পাহাড়ে ঈদের আমেজ: তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলো
এম. সাইফুর রহমান:
ঈদের দিন থেকে টানা কদিনের বৃষ্টির কারণে এবারের ঈদ তেমন একটা আনন্দে না কাটলেও ঈদ পরবর্তী গত ৪দিন ধরে সবুজ পাহাড়ে বইছে ঈদের আমেজ। আনন্দের মোহতে এখন দুলছে পার্বত্যবাসী। তাই সারা বছর কোথাও বেড়াতে যেতে না পারলেও ঈদের আনন্দটা প্রিয়জনদের সাথে উপভোগ করতে সবাই ছুটে আসছে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে। ললনারা বাহারী পোশাকের পাশাপাশি সেজেছিল ভিন্ন সাজে।
মেয়েদের খোপায় ছিল সাজানো ফুল, কারো হাতে ছিল লাল টুকটুকে গোলাপ, কেউবা এসেছিল তার প্রিয় মানুষটিকে সময় দিতে, আবার কেউবা এসেছে একা, উদ্দেশ্য একটাই ঈদ আনন্দ উপভোগ করা। আর এতে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ি’র পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
সবুজ পাহাড়ের ঢেঊ নীল ঝর্ণার বুকে এসে মিশেছে একে একে, সেই মিলন রেখার প্রান্তে অসম্ভব বৈচিত্র্যভরা রিচাং ঝর্ণা। প্রায় কয়েকশ’ ফুট ওপর থেকে সগর্জনে আছড়ে পড়ছে বহু নীচে শ্যাওলা সবুজ কুণ্ডে। তারই মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রং-মানুষের বিশ্রাম, ঝর্ণা দেখার খুশি।
জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন হৃদয় রঞ্জন কার্বারীপাড়ার এক গহীন অরণ্যে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে আবিস্কৃত হয় এই ঝর্ণাটি। জেলা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলে দেখা মিলবে রিচাং ঝর্ণার। কোথাও ন্যাড়া, আবার কোথাও সবুজ চাদর গাঁয়ে জড়ানো। বেলা বাড়লে, দেখতে দেখতে ঝর্ণা ছেড়ে সবাই যায়-ওই ছড়ায়। ওখানে স্বচ্ছ পানিতে ছোট মাছের লোটোপুটি খেলা।
পর্যটকদের কেউ পানিতে পায়ের পাতা ডুবিয়ে দাঁড়ায়, কেউ পানির ছন্দে দেহ মেলায়। কেউ করে ছুটোছুটি। এ ঝর্ণার পানিতে হাত ছোঁয়ালেই যেন পবিত্র হয়ে উঠে আত্মা। সারাদিনের শেষে সন্ধ্যার সময় রিচাং ঝর্ণা আরও বেশি উজ্জ্বল, আরও সুন্দর হয়ে ওঠে।
এছাড়াও সবুজ পাহাড়ে প্রকৃতির সাথে সঙ্গতি রেখে গড়ে তোলা হেরিটেজ পার্ক এখন তরুণ-তরুণীদের নতুন ঠিকানা। শুধু তরুণ-তরুণীই নয়, দূর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সর্পিল প্রবাহ নিয়ে বয়ে যাওয়া চেঙ্গী নদীর পারে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত হেরিটেজ পার্ক এখন অনেকেরই নতুন ঠিকানা।
এখানে বসে নিজেকে উজার করে দিয়ে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি থেকে একখণ্ড সময় কাটায় প্রকৃতি প্রেমিকরা। তাদের হৃদয় ও মন ছুঁয়ে যায় এ স্থানটির নৈসর্গিক রূপ-লাবণ্যে। একের পর এক তিলত্তোমায় ভিন্ন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে খাগড়াছড়ির বহুল আলোচিত হেরিটেজ পার্কটিকে। প্রতিটি পরতে পরতে লেগেছে নান্দনিকতার ছাপ। তাই এক সময়ের অবহেলিত পরিত্যাক্ত এই পাহাড়ে এখন প্রতিনিয়তই বসে পাহাড়ি-বাঙালির মিলন মেলা। পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে প্রাকৃতিক প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে স্থানটি।
নৌসর্গিক শোভা মণ্ডিত শহর খাগড়াছড়ি’র সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া আলুটিলায় রয়েছে স্রষ্টার অপার সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক নিদর্শন রহস্যময় সুরঙ্গগুহা, যা পর্যটকদের আজো কাছে টানে। সত্যিই অবাক করার মত স্রষ্টার এই সৃষ্টি। সমতল এলাকা থেকে এই পাহাড় চুড়ার উচ্চতা প্রায় ২৬০০ফুট।
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রটি খাগড়াছড়িতে সরকারীভাবে নির্মিত একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। এ স্থান থেকে অপার দৃষ্টিতে দেখা যায় নয়নাভিরাম খাগড়াছড়ি শহরকে, এ যেন স্বপ্নের দার্জিলিং। প্রতিদিন প্রচুর ভ্রমণ পিপাসু পর্যটক এ রহস্যময় সুরঙ্গগুহা দেখতে আসে। তবে ঈদের আনন্দে পর্যটকদের আগমন বেডে যায় কয়েকগুন। দিনভর হইছই, বনভোজন আর নাচ-গান আর ফানের আবহে কেটেছে তরুণ-তরুণীদের।
শুধু তাই নয়, জেলা শহরের অদূরে পড়ন্ত বিকেলের সুন্দর্য্য উপভোগের স্থান নিউজিল্যান্ডে ছিল অজস্র মানুষের ঢল। দিনের পড়ন্ত বিকেলে স্থানটিতে সবাইকে আসতে হবে, নতুন করে যেন এমন রীতি চালু ছিল খাগড়াছড়ি শহরে। নিউজিল্যান্ডে কাছাকাছি এসে রিকসা ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেটে আসা অথবা জোড়ায় জোড়ায় বসে আড্ডা দেওয়ার দৃশ্য ছিল সত্যই বিষ্ময়কর।
এছাড়াও আলুটিলা বড়তল, মাটিরাঙ্গার জলপাহাড়, জেলা পরিষদ পার্ক ও ঝুলন্ত ব্রীজে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি সত্যই প্রমাণ করে সবুজ পাহাড়ে বইছে ঈদ আনন্দ।