parbattanews

পাহাড়ে বিলুপ্তির পথে ছোট্ট পাখি ‘বাবুই’

Babui Pakhi (Khagrachari)

দিদারুল আলম রাফি :

“বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।” কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ‘স্বাধীনতার সুখ’ ছড়াটি ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া শিশুদের কাছে অপরিচিত লাগলেও বাংলা মাধ্যমের ৩য় শ্রেণির বাংলা বইয়ের পাঠ্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত গ্রাম বাংলার এই নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি’র মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি ও তাইন্দং, গুইমারা থানাধীন চাইন্দামনি ও কালাপানি, মানিকছড়ি উপজেলার যোগ্যাছলা, দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া, বরাদম, এবং রামগড় উপজেলার সোনাইপুল এলাকায় তাল, খেঁজুর ও নারিকেল গাছে এক সময় বাবুই পাখি প্রচুর বাসা বেঁধে বসবাস করত। ফুঁটিয়ে তুলত শৈল্পিক নিদর্শন। বাবুই পাখির কিচির মিচির শব্দ আর তাদের শৈল্পিক বাসা মানুষকে পুলকিত করত।

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করতো বাবুই পাখিরা। সে বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখি শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। বর্তমানে এ এলাকা থেকে ঐ জাতীয় গাছ হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে গেছে বাবুই পাখিও।

একটা সময় পার্বত্যাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর তালগাছ ও খেঁজুর গাছে ব্যাপক বাবুই পাখির বাসা চোখে পড়ত। এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পরেনা। পাহাড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে ছোট্ট সেই বাবুই পাখিটি। বাবুই পাখির এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক যোগাত এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করত।

গাছে ঝুরির মত চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎ জুড়ে। এ জন্য অনেকেই একে তাঁতি পাখিও বলে থাকেন। সারা বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭। তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখি বসবাস করে।

ছোট্ট এই বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় তাদের ঘর আলোকিত করার জন্য জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে ঘরে রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়। প্রজনন সময় ছাড়া অন্য সময় পুরুষ ও স্ত্রী পাখির গায়ে কালো কালো দাগসহ পিঠ হয় তামাটে বর্ণের। তবে প্রজনন ঋতুতে পুরুষ পাখির রং হয় গাঢ় বাদামী। বাবুই পাখি সাধারণত তালগাছ ও খেঁজুর গাছেই বাসা বাঁধে। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।

বর্তমানে পাহাড়ি জনপদে ধানসহ পাহাড়ে জুমের ফসল ও অন্যান্য ক্ষেতে ব্যাপকভাবে কীটনাশক ব্যবহার, বরই ও লিচু গাছে কারেন্ট জালের ব্যবহার ও সর্বোপরি পাখি শিকারিদের বেপরোয়া আচরণে পার্বত্যাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি।

Exit mobile version