“পাঁচ বছরে ১৩ হাজার-এর অধিক মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত ”

পাহাড়ের দুর্গম উপজেলাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি

fec-image

পাহাড়ের দুর্গম উপজেলাগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা গুলোতে বিভিন্ন স্থানের লোকজন জ্বরসহ শারীরিক দুর্বলতার জন্য উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে তাদের শরীরে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। এখন উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় পাহাড়বাসী।

চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, বর্ষার কারণে আতঙ্ক বেড়েছে ম্যালেরিয়ার। বিশেষ করে রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি বৃদ্ধি পেলেও তুলনামূলকভাবে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব খুবই কম।  তবে এরই মধ্যে ম্যালেরিয়া রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ৩০১ জনের দেহে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ভুঁইয়াছড়ি, উজেংছড়ি, ক্যজেইছড়ি, মিতিঙ্গাছড়ি, রুইলুই, মাচালংসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নুয়েন খীসা জানান, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত এমন কোনো রোগীর শরীরে মারাত্মক ম্যালেরিয়া (সিভিয়ার) জীবাণু পাওয়া যায়নি। সবাই সাধারণ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। নিয়মিত ঔষুধ সেবনেই তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।

সাজেক এলাকায় এ রোগ দেখা যাওয়ার কারণ হিসেবে ডা. নুয়েন খীসা বলেন, জুমচাষি এবং জঙ্গলে বাঁশ ও কাঠ কেটে জীবিকা নির্বাহকারীরাই এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বর্ষাকালে এ রোগ বহনকারী মশার উপদ্রব বাড়া এবং বিষয়টি নিয়ে অসচেতনতা ও অতিরিক্ত গরমের কারণে রাতে মশারি না টানানোর কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।

রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৪ জন। এর মধ্যে জুরাছড়িতে ৩৫৪ জন, বাঘাইছড়িতে ৩০১ জন, বিলাইছড়িতে ২১২ জন, বরকলে ১০০ জন, কাপ্তাইয়ে ৬৪ জন, রাজস্থলীতে ৪০ জন, লংগদুতে ১২ জন, কাউখালী ৯ জন, রাঙ্গামাটি সদর ও নানিয়ারচর উপজেলায় ২ জনসহ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ হাজার ৯৪ জন। ২০১৮ সালে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ১২৪ জন। ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৩৪ জন, ২০১৬ সালে আক্রান্ত ৪ হাজার ৩৪৪ জন এবং এই বছরে ম্যালেরিয়া রোগে এক জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০১৫ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৯৮২ জন। গত পাঁচ বছরে পাহাড়ে ম্যালেরিয়ার রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার একে বারে কমে গেছে। তবে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ডা. শহীদ তালুকদার বলেন, রাঙ্গামাটি জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি ও জুড়াছড়ি উপজেলা ম্যালেরিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নত করেছে রাঙ্গামাটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ । উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সংশিষ্ট সকলকে কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করে দ্রুত এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ম্যালেরিয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন