পাহাড়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বসবাসে নিরাপত্তাহীনতায় বন্য প্রাণীরা: পরিবেশমন্ত্রী

fec-image

দেশে পাহাড়ের ভেতর খাসিয়াসহ বেশ কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাসে বন্য পশুরা নিরাপদ নয় বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

আজ বুধবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘বন্য প্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে আইন প্রয়োগ শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পরামর্শ সভা’য় মো. শাহাব উদ্দিন এসব কথা বলেন। বন অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করে।

পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘পাহাড়েও বন্য পশু নিরাপদ নয়। আমাদের খাসিয়া সম্প্রদায়ের অনেকে পাহাড়ে পান চাষ করে। আরও অনেকে আছে। তারা পাহাড়ের ভেতরে গিয়ে বসবাস করছে, যে কারণে বন্য পশু সেখানেও নিরাপদ নয়। এসব কারণ আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। বনকে সুরক্ষা করতে হবে। তাহলে বন্য প্রাণীকেও আমরা সুরক্ষা দিতে পারব।’

সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সমালোচনা করে এই মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘ গণনা মাঝেমধ্যেই হয়ে থাকে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ রকম একটি অনুষ্ঠানে যাবেন। কিন্তু সেই বাঘ গণনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাইনি। কারণ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনেক উঁচু স্তরে থাকা এক কর্মকর্তা বলেছেন, “বাঘ না থাকলে কী হয়? পৃথিবীর কত দেশেই তো বাঘ নেই, তাতে কী হয়েছে?” এই উঁচু পর্যায়ে গিয়েও যদি কর্মকর্তার মনোভাব এই থাকে, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষ কী চিন্তা করবে।’

বন্য প্রাণী পাচার বন্ধ করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সহযোগিতা চেয়ে উপমন্ত্রী বলেন, একটি বাঘকে হত্যার পর সেটার চামড়া, নখ, দাঁত—এসব বিক্রি করতে না পারলে কেউ বাঘ হত্যা করবে না। পাচারকারী চক্র যত দিন তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, তত দিনই তারা অনুপ্রাণিত হবে এসব অপকর্ম করতে। সুন্দরবনের অনেক প্রাণী এভাবে পাচার হয়ে যায়।

সম্প্রতি শেরপুরে হাতি হত্যার বিষয়ে এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ফসল চাষের জন্য জমিতে বেড়া দেওয়া হয়। খুব সূক্ষ্মভাবে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে ওই বেড়া। এটা এত সূক্ষ্মভাবে করা হয় যে মানুষও তাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যেতে পারে। কিছুদিন আগে একটা হাতি সেখানে মারা গেছে। কতটা নিষ্ঠুর, নির্মম হলে বিদ্যুতের তার লাগিয়ে হাতিটা মেরে ফেলা হয়েছে। ওখানকার বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা কী করেছেন, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সচিব বলেন, ‘পাহাড়ে জুমচাষের জন্য আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। যেখানে বন্য প্রাণী বাস করে, সেখানে পুড়ে চাষ করার তো দরকার নেই। বান্দরবানের একটা কলেজ থেকে প্রস্তাব দিয়েছে, পরিবেশ উন্নয়নের অংশ হিসেবে পাহাড় কেটে তারা সেখানে স্ট্যাচু বানাবে। পাহাড় কেটে তো পরিবেশের উন্নয়ন হতে পারে।’ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাসহ সবার কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকারের নামে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মতো কাজগুলো সমর্থন করবেন না।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন বলেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ আরও পরিষ্কার করতে হবে। আর আইনটাকে বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের আরও বেশি সমাজের কাছে যেতে হবে।’

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, বিশ্বে যে অবৈধ বাণিজ্য হয়, তার মধ্যে তিন নম্বরে আছে বন্য প্রাণী পাচার। এ পাচার দুভাবে হয়। একটি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, অন্যটি আন্তর্জাতিক। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বন্য প্রাণী পাচার হয়। আবার বাংলাদেশ বন্য প্রাণী পাচারের একটি রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যখন রুট হিসেবে ব্যবহার হয়, তখন দেখা যায়, অন্য দেশ থেকে আসা বন্য প্রাণী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে আমাদের পাশের কোনো দেশে চলে যায়।

আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ বন্য প্রাণী বেচাকেনা ঠেকাতে এখনো বাংলাদেশ সফল হতে পারেনি বলেও উল্লেখ করেন প্রধান বন সংরক্ষক। তিনি বলেন, ‘কারণ, আমাদের সীমান্ত ও বন্দরগুলোর অনেক জায়গায় বন্য প্রাণী-বাণিজ্য বন্ধে যতটুকু নজরদারি দরকার, ততটুকু আমরা করতে পারছি না।’

বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের দেশ থেকে বিভিন্ন পথে ভারত, মিয়ানমার, চীনসহ কিছু দেশে বন্য প্রাণী পাচার হয়ে থাকে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আবার কিছু দেশ থেকে বন্য প্রাণী দেশে আমদানি হয়ে থাকে। অবৈধ পথেও কিছু কিছু আসে।’

অবৈধ বন্য প্রাণী-বাণিজ্য বন্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (ডব্লিউসিএস)। অনুষ্ঠানে সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রোগ্রামের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক এলিজাবেথ ফার্নি মনসুর অবৈধ বন্য প্রাণী-বাণিজ্য বন্ধে বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানান।

সূত্র: প্রথম আলো

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন