পাহাড়ের বনজ সম্পদ উজাড় করে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে পাবর্ত্য চট্রগ্রামের কোটি টাকার কাঠ

=01=
আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
পাহাড়ের বনজ সম্পদ উজাড় করে পার্বত্য অঞ্চল থেকে কাঠ পাচারে চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। খাগড়াছড়ি- চট্রগ্রাম- ঢাকা, কাপ্তাই- চট্রগ্রাম মহাসড়ক ও বিকল্প পথে প্রতি মাসে প্রায় ২৭ কোটি টাকার কাঠ পাচার হচ্ছে। চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেড অবৈধভাবে সরকারী বনাঞ্চলের বন বাগান উজাড় করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ এ ব্যবসা।  

খাগড়াছড়ি চট্রগ্রাম- ঢাকা, কাপ্তাই- চট্রগ্রাম সড়ক দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার ঘনফুট, প্রতিমাসে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ঘনফুট সমান ২৭ কোটি টাকার কাঠ পাচার করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি সার্কেলের কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়ি বন ও শুক্ল পরিক্ষণ ফাঁড়ী ও রাঙ্গুনিয়ার পোমরায় বন ষ্টেশন রয়েছে। রাঙ্গামাটি সার্কেল ও চট্রগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ কাঠ পাচার রোধে নিয়মিত বন টইল বাহিনী দিলেও কিছু কিছু বন কর্মী ও কর্মকর্তা অবৈধ কাজে সহযোগিতা দেয়ায় বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এ কর্মকান্ড চলছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন।  

খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার পরীক্ষণ ফাঁড়ীগুলো দিয়ে অবাধে পাচার হচ্ছে কাঠ। বিকল্প সড়ক পথে ও কাঠ পাচার চলছে প্রতিনয়ত। এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মানিকছড়ি, দীঘিনালা পানছড়ি, মহালছড়ি, লক্ষীছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও খাগড়াছড়ি সদরে পাচারকারী সিন্ডিকেট চক্রের শক্ত অবস্থান থাকার ফলে তাদের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে বেঁচে নিয়েছে বিকল্প সড়কপথসহ এসব উপজেলার বিকল্প সড়কগুলোকে।
খাগড়াছড়ি-চট্রগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ফেনী হয়ে ঢাকায় কাঠ পাচার করা হচ্ছে। অপরদিকে জোত পারমিট দিয়ে বৈধতা দেখিয়ে অবৈধভাবে কাঠ নিলে তাতেও টিপির ছাড়পত্রের চেয়ে অতিরিক্ত কাঠ বোঝায় করে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারী চক্রটি।

এতে করে অতিরিক্ত বোঝাইয়ের কারণে যেমন চট্রগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী সড়কের ব্রীজগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি ফাঁকি দিচ্ছে সরকারীর কর- রাজস্ব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য চট্রগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাইক্ষং বনাঞ্চলের আলী খিয়ং ফারুফা তক্তানালা, উলোচড়ি, চাইন্ধা, গাইন্ধা, ওরাছড়ি, তিনকোনিয়া ধুপশিল, সাক্রাছড়ি কুতুবদিয়া ও হরিন ছড়া সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বন বাগান নিধন করে পরিবহন শ্রমিকের মাধ্যমে পাহাড়ী চোরাই রাস্তা দিয়ে চোরাই আড়তে মজুদ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নানাভাবে বৈধতা দেখিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাঠ। তবে হিসাব নিকাশ আর সাইজ লিস্টে কি আছে তা জানেন শুধু অফিসের বড় বাবু আর কাঠ ব্যবসায়ীরা, কিন্তু গোপনে লেনদেন তা হচ্ছে প্রতিনয়তই। প্রকাশ্যে বৈধতা দেখালেও রাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে পাচার হচ্ছে অবৈধ কাঠ। কখনো ট্রাকে, আবার কখনো চাঁদের গাড়ী, কিম্বা বিকল্প পথে গরু গাড়ীতে কিম্বা নদী পথে চলছে কাঠ পাচার। বিভিন্ন এলাকা থেকে এভাবেই অবৈধ কাঠ সংগ্রহ করে নকল বৈধতা দিতে দেওয়া হয় চিহৃ আর মার্কা।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা জানান, সরকারী সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় করে বাঁধাহীনভাবে কাঠ পাচার হওয়াতে পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। কাঠ পাচার রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন ভূমি উজাড় হয়ে পড়বে। পার্বত্য অঞ্চলের এসকল বনাঞ্চল রক্ষায় স্থায়ী বন বিভাগ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছে পার্বত্যবাসী।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন