parbattanews

পাহাড় আর হ্রদের শহর রাঙামাটি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

রাঙামাটিকে বলা হয় বৈচিত্র্যের শহর। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে কাপ্তাই হ্রদ মিলে মিশে একাকার, যা রাঙামাটিকে আলাদা সৌন্দর্য দান করেছে। এ জেলায় রয়েছে বহু জাতিস্বত্তার বসবাস। তাই শহরের একগুঁয়েমী থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে এ শীতের ভরা মৌসুমে প্রাকৃতিক অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ঘুরতে আসুন রাঙামাটিতে। আর রাঙামাটিতে ঘুরতে এলে একদিকে যেমন সুউচ্চ পাহাড়, অন্যদিকে দেখতে পাবেন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠা পানির কাপ্তাই হ্রদ। এছাড়া উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকদের জন্য গড়ে উঠা বিভিন্ন পর্যটন স্পট।

ঝুলন্ত সেতু

পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের উদ্যোগে রাঙামাটিতে ১৯৮৫ সালে গড়ে উঠেছে ঝুলন্ত সেতু। এ ঝুলন্ত সেতুটিকে ‘সিম্বল অব রাঙামাটি’ বলা হয়। এ সেতুটিকে ঘিরে দেশ এবং দেশের বাইরে আলাদা পরিচিতি পেয়েছে রাঙামাটি। তাই দেরি না করে একবারের জন্য হলেও দেখে যেতে পারেন ঝুলন্ত সেতুটি। এ সেতুটিকে ঘিরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গড়ে তুলেছে মোটেল, কটেজ। তাই ঘুরতে এলে থাকার জন্য কোন ভয় নেই। নিজেদের সাধ্যনুযায়ী রুম বুকিং নিতে পারেন।

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি যাদুঘর

২০০০ সালের দিকে তৎকালীন সরকার রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী এলাকায় গড়ে তুলেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি যাদুঘর। তিনতলা ভবনের এ যাদুঘরে ঢুকলে আর বের হতে ইচ্ছে করবে না। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করবে বৈচিত্র্যের মাঝে।

যাদুঘরে প্রবেশের আগে আপনার নাম কর্তৃপক্ষের কাছে এন্ট্রি করে ঢুকতে হবে। যাদুঘরটি ঘুরে দেখতে পারলেও আপনি চাইলে ছবি তুলতে পারবেন না। ছবি তোলার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। যাদুঘরটির বাইরের সৌন্দর্যও আপনাকে আলাদাভাবে পুলকিত করবে।

রাঙামাটি মিনি চিড়িয়াখানা

রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি এলাকায় প্রকৃতির অপরূপ পরিবেশে জেলা পরিষদের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে মিনি চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় বানর, ভাল্লুক, অজগর, সজারু, হরিণ বনমোরগ রয়েছে। রাঙামাটিতে এলে একবারের জন্য হলেও ঘুরে যান এ চিড়িয়াখানায়।

বনভান্তের বৌদ্ধ মন্দির

রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি এলাকায় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের তীর্থ স্থান বনভান্তের বৌদ্ধ মন্দিরটিও ঘুরে দেখতে পারেন। বিশাল আকৃতির মূর্তি, প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে আলাদা প্রশান্তি প্রদান করবে। তাই মন ভালো করতে চাইলে এ মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন। তবে সাবধান এ মন্দিরে ভুলেও ছবি তুলবেন না।

রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়ক

রাঙামাটি-কাপ্তাই যোগাযোগের জন্য রাঙামাটি শহরের আসামবস্তি-রাঙাপানি সড়ক দিয়ে একটি বিকল্প সড়ক গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এ সড়কটি পর্যটকবান্ধব সড়কে পরিণত হয়েছে। সড়কের আশপাশে বিশাল পাহাড় এবং কাপ্তাই হ্রদ মিলে মিশে একাকার হওয়ায় মনোরম পরিবেশ গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন শতশত পর্যটক ভিড় জমায় এ সড়কে। আর পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে স্থানীয়রা গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন হোটেল।

তাই ঘুরতে এলে ভুঁড়ি ভোজনের কাজটা নির্ধিদ্বায় সেরে ফেলতে পারবেন। তবে সাবধান সন্ধ্যা নামার আগেই এ সড়ক থেকে চলে যাওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ প্রতিদিন সন্ধ্যা নামলে এ সড়ক দিয়ে বন্য হাতির দল চলাচল করে। এ সড়কে অনেকে বন্য হাতির আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

সুবলং ঝর্ণা

রাঙামাটির বরকল উপজেলার সুবলং ইউনিয়নে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে ঝর্ণা। আর এ ঝর্ণাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকা অত্যন্ত আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাকৃতিক এ ঝর্ণা দেখতে হলে আপনাকে ১৫ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে ঢুকতে হবে।

এ ঝর্ণাটি দেখতে হলে আপনাকে রাঙামাটি শহরের পর্যটন এলাকা থেকে ভাড়ায় ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে যেতে হবে। আর এ সুযোগে উপভোগ করে নিতে পারেন স্বচ্ছ জল রাশির কাপ্তাই হ্রদ। এছাড়া ভুঁড়ি ভোজনের জন্য কাপ্তাই হ্রদ এলাকায় গড়ে উঠেছে পেদা টিং টিং, চাংপাই রেস্তোরা এবং টুকটুক ইকো ভিলেজ। এ হোটেলগুলোতে খাবারের দাম একটু বেশি হলেও প্রাকৃতিক পরিবেশে তরতাজা খাবার পরিবেশন করা হয়। তাই রসনা বিলাস না এড়াতে চাইলে প্রাকৃতিক পরিবেশে ভুড়িঁ ভোজন সারতে পারেন এ হোটেলগুলিতে।

পুলিশ পলওয়েল পার্ক

রাঙামাটি শহরের রিজার্ভমুখের জিরো কিলোমিটার এলাকায় পুলিশের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে পুলিশ পলওয়েল পার্ক। শহরের মধ্যে প্রাকৃতিক পরিবেশে মন ভালো করার জন্য বিকেলে এ পার্কে ঘুরতে চলে আসতে পারেন। এ পার্কে প্রবেশ ফি নেয়া হচ্ছে ১০ টাকা করে।

বাংলার দার্জিলিং সাজেক

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে সাজেকভ্যালিতে গড়ে তোলা হয়েছে বিশ্বমানের পর্যটন অবকাঠামো। ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন পাহাড়বেষ্টিত বিশাল উঁচুভূমির ওই সাজেকভ্যালির অবস্থান বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে।

উপজেলা সদর থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। রোদ আর মেঘের চমৎকার খেলা চলে সারাক্ষণ, সাজেক পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের এ অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য সেনাবাহিনীর উদ্যোগে গড়ে উঠেছে চমৎকার অবকাঠামো রুইলুই রিসোর্ট। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক রিসোর্ট। সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও, সেখানে যেতে হবে খাগড়াছড়ি হয়ে।

কীভাবে আসবেন

ঢাকার কমলাপুর, ফকিরাপুল, টিটি পাড়া, কলাবাগান এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে গেলে রাঙামাটিগামী বাস পেয়ে যাবেন। আর নিজেদের পছন্দের বাসে নির্দিষ্ট ভাড়া মিটিয়ে চলে আসতে পারবেন পাহাড়-হ্রদের বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ শহর রাঙামাটিতে।

রাঙামাটি শহরে রাত্রী যাপন

পর্যটকদের রাত্রী যাপনের জন্য রাঙামাটিতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন হোটেল-মোটেল। উল্লেখযোগ্য মোটলের মধ্যে রয়েছে হোটেল মোটেল জর্জ (০১৫৫৮৪৮০৭০১), হোটেল ইন্টারন্যাশনাল সুফিয়া (০১৫৫৩৪০৯১৪৯), পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স (০৩৫১-৬৩১২৬), হোটেল আল মোবা (০১৮১১৯১১১৫৮), হোটেল মাউন্টেন ভিউ (০১৫৫৩৪৪০৩২৪), গ্রীন ক্যাসেল (০১৭২৬-৫১১৫৩২); এছাড়াও আছে হোটেল নীডস, প্রিন্স হোটেল, হোটেল ড্রিমল্যান্ড, হোটেল শাপলাসহ আরও অনেক হোটেল। এসব হোটেলে সাধ্যানুযায়ী রাত্রী যাপনের কাজটা শেষ করতে পারেন।

 

সূত্র: পাক্ষিক পার্বত্যনিউজ, বর্ষ ১, সংখ্যা ২ ও ৩।

Exit mobile version