করে, ভয় দেখিয়ে কেড়ে নেয়ার সংবাদ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে! আরকানে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরুর পর বৈধভাবে এদেশে কোন গবাদি পশু আসেনি।

স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মহল, চিহ্নিত অসৎ জনপ্রতিনিধি এমন অমানবিক ব্যবসায় লিপ্ত! এবারের কোরবানি কেমন হবে? ৩০ আগষ্ট রেজু আমতলী বিওপিতে ১ শত ৫৫ টি গরু নিলামে যায়েজ করা হয়েছে!

অভিযোগ রয়েছে যে গরু গুলো নিলাম করা হয়েছে তা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম। অনেকটা গোপনে নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। ১৫৫ টি গরু মাত্র ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

বিজিবি কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে.কর্নেল মো.আনোয়ারুল আযীম বলেন, এরকম ঘটনা ঘটার কথা না। তুবও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিজিবি কিছু গরু আ্টক করে নিলাম দিয়েছে। সীমান্তে জনবল বাড়ানো হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিজিবি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সম্পদ লুট ও যুবতীদের অপহরণ, ধর্ষণ করছে স্থানীয় বাঙালীরা”

  1. আওয়ামী সরকার এই কাজগুলো করাচ্ছে তাঁদের পোষা দালাল ও সন্ত্রাসীদের দিয়ে,, আওয়ামীলীগের কুলাঙ্গার গুলোর বাসায় সার্চ করলে অপহৃত রোহিঙ্গা নারীদের পাওয়া যাবে।
    অং সান সুচী’র বস আর শেখ হাসিনার বস একই,, তাই তাদের লক্ষ্য ও আদর্শ এক ও অভিন্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন