পাহাড় ইস্যুতে আর নয় ছাড়, এবার কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সেনাবাহিনী


সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠে ইউপিডিএফ। নীলনকশা অনুযাই নারী ও শিশুদেরকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে, সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তবে এসব অপতৎপরতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্তাব্যক্তিদের নীতিগত অস্পষ্টতা ও প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগে পাহাড়ে নানা অপকর্ম ঘটিয়ে চলেছে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তা বাহিনী। এতে নতুন করে মাথাব্যথা শুরু হয়েছে ইউপিডিএফের। সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্প ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে নারী ও শিশুদেরকে ‘মানবঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর সামনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। তবে এসব অপতৎপরতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে সরকারি খাসজমিতেও অস্থায়ী সেনাক্যাম্প স্থাপনে বাধা দিয়েছে ভারতপন্থী সংগঠনটি। প্রশাসনের হাতে সরকারি গেজেট থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় স্বার্থে নেয়া সেনা পদক্ষেপে নীতিনির্ধারকদের নীরবতা নিরাপত্তা মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বার্মাছড়ি ইউনিয়নের আর্য কল্যাণ বনবিহার এলাকায় অস্থায়ী সেনাক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু ইউপিডিএফ সমর্থিত একাংশ দাবি করে, জায়গাটি বনবিহারের সম্পত্তি। এই অজুহাতে তারা সেনাবাহিনীর কার্যক্রমে বাধা দেয় এবং নারী-শিশুকে সামনে রেখে মানবঢাল তৈরি করে।
কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জানায়, বিতর্কিত জমিটি ১৯৩৪ সালের কলকাতা গেজেট অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় খাসজমি।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ব্রিটিশ আমল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ওই জমির মালিকানা বা দখলের অনুমতি পায়নি। সরকারি নথিতে এটি একান্তভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। কিন্তু ইউপিডিএফ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে বাধা দিচ্ছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, এটি রাষ্ট্রীয় ইস্যু। সরকারি নথি অনুযায়ী জায়গাটি খাসজমি। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। কয়েক দিনের মধ্যেই ফলাফল জানা যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে দায়িত্বরত ২৪ পদাতিক ডিভিশনের একজন সিনিয়র সেনাকর্মকর্তা বলেন, আমাদের হাতে অস্ত্র আছে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। ইউপিডিএফের মতো সংগঠনগুলো মাঠে আধিপত্য বিস্তার করছে। এটা পাহাড়ে শান্তি বিনষ্ট হতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে এর কুফল ভোগ করতে হতে পারে বাংলাদেশকে।
সেনা সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে পার্বত্য এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা নীতিমালা নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। এতে সেনাসদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও হতাশা তৈরি হচ্ছে।
এ দিকে বর্মাছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ-সমর্থিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সঙ্ঘের উদ্যোগে আজ ২৯ অক্টোবর ‘মহাসঙ্ঘদান’ নামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। কিন্তু প্রশাসন বলছে, তাদের কাছে কোনো সরকারি সফরসূচি নেই।
উপদেষ্টার একান্ত সচিব ও ব্যক্তিগত সহকারী দু’জনই জানিয়েছেন, এ সফর সম্পর্কে তাদের দফতরে কোনো তথ্য নেই। ফলে এই আয়োজন ইউপিডিএফের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নতুন কৌশল বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ইউপিডিএফ নেতা প্রসীত বিকাশ খীসা সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করে তুলতে ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্যকল্যাণ বিহারে বড় আকারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করার নির্দেশ দেয়। গোয়েন্দা সূত্রটি আরো জানায়, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের পালি বিভাগের একজন অধ্যাপক এবং খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন নেতা সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড বিতর্কিত করতে বক্তব্য রাখতে পারেন।
অন্য দিকে ‘মানবঢাল’ কৌশল জনসমর্থন হারানোর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, সশস্ত্র গোষ্ঠী যখন নারী-শিশুকে সামনে রেখে সেনাবাহিনীর কাজে বাধা দেয়, সেটি কোনো প্রতিবাদ নয়, বরং রাজনৈতিক দৈন্যদশার নিদর্শন। তবে পাহাড়ের শান্তি ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বড় পরিসরে রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিলম্ব হলে বড় খেসারত দিতে হতে পারে দেশকে।
স্থানীয় সূত্র বলছে, পাহাড়ে সেনা টহল ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাড়লেই ইউপিডিএফ ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের মুখোশ পরে মাঠে নামে। প্রশাসন ও সেনাকে বিব্রত করে তাদের নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখে। বর্তমানে বার্মাছড়ি ও আশপাশের গ্রামগুলোতে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্বিক কর্মকাণ্ডে সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছে সেনাবাহিনী। একের পর এক জনবান্ধব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। গত সোমবার রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার একটি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
পার্বত্য খাগড়াছড়ির গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোনের কমান্ডার লে. কর্নেল তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ২৪ অক্টোবর সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ ইউপিডিএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে মানুষ জড়ো করে মিছিল করেছিল। এরপর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়, যা
















