পাহাড়ে প্রাণের উৎসবে মেতেছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা

Bandarban Fanos pic-7.10.2013
নিজস্ব প্রতিবেদক:

প্রতীমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতনী ধর্মলম্বীদের শারদীয় উৎসবের ইতি টানলেও মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা চলাকালে মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা পালিত হলো।

আতশবাজি, রং-বেরংয়ের বর্ণিল ফানুসের ঝলকানি আর মহারথ টানার মধ্য দিয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনে মেতে উঠেছে সব বয়সীর নারী পুরুষরা।

ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় এ উৎসবের মূল আয়োজন চলবে ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার থেকে (৯অক্টোবর) বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তিন পার্বত্য জেলার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মার্মারা ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে নামে প্রবারণা পূর্ণিমা পালন করে থাকে। গত ১অক্টোবর বান্দরবানে হ্যান্ডবল টুর্ণামেন্ট প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ের অনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে পাহাড়ের বর্ণিল ফানুসে ঢেকে পড়ে আকাশ, অন্যদিকে মন্দিরে মন্দিরে জ্বালানো হয় হাজারো বাতি। এ উৎসবে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া, মার্মা নাটক মঞ্চায়ন, মন্দিরে ছোয়াইং, অর্থদান, বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়ে থকে।

বুধবার ছোয়াইং দান (ভাত-তরকারি প্রদান) প্রার্থনা এবং বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহরের পুরাতন রাজবাড়ির মাঠ থেকে ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়ে: লাগাইমে.. ’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যায়..) মার্মারা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে মাহারথ যাত্রা শুরু করবে। এ সময় পাংখো নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা রাস্তায় নেমে আসবে। রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি এবং দান করা হবে নগদ অর্থ। একইদিন মধ্যরাতে সাঙ্গু নদীতে রথ উৎসর্গ করা হবে। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকে আকাশে উড়ানো হবে শত শত রং বে-রং এর ফানুস।

প্রবারনা উৎসবের প্রধান অতিথি থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বীর বাহাদুর এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, বোমাং রাজা প্রকৌশলী উ চ প্রু, জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম,পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন উৎসব কমিটির সভাপতি অং চ মং মার্মা।

বুধবার সকাল থেকে শহরের বৌদ্ধ মন্দির বা বিহারগুলোতে প্রার্থনা এবং ছোয়াইং দানের জন্য পূণ্যার্থীদের ভিড় জমাবে। রাতে মার্মা অধ্যাষিত পাড়ায় পাড়ায় তৈরি করা হবে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।

ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উদযাপন কমিটির সভাপতি অং চ মং মার্মা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ওয়াগ্যোয়াই পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যেগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এসময় উল্লেখযোগ্যহারে দেশী বিদেশী পর্যটকদের দেখা যায়।

প্রসঙ্গতঃ বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বৌদ্ধ গভীর ধ্যান সাধনের পর সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য চুল কেটে আকাশে উড়ান। তারই ধারাবাহিকতায় বৌদ্ধধর্মালম্বীরা আকাশে ফানুষ উড়িয়ে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন