parbattanews

পানছড়ির ভারসাম্যহীনদের পাশে কয়েকজন উদ্যোগী যুবক

দিনটি ২০২০ সালের ২৬মার্চ। সারাদেশে তখন করোনা মহামারীর সূচনালগ্ন। লকডাউন, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, হোম কোয়ারেন্টিন, মাস্ক, পিপিই এসব শব্দের সাথে পানছড়ির সর্বস্তরের জনগনের তেমন পরিচয় হয়ে উঠেনি। সরকারি নির্দেশনায় জরুরী পণ্যের দোকান ব্যতীত সব কিছুই বন্ধ।

বিনা প্রয়োজনের ঘর থেকে বের হলেও দিতে হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নানান জবাবদিহিতা। তাই কে রাখে কার খবর। খাবার হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পানছড়ি বাজার ও তার আশ-পাশ এলাকার প্রায় ত্রিশের অধিক ভারসাম্যহীন।

অবশেষে “চিহ্ন” নামের সংগঠন এগিয়ে আসে দিনের খাবার নিয়ে। এই মহানুভব সামাজিক সংগঠন “চিহ্ন” গঠনের মূল নায়ক ৩নং পানছড়ি ইউপি ডিজিটাল সেন্টারে পরিচালক মৃহাম্মদ শামিম সিহাব। রাতের খাবার দিচ্ছে উপজেলার ছয় যুবক।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিজেদের আয়োজনে রান্না শেষে প্যাকেট করে পানির বোতল নিয়ে ভারসাম্যহীনদের খুঁজে খাবার তুলে দিচ্ছে খাবার। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও দু’তিন দিনের মধ্যেই ভারসাম্যহীনরাও নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাকিয়ে থাকে কখন আসছে খাবার।

‘চিহ্ন’কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: রাকিবুল ইসলাম। তাদের দিক নির্দেশনা, আন্তরিকতা ও আর্থিক সহযোগিতা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করেছে বলে জানা যায়।

সংগঠনের প্রধান শামিম সিহাব জানান, দায়িত্বরোধ থেকেই গোপনে এই কার্যক্র্রম শুরু করি। মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তার পাশাপাশি প্রথম রমজান থেকে তারা নতুন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে “ ইফতার ইউথ চিহ্ন”। যার লক্ষ্য অসহায় পরিবারের মাঝে খাদ্য ও ইফতার সামগ্রী পৌছে দেয়া। যা চলমান রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের এই কর্মকাণ্ডকে একটি বিরল দৃষ্টান্ত বলে জানান। এদিকে রাতের খাবার রান্না করে পানিসহ প্যাকেট নিয়ে তাদের খুঁজে বেড়ায় পানছড়ির উদীয়মান ৬ যুবক। রাত ৮টা থেকেই মোবাইলের আলোতে বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় তন্ন তন্ন করে তাদের খুঁজে বেড়ায় মামুন আহমেদ, সাব্বির হোসেন, ফারুক তাজ, শুভ দত্ত, শাহাদাৎ হোসেন মিন্টু ও কামরুল ইসলাম।

মামুন আহমেদ জানায়, ঘরে বসে যখন নিজেরা খাবার খেতাম তখন তাদের জন্য প্রাণ কেঁদে উঠত। সেই অনুভূতি থেকেই আমরা ছয়জন মিলে কার্যক্রম শুরু করি। তাদের হাতে রাতের খাবারটুকু পৌঁছে দিতে পেরে নিজেরা খেয়েও আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। অদ্যবধিও চলছে পানছড়ির এই সুন্দরমনের কয়েক স্বেচ্ছাসেবীর দৃষ্টিনন্দন  কার্যক্রম।

Exit mobile version