মাত্র ৪ লাখ ৭৩ হাজার ২৯৯ জন সংখ্যার এক ক্ষুদ্র জাতি (?) দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪ বছরে তারা যে সুযোগ সুবিধা পেয়েছে তা বৃটিশদের ১৮৭ বছরেও তারা তার ছিটেফোঁটাও অর্জন করেনি। যেখানে শিক্ষার হার ছিলো ২% র নীচে সেখানে তা আজ ৮৭%। পুরো বৃটিশ শাসনামলে যেখানে একটি মাএ হাইস্কুল ছিলো সেখানে আজ শত শত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিপূর্ণ। যখন সন্তু লারমা তার ভাই এমএন লারমা ধূতি মাথায় পেঁচিয়ে চেঙ্গীনদী পার হতো সেই পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ হাজার কিলোমিটার পাকা সেতু-সড়ক। যেখানে ১৯৫৪ সালের আগে তাদের কোন ভোটাধিকার ছিলো না, ইউনিয়ন কাউন্সিলের সদস্য পদ ছাড়া আর কোন রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় স্হান ছিলো না সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আজ তারা উপদেষ্টা, মন্ত্রী এমপি রাষ্ট্রদূত জেনারেল। তবু্ও তারা বলবে “ মুই হিচ্ছু ন পেই”!!
বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এরা এখনও রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে নগ্ন পায়ে চলতো, রাজ বাড়িতে মাসে ২ দিন বেগার খাটতো। নিম্ন স্কুল থেকে হাইস্কুলে যেতে দেওয়ান রোয়াজাদের অনুমতি নিত। পাকিস্তান সরকার প্রথম একজন বোমাং রাজা কে মন্ত্রী সভায় স্হান দেয়। রাঙামাটিতে কলেজ সহ শিক্ষার আলো পৌঁছে দেয় যেন তারা আধুনিক জীবনের স্বাদ পায়।
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে এরা দলে দলে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয়। অস্ত্র সংগ্রহ করে রাখে, স্হানে স্হানে মুক্তি যোদ্ধাদের প্রতিহত করে। ৮ই বেংগলের সাথে মহালছড়িতে জিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। এখনো একজন বীরশ্রেষ্ঠ সেখানে সমাহিত আছে।
১৯৪৭ সালে রাজাদের আগ্রহে পাকিস্তানের অংশ হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাকিস্তান সরকার রাজাদের রাজত্ব বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় স্নেহ কুমার চাকমাদের গনতান্ত্রিক পাহাড়ি সমাজ গড়ার স্বপ্ন ভেস্তে যায়। দেশভাগের সময় কে কতটা জমি হাতিয়ে নিতে পারে সেই যুদ্ধে জিন্নাহ কোলকাতা কে পাকিস্তানের ভাগে নিতে ব্যর্থ হন। পান্জাব আসামের বিনিময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলার ভাগে ফেলা হয়। মাউন্ট ব্যাটেন তার একক সিদ্ধান্তে পার্বত্য চট্টগ্রাম কে মূল ভূমি চট্টগ্রামের ‘সংলগ্নতার’ কারনে পাকিস্তানের অংশ করে পাহাড়িদের মন ভেঙে দেন। আর নেহেরু কখনো চাননি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামন্ততান্ত্রিক রাজধারা বজায় থাকুক। পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক অর্থনৈতিক যাতায়াত রাজস্ব আদায় সব কিছু মিলিয়ে একটা প্রাকৃতিক সমাধান যে এটা বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাথেই থাকবে। দ্বিজাতিতত্ত্ব এখানে ভাগাভাগির মূল সূএ ছিলো না। সূএ ছিলো ‘ আদার্স ফ্যাক্টর’! পাহাড়িরা আজতক তা মানতে নারাজ। চট্টগ্রামের বন্দর ছাড়া তারা যে একটা ল্যান্ডলকড কুয়ো এবং আজীবন পাকিস্তানের মুখাপেক্ষী থাকবে সেটা শেষ পর্যন্ত কামিনী মোহন দেওয়ান বুঝতে পেরে আর আক্ষেপ করেননি।
কিন্তু পাহাড়িরা সেই ক্ষোভ এখনো পুষে রেখে ভারত মাতার আঁচলে আশ্রয় নিতে চান। সেই চেষ্টা তারা ১৯৫৬ সাল থেকেই করে আসছে। ১৯৭২ সাল তাদের সেই সুযোগ করে দেয়। মুজিব দেশে ফেরার দু’সপ্তাহের মাথায় তার কাছে আলাদা পার্বত্য ইউনিট জুম্মাল্যান্ডের দাবী তুলে মুজিব কে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে। মুজিব যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পাহাড়ি সমস্যার সঠিকতা বুঝতে পারেননি। তার ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের রাঙামাটি তে দেওয়া ভাষন কে আমলে না নিয়ে ‘ মুজিব নুনু কেটে সব পাহাড়ি কে বাঙালী হয়ে যেতে বলেছেন’ -এই বয়ান পাড়ায় পাড়ায় রটিয়ে পাহাড়িদের বিভ্রান্ত করে লারমা দাদারা। অরক্ষিত দূর্বল প্রশাসনের উপর পুরো ১৯৭১ সাল ধরে প্রস্তুতি নেওয়া শান্তি বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করে শুরু করে জুম্মল্যান্ডের আন্দোলন। ১৯৭৬ সালে জিয়া পাহাড়ি নেতৃত্ব কে ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলেন। কিসের কি? ততদিনে ইন্দিরা থেকে অর্থ অস্ত্র প্রশিক্ষন পেয়ে বলীয়ান শান্তি বাহিনী। তারা ভেবেছিলো ৯ মাসেই পার্বত্য চট্টগ্রামকে ১৯৭১ মডেলে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
আজ ২০২৫ সালে পাহাড়িদের মনে সেই অসমাপ্ত বিপ্লবের শিখা জ্বলে উঠেছে। ড’ ইউনুস সরকার নানান সমস্যায় জর্জরিত, রাজনৈতিক দল গুলো ১৯৭২-৭৩ সালের মত পরস্পরের মুখোমুখি – সেনাবাহিনী সারা দেশে মব সামলাতে ব্যস্ত-দেশের মধ্যে অস্হিরতা – মোদীর আস্কারা ১৯৭৫ সালের ইন্দিরা সরকারের মতো – দেশের ভিতরে -দিল্লিতে পলাতক ফ্যাসীবাদের রানীর আশীর্বাদ – মায়ানমারের আরাকান আর্মির সমর্থন সহযোগিতা আরেকটি ‘জুম্মা ল্যান্ড ২.০ ‘ সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য উপযুক্ত।
দেশের মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় তাদেরকে পূর্ব তিমুরের স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
দেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের চাকরির সুযোগ নষ্ট করতে তেমন শক্ত ভূমিকা নিবে না রাস্তায় তাই চালাও গুলি ইট পাটকেল। পতিত হাসিনার জঙ্গি কার্ডের মত খেলছে ভিকটিম কার্ড। মসজিদে আগুন দিয়ে বাঙালী দোকানে লুটপাট করে নিজেরাই ভিকটিম সেজে প্রথম আলো’ কে ডেকে আনছে। আজ ( ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) প্রথম আলোর সম্মুখ পাতায় সহিংসতার বর্ননায় পাহাড়িরা নির্দোষ। বাঙালীরা বরাবর দাগী আসামি। বাঙালীদের ঘর পুড়েনি মসজিদ ভাঙ্গেনি। সুজন ঘোষ ও জয়ন্তী দেওয়ানের বর্ননায় সেনাবাহিনী দোষী। অথচ এই প্রথম আলোকে জনতার রোষ থেকে বাঁচাতে এর সদর দরজায় বিনিদ্র রজনী পাড় করেছে সেনাবাহিনী।
পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি কে সঠিক বর্ননায় তুলে ধরতে হবে তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত। বাংলার জেন-জি দের জানতে হবে তাদের আন্দোলনের ছাতায় মাথা গুঁজে এরা নতুন এক খন্ডিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। তাদের গ্রাফিতির দেওয়ালে কৌশলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সার্বোভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ “সেনা হটাও”!!
বাংলাদেশের ভূমিতে বাংলাদেশের সেনা না থেকে সেখানে কি মোদীর গেরুয়া বাহিনী বা আারাকান আর্মি থাকবে?
এরকম অবস্থায় দেশবাসীকে সুদূর উওর বঙ্গ থেকে ডাক দিয়ে যাই-’ কোনঠে আছো বাহে জাগো সবাই ‘!!
পার্বত্য চট্টগ্রামে এরা বাঙালী কে দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিকে পরিনত করে ফেলছে। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফে -উওরা থেকে গুলশানে পাহাড়ি চাকমারা জমি কিনে বাড়ি করবে। আর বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া বাঙালী রাজাকারের পুত চাকমা রাজার কাছ থেকে স্হায়ী নাগরিকের সনদ নিবে? এই বৈষম্যের মিনার গুড়িয়ে দিতে হবে। এই মুহূর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া বাঙালী শিশু কে এরা সেটেলার তকমা এঁটে নিজেরা আদিবাসী সেজে বসে আছে। বাসে লন্চ ঘাটে, ডলফিনের কাউন্টারে এদের দেখলেই জিগ্যেস করতে হবে পাহাড় কি তোর বাপ দাদার??
লেখক : পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সামরিক বিশ্লেষক। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫।