parbattanews

পাহাড় ধসে চার জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪৬

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রামে ও কক্সবাজারে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১৪৬ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে ২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১০১ জন, বান্দরবানে ৯ জন এবং চট্টগ্রামে ৩৬ জন মারা গেছেন।  বুধবার সকালে রাঙামাটিতে নতুন করে আরো তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।  মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ এখনও মাটির নিচে অনেকে চাপা পড়ে আছেন।

সোমবার (১২ জুন) মধ্যরাতে থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত পর্যন্ত প্রাণহানির এ ঘটনা ঘটেছে।  এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এদিকে, বুধবার সকাল থেকেই বান্দরবান ও রাঙামাটিতে ফের উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।  রাতের অন্ধকারে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় পাহাড় ধসের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থগিত করা হয়। পার্বত্যনিউজের জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হলো।

রাঙামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ১০১ জন নিহত হয়েছেন।  জেলার জেলা প্রশাসক মানজুরুল মান্নান মঙ্গলবার রাতে জানান, রাঙামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ৫৩ জন, কাপ্তাইয়ে ১৮ জন ও কাউখালীতে ২৩ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন ও জুড়াইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন।

চট্টগ্রামে ৩৬ জন নিহত

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধস ও ঢলে নিহত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর রাঙ্গুনিয়ায় ৫৮০টি পরিবার, চন্দনাইশে ৫০ পরিবারকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও এর আশপাশ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, আজ বুধবার সকালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রাঙামাটি যাওয়ার পথে রাজানগর রানীরহাট এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ভারি বর্ষণের ফলে  রাঙ্গুনিয়ায় পাহাড় ধসে ২৭ জন, চন্দনাইশে পাহাড় ধসে চারজন, রাউজানে পাহাড়ি ঢলে দুজন, বাঁশখালীতে টর্নেডোয় ঘরের দেয়ালধসে একজন, ফটিকছড়িতে একজন, চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর হালিশহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের দেয়ালধসে একজনসহ মোট ৩৬ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে, রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরে নিহত একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ ১৪ জনের জানাজা গতকাল মঙ্গলবার রাতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, চন্দনাইশে দুজন, উত্তর হালিশহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে দেয়ালধসে পাঁচজন, বাঁশখালীতে দুজনসহ নয়জন আহত  হয়েছেন এবং রাঙ্গুনিয়ায় নিখোঁজ রয়েছেন চারজন।

পাহাড় ধস শুরু হওয়ার পর মহানগর এবং উপজেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকা ও পাহাড়সংলগ্ন বসতিগুলো থেকে প্রায় ৫০০ পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, পাহাড়, দেয়াল ধসে নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং ৩০ কেজি চাল করে চাল দেওয়া হয়েছে। আহতদের পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া রাঙ্গুনিয়া ও রাউজান উপজেলার জন্য ১০ টন করে চাল, চন্দনাইশ উপজেলায় পাঁচ, লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া উপজেলার জন্য তিন টন করে চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত দুটি টিম চট্টগ্রাম মহানগরীর মতিঝর্ণা, একে খান ও বায়েজিদ এলাকাসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে দেড় শতাধিক পরিবারকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

Exit mobile version