পাহাড় উত্তপ্ত করতে অস্ত্র সংগ্রহ করছে জেএসএস

fec-image

অন্যমিডিয়া

নিউজ ডেস্ক:
পার্বত্য চট্টগ্রাম নতুন করে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। এ লক্ষ্যে অস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে তিনি নিজ দলকে শক্তিশালী করার চেষ্টাও করছেন। দলে নিজের অবস্থান শক্ত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক উপজাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকেও ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছেন। আর এর মাধ্যমে তিনি সরকারকে চাপ দিতে অসহযোগ আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন। এতে করে ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ের পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করে বিদেশী শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের অপচেষ্টা করছেন।

উল্লিখিত বিষয়সহ চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে। তিন পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৪ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাতে এ কথাও বলা হয়- সরকারের দেয়া নিরাপত্তা প্রত্যাহার হলে সন্তু লারমা বিরোধী আঞ্চলিক সংগঠনসমূহের আক্রমণের শিকার হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে এবং তা মোকাবেলার জন্য সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতিও রয়েছে। পাহাড়ে অধিকাংশ এলাকা দুর্গম হওয়ায় আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনী সঠিক সময়ে যেতে পারে না। ফলে রাষ্ট্রবিরোধী অপশক্তি মাঝেমধ্যেই নাশকতার চেষ্টা চালায়। ইতোমধ্যে পাহাড়ের প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকশ কিলোমিটার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। আমরা মনে করি এসব রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ ধরনের আন্দোলন ও হুমকি কোনো কাজে আসবে না। তাছাড়া আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও এ ব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়- পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেএসএস (মূলদল)-এর সভাপতি সন্তু লারমা ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে ১ মে থেকে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের হুমকি প্রদান করেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার এ কর্মসূচি ঘোষণার নেপথ্যে ৬টি কারণ থাকতে পারে। সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৫ দফা সুপারিশ করা হয় ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

জেএসএসকে সশস্ত্রভাবে শক্তিশালী করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি নতুন সহজতর পথে অস্ত্র চোরাচালানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সন্তু লারমা দলের জন্য সহজে অস্ত্র সংগ্রহের লক্ষ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর দৃষ্টি ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের হুমকি প্রদান করতে পারেন। পাশাপাশি এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে নিজ দলের প্রভাব বিস্তারসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় তারা। এতে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন প্রশ্নে সরকারকে হেয়প্রতিপন্ন করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দলে নিজের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে এ ধরনের হুমকি দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে বলা হয়- জেএসএস গঠনের পর থেকে তেমন যোগ্য কোনো নেতা তৈরি হয়নি। সম্প্রতি উষাতন তালুকদার দলীয় সমর্থনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ আশংকা থেকে সন্তু লারমা তার নিরঙ্কুশ নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসেবে এ হুমকি দিয়ে থাকতে পারেন। এছাড়া তার আশংকা মূল জেএসএসকে প্রতিহত করতে জেএসএস (সংস্কারপন্থী) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ)সহ অন্য কোনো আঞ্চলিক দলকে রাজনৈতিক গুরুত্ব ও আনুকূল্য প্রদান করতে পারে সরকার। এ ধরনের বিশ্বাসে শংকিত হয়ে সন্তু লারমা ওই দল দুটির ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য এ অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচিতে যাওয়ার হুমকি প্রদান করতে পারেন।

শান্তিবাহিনীর ন্যায় উপজাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তিশালী সশস্ত্র দল গঠনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের বিরুদ্ধে তারিখ নির্দিষ্ট করে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে অন্য সব আঞ্চলিক উপজাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে একই প্লাটফর্মে এনে পুনরায় পার্বত্যাঞ্চলে শান্তিবাহিনীর ন্যায় একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের প্রচেষ্টা হতে পারে। শান্তিচুক্তি শর্তানুযায়ী অধিকাংশ সরকারি দফতর পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহের ওপর ন্যস্ত করা হলেও সরকারের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর দফতর এখনও ন্যস্ত করা হয়নি। এসব দফতর হস্তান্তর ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন দ্রুত সংসদে পাস করার জন্য সরকারকে চাপ দিতেও এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

আন্দোলনের হুমকি দিয়ে সন্তু লারমা নিজের স্বার্থ হাসিল করতে চান উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়- ২০১২ সালের মার্চে এক মাসের মধ্যে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হলে ১ মে থেকে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় তিনি সরকারের কাছে কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় করে পূর্বঘোষিত আন্দোলন এড়ানোর জন্য ১৯ মার্চ ব্যক্তিগত চিকিৎসার কথা বলে ভারতে চলে যান। এবারও এ ধরনের মানসিকতা কাজ করছে বলে অনুমিত হয়। বিদেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়- ইউএনডিপি, স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশসমূহ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে জেএসএসের আগের সুসম্পর্ক বর্তমানে ম্রিয়মাণ। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপজাতিদের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য কোনো আকর্ষণীয় ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শক্তিধর বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে।

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইউপিডিএফ কর্তৃক পানছড়ি ও মানিকছড়িতে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এ কারণে ত্রিপুরা সম্প্রদায় চাকমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এ মনোভাবকে কাজে লাগাতেও জেএসএস এ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারে।

প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে বৃহস্পতিবার সন্তু লারমার বাড়ি ও অফিসের টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বরুন চাকমা জানান, ওনি (সন্তু লারমা) এ মুহূর্তে কোনো গণমাধ্যমে কথা বলবেন না। অসহযোগ আন্দোলন চলছে দাবি করে বরুন চাকমা বলেন, অসহযোগ আন্দোলন মানে তো রাস্তাঘাট, দোকানপাট বন্ধ নয়। অফিস-আদালত চলছে, পাশাপাশি কর্মসূচিও চলছে।

এ প্রসঙ্গে রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, পার্বত্য এলাকায় কোনো ধরনের অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি চলছে বলে আমার জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার কথা বলা হচ্ছে। সেই আলোচনার আশায় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে বলে আমরা জানি।

-যুগান্তরের সৌজন্যে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন