parbattanews

পাহাড় ধ্বসে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি আঞ্চলিক সড়ক তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ: নৌপথে ভাড়া নৈরাজ্য, পচছে কৃষি পণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি/ খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে যেন যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক জনপদে পরিণত হয়েছে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি আঞ্চলিক সড়ক। কোথাও কোথাও সড়ক তলিয়ে গিয়ে পাহাড়ি ছড়া, আবার কোথাও সড়কের ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে টিলায় পরিণত আবার কোথাও পুরো সড়কই প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে দুই জেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে।

সড়কের পথ বিধ্বস্ত তাই বিকল্প হিসেবে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি- রাঙামাটির নৌ রুট চালু হলেও যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো রমরমা বাণিজ্য করছে নৌ পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পিছিয়ে নেই থ্রি হুইলার ও ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরাও। নৌ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় হতাশ যাত্রীরা।

সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় আম-কাঁঠাল ও আনারসসহ কৃষিজ পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। তবে এক সপ্তাহের মধ্যে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি আঞ্চলিক সড়কে হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত ১৩ জুন প্রবল বর্ষণ ও ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে তিন পার্বত্য জেলার ১৩০জন নিহত হয়। আহত প্রায় শতাধিক, গৃহহীন দুই হাজারও বেশি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে এক সপ্তাহের মধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়কটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী করতে সক্ষম হলেও প্রায় তিন সপ্তাহ সময় পার হলেও খাগড়াছড়ি রাঙামাটি আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি আঞ্চলিক সড়কের কোথাও কোথাও সড়ক তলিয়ে গিয়ে পাহাড়ি ছড়া, কোথাও সড়কের ওপর পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে টিলায় পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও নেই সড়কের কোন অস্তিত্ব। অথচ মাত্র ক’দিন আগেও এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, সিএনজি ও মোটরসাইকেলসহ শত শত যানবাহন চলাচল করতো। কিন্তু সর্বনাশা প্রাকৃতিক দুর্যোগ সব কিছু স্তব্ধ করে দিয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছে দুই জেলার হাজারো মানুষ।

এদিকে বিকল্প হিসেবে প্রায় ২৫ বছর আগের খাগড়াছড়ির মহালছড়ি রাঙামাটির নৌ রুট চালু হলেও যাত্রীদের জিম্মি করে রীতিমতো রমরমা বাণিজ্য করছে নৌ পরিবহন ব্যবসায়ীরা। পিছিয়ে নেই থ্রি হুইলার ও ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরাও। নৌ পরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ না থাকায় হতাশ যাত্রীরা।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থেকে রাঙামাটি সড়ক পথে বাসে সময় লাগতো মাত্র সোয়া এক ঘন্টা। ভাড়া ছিল ৭০ টাকা। এখন ইঞ্জিন চালিত নৌকায় রাঙামাটি যেতে সময় লাগছে তিন থেকে সোয়া তিন ঘন্টা। আর ভাড়া আদায় করছে মাথা পিছু ২শত টাকা করে। নৌপথে যাতায়াত সময় সাপেক্ষের পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নৌকাগুলোতে লাইফ জ্যাকেট সাপোর্ট নেই। এতে করে যে কোন সময় দূর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে। তার উপর অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।

মকবুল হোসেন নামে আরেক যাত্রী জানান, বাস যেতে খরচ হতো ৭০ টাকা সময় লাগত ১ ঘন্টা। আর এখন নৌকায় সময় লাগে ৩ ঘন্টা আর খরচ হয় ২০০ টাকা। সব দিক থেকে ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত সড়ক যোগাযোগ চালু করা না হলে জনগণ আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুদর্শন চাকমা নামে আরেক যাত্রী জানান, আগে যখন বেশ কিছু নৌকা ছিলো তখন যাতায়াত করতে পারতাম। এখন মহালছড়ি থেকে মাত্র দুইটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলাচল করায় অফিস করতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় রাঙামাটিতে অবস্থান করতে হচ্ছে অনেককে।

মংরে মার্মা নামে এক শিক্ষক জানান, নৌপথে যাতায়াত সময় সাপেক্ষের পাশাপাশি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নৌকা গুলোতে লাইফ জ্যাকেট সাপোর্ট নেই। এতে করে যে কোন সময় দূর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে।

রাঙামাটির মনতুলা পাড়া কেসিং এলাকার বাসিন্দা বিজয় চাকমা জানান, দীর্ঘ ২০ দিন অতিবাহিত হলেও রাঙামাটি সদরের কতুকছড়ি এলাকার ভাঙ্গা অংশ মেরামতে সড়ক বিভাগ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কতুকছড়ি ছড়ি কেসিং সহ আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার খুব অসুবিধায় রয়েছে।

বীর বালা ত্রিপুরা জানান, আগে সিএনজিতে করে খাগড়াছড়ি থেকে রাঙামাটি যেতে খরচ হতো ২০০ টাকা এখন জনপ্রতি খরচ হয় ৫-৬ শত টাকা। তার মধ্যে ৪ কিমি. পথ হাটতে হচ্ছে।

ইঞ্জিন নৌকার চালক রিপন চাকমা জানান, সাময়িক লাইন হওয়ায় ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রী কম হলেও তাদের নৌকা চালাতে হয়।

কতুকছড়ি এলাকার চাষী উদয় শংকর চাকমা জানান, হাট বাজারে কৃষিজ পণ্য ও ফলমূল আনা হলেও ক্রেতা না থাকায় পণ্য নষ্ট হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বাইরের ক্রেতারা আসতে পারছে না।

খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কটি চালু করতে সেনাবাহিনী ও সড়ক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হালকা যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এমদাদ হোসেন জানান, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম কিলোমিটার এলাকার প্রায় ৭০ মিটার সড়ক তলিয়ে গেছে। ৬ষ্ঠ কিলোমিটার এলাকার গর্ত ভরাট করতে আরো ৩ দিন সময় লাগবে। এরপর ৭ম ও ৮ম কিলোমিটারের গর্ত ভরাট ও সড়কের ওপর জমে থাকা মাটি সরিয়ে ১০-১৫ দিনের মধ্যে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কে হালকা যান চলাচল শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভুক্তভোগিরা যত দ্রত সম্ভব খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

Exit mobile version