নিহত ৪, আহত ৩ দাবী স্যোশাল মিডিয়ায়

পাহাড়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ ব্যাপক সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর স্যোশাল মিডিয়াতে

fec-image

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়িতে জেএসএস সন্তু ও ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের মধ্যে শনিবার ভোর থেকে দিনব্যাপী ব্যাপক সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিনব্যাপী ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষই স্বীকার না করলেও ইউপিডিএফ ও জেএসএস নেতৃবৃন্দ পরিচালিত বিভিন্ন ফেসবুক আইডি, পেইজ ও গ্রুপ থেকে সারাদিনই নানা প্রকার পোস্ট করা হয় এবং এতে বন্দুকযুদ্ধ ও হতাহতের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

তবে ইউপিডিএফ মূলের পক্ষে পানছড়ি, দিঘীনালা ও মহালছড়ির বিভিন্নস্থানে মিছিল সমাবেশ করে জেএসএস মূলের প্রতি তাদের উপর হামলা বন্ধের যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাতে এ ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। এদিকে জেএসএস নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ ও আইডি থেকে দিনব্যাপী এ সংঘর্ষে ইউপিডিএফের কয়েকজন সামরিক কমান্ডারসহ মোট ৪জন নিহত ও ৩জন আহত হওয়ার দাবী করা হয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলোতে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার দুর্গম নাড়াইছড়ি ও পানছড়ি উপজেলার খারানসিং পাড়ায় দুই সশস্ত্র পাহাড়ি সংগঠনের মধ্যে শনিবার ভোর থেকে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। শুরুতে এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন মারা গেছে এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন দাবী তোলা হয়েছিল। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করেনি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার সকালের স্যোশাল মিডিয়া পোস্টগুলোতে দাবী করা হয়, শনিবার ভোর রাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিএফ’র আস্তানায় হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় শুরু হয়। গোলাগুলিতে নাড়াইছড়িতে উভয়ের অন্তত ৪জন ও পানছড়ির খারানসিং কার্বারী পাড়ায় ৭ নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা যায়নি।

একটি দায়িত্বশীল সূত্রের দাবী, ২০১৫-১৬ সালের ইউপিডিএফ (প্রসীত) ও জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের সমঝোতা চুক্তি হয়। সমঝোতা চুক্তির শর্ত ছিল একে অপরের সাংগঠনিক এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত ধরে জেএসএস(সন্তু) দলের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফ (প্রসীত) দলের সাংগঠনিক এলাকায় অবস্থান করে আসছে। এ নিয়ে দু’দলের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রেষারেষি ছিল। সন্তু দলের সদস্যদের পার্বত্য চট্টগ্রামের উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার দাবী জানিয়ে সাধারণ জনগণকে দিয়ে বহুবার মিছিল-সমাবেশ করিয়েছিল ইউপিডিএফ (প্রসীত)। ফলশ্রুতিতে বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়।

সর্বশেষ চলতি মাসের ৯ জুন ইউপিডিএফ(প্রসীত) লেখক. গবেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের কাছে চুক্তি আকারে তাদের ৬৬পৃষ্ঠার ৮৭টি দাবীনামা পেশ করেন। দাবীনামায় বেশীরভাগ চুক্তির সংশোধন বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরকারী সন্তু লারমাদের সাথে আলোচনা ব্যতীত উক্ত দাবীনামা পেশ করার ফলে দুই পক্ষের উত্তেজনা দেখা দেয়। এ নিয়ে গতকাল (১০জুন ২০২২) তাদের দু’দলের মধ্যেকার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু কোন সুরাহা ব্যতীত উক্ত বৈঠক সমাপ্ত হয়। ফলশ্রুতিতে আজ শনিবার(১১ জুন) ভোর রাতে সন্তু লারমার আন্তানাগুলোতে হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সমঝোতার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কাছাকাছি অবস্থান করায় জেএসএসের পক্ষে সহজেই ইউপিডিএফের আস্তানাগুলোকে টার্গেটে পরিণত করা সহজ হয়।

এদিকে পানছড়ি থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, গোলাগুলির ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিধায় বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। অপর দিকে দীঘিনালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পেয়ার আহম্মদকে এধাধিক বার ফোন দিলে ফোন না ধরায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সূত্রটি জানায়, (৯ জুন) বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে এ দাবি হস্তান্তর করা হয়।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন। এ সময় ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা ও মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম সদস্য মঞ্জুলাল দেওয়ানও উপস্থিত ছিলেন।

উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেন, গত শতকের ‘৭০,৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’

ইউপিডিএফের সংগঠক সুমেন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্রদেব চাকমা, পানছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিতা ত্রিপুরা, ৪ নং লতিবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও হেডম্যান ভূমিধর রোয়াজা, ৩ নং পানছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা, ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা, ১ নং লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমাসহ ইউপি মেম্বার, স্থানীয় শিক্ষকসহ গণ্যামন্য ব্যক্তিবর্গ ছিলেন বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউপিডিএফ মিডিয়া শাখার প্রধান নিরণ জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, জেএসএস, বন্দুকযুদ্ধ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন