parbattanews

পাহাড়ের মুখী কচুর বিদেশ পাড়ি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

মুখী কচু একটি সুস্বাদু সবজি। বাংলাদেশের সর্বত্র কমবেশী এর চাষ করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে সবজি হিসেবে মুখী কচুর কদর রয়েছে। বহুকাল আগ থেকে সবজির চাহিদা মেটাতে এর চাষ হলেও গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপকভাবে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে এ কচুর চাষ।

এ জেলার কয়েক হাজার কৃষক তাদের প্রধান ফসল হিসেবে মুখী কচু চাষ করছেন। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।ফলে স্বাবলম্বী হচ্ছে এ অঞ্চলের কৃষকরা। বর্তমানে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের সর্বত্র এবং বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে মুখী কচু।

খাগড়াছড়ি জেলার সব উপজেলাতেই মুখী কচুর চাষ হলেও সবচেয়ে বেশী চাষ রয়েছে মাটিরাঙ্গা,  গুইমারা,  মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলাতে। সরজমিনে দেখা যায়, ছোট বড় পাহাড়ের ঢালে করা হয়েছে এ কচুর চাষ। যতদুর চোখ যায় দেখা মেলে সবুজ কচু গাছে বিস্তীর্ণ উচু নিচু পাহাড়। এ যেনো তৈরী হয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্য।

কথা হয় মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ির কৃষক ময়নাল হকের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, উচুঁ পাহাড়ের ঢাল এবং সমতলে মুখী কচু চাষ করা হয়। চৈত্র মাসে (মার্চে) পাহাড়ের (যে স্থানে চাষ করা হয়) আগাছা পরিস্কার করে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে চাষ করার জন্য তৈরী করা হয়। বৈশাখের (এপ্রিলের) প্রথম বৃষ্টি হলেই মাটিতে মুখী কচুর বীজ বপন করা হয়। চারা গজানোর পরে আগাছা পরিস্কার, কেল করা (দু’পাশ থেকে মাটি গাছের গুড়িতে দেওয়া) ও প্রয়োজন মতো কয়েকবার সার প্রয়োগ করতে হয়। একর প্রতি আড়াই থেকে তিন টনের মতো ফলন হয়। ভাদ্র (আগস্ট) মাস থেকে মুখী কচু বিক্রি করা শুরু হয়।

বর্ষায় দেশের অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন রকম সবজি কম থাকায় মুখী কচু সবজির চাহিদা পূরণ করে। বাজারে চাহিদা থাকায় দাম পাওয়া যায় ভালো, বিক্রি করা সহজ হওয়ায় লাভ হয় বলে জানান রামগড় উপজেলার নাকাপা কুটিরশিল্প এলাকার কৃষক আব্দুল মান্নান । বেশ কয়েক বছর ধরে মুখী কচুর চাষ করেন বলে জানান, এবারো ১৬ একর জমি চাষ করেছেন তিনি।

ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখানকার মুখী কচু পাঠানো হয় জানান গুইমারার কাচামাল ব্যবসায়ী মো. সেলিম। ঢাকা থেকে ইউরেশিয়া কোম্পানির মাধ্যমে থাইল্যান্ড, কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশে মুখী কচু রপ্তানি করা হয় বলেও জানান। মানিকছড়ির হাতিমুরা, গচ্ছাবিল, রামগড়ের নাকাপা, মাটিরাঙ্গার তবলছড়ি, তাইন্দং এ মুখী কচুর আড়ত রয়েছে । এ সমস্ত আরত থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন কয়েকশ টন করে মুখী কচু কেনেন বলেও জানান তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক তরুন ভট্টাচার্য জানান, এবার জেলায় ৯০১ হেক্টর জমিতে মুখী কচু চাষ হয়েছে । যার উৎপাদন লক্ষমাত্রা ১৭০০০ মে. টন। পোকা ও রোগবালাই তেমন না থাকায় খরচ কম সে কারনেই এ কচুর চাষ করছেন কৃষকরা । তবে উঁচু পাহাড়ে চাষ না করতে কৃষকদের পরামর্শ দেন জেলার এ কর্মকর্তা।

Exit mobile version