parbattanews

পিতা-পুত্রের ৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার সম্পদ ক্রোকের যুগান্তকারী আদেশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের স্পেশাল জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ পিতা, ২ পুত্র সহ তিনজন ইয়াবা ব্যবসায়ীর মানিলন্ডারিং করে অবৈধ ভাবে অর্জিত ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৭ টাকার সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন। কক্সবাজারের স্পেশাল এবং জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ গত ৫ মার্চ এ যুগান্তকারী আদেশ দেন।

যেসব ইয়াবাবাজের সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দেয়া হয়েছে তারা হলো-টেকনাফ উপজেলার নাজির পাড়ার এজাহার মিয়ার ২ পুত্র নুরুল হক ভূট্টো ও নুর মোহাম্মদ এবং তাদের পিতা নজু মিয়ার পুত্র এজাহার মিয়া। তারা তিন জনই পিতা পুত্র। বিষয়টি কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম আব্বাসউদ্দিন নিশ্চিত করেছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে প্রকাশ, টেকনাফ মডেল থানার ২৯ আগস্ট ২০১৭ সালের ৭৪ নম্বর মামলার এজাহারের ১ নম্বর আসামি নুরুল হক ভূট্টো, ২ নম্বর আসামি নুর মোহাম্মদ ও  ১০ নম্বর আসামি পলাতক এজাহার মিয়া ২০১০-২০১১ সাল হতে ২০১৭-২০১৮ সাল পর্যন্ত মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব সম্পদের মধ্যে দালানকোঠা, ভূসম্পত্তি রয়েছে। যার মূল্য ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬৭ টাকা।

এসব অবৈধ সম্পদ ক্রোক করে রাষ্ট্রের হেফাজতে নিয়ে আসার জন্য ক্রোকের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের অর্গানাইজড ক্রাইম (ইকোনোমিক ক্রাইম স্কোয়াড) এর বিশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দিন আল আযাদ কক্সবাজারের স্পেশাল জজ এবং জেলা ও দায়রা জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজের আদালতে গত ২৭ জানুয়ারি ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ১৪(১) ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার ক্রিমিনাল পারমিশন মিস মামলা নম্বর হচ্ছ-৫৭৭/২০১৯ ইংরাজি।

মামলার ফৌজদারি আবেদনে মাদক ব্যবসা ও ইয়াবা বিক্রয় করে অর্জিত এসব অবৈধ সম্পদ ক্রোক করা না হলে, এসব অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের আর্থিক করতে পারে। তাই এসব অবৈধ সম্পদ ক্রোকের অনুমতি দিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেয়ার জন্য মামলার আবেদনে প্রার্থনা করা হয়। মামলা দায়েরের পর আদালত সম্পদের তফশিল, বিস্তারিত বিবরণ সহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন আল আযাদকে নির্দেশ দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা গত ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পদের স্থির চিত্র, সম্পদের রেজিস্ট্রাড দলিল, সহিমুহুরী অবিকল কপি, খতিয়ান, অবস্থান, চৌহদ্দি, তফশিল, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র, মামলার সমর্থনে প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট, তথ্য, উপাত্ত সহ বিস্তারিত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

গত ৫ মার্চ মামলাটি স্পেশাল জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজের আদালতে চুড়ান্ত শুনানী করা হয়। শুনানী শেষে আদালত তফশীলে বর্ণিত অবৈধ স্থাবর অস্থাবর সম্পদ অন্যত্র বিক্রি, হস্তান্তর ও বেহাত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মন্ঞ্জুর করে টেকনাফ মডেল থানার ৭৪/২০১৭ নম্বর মূল মামলা নিষ্পত্তি নাহওয়া পর্যন্ত ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ১৪(১) ধারায় তফশিলে বর্ণিত সমুদয় সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।

স্পেশাল জজ খোন্দকার হাসান মো. ফিরোজ একই আইনের ১৪(৩), উপবিধি (১) অনুযায়ী উক্ত অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তির সরকারি গেজেট প্রকাশের লক্ষে একটি বহুল প্রচারিত বাংলা জাতীয় দৈনিক ও একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচারের আদেশ প্রচার করেন। আদেশের কপি তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র বিশেষ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ও কক্সবাজারের জেলা রেজিস্টারের নিকট কপি প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দ আলম বলেন-নিঃসন্দহে রায়টি যুগান্তকারী ও এরায় ইয়াবাবাজদের নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। নূন্যতম সময়ের মধ্যে হওয়া এ রায় ইয়াবাবাজ সহ মাদককারবারিদের মাদক ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ অর্জনে নিরুৎসাহিত করবে। এডভোকেট মোহাম্মদ ছৈয়দ আলম বলেন-তিন দশকের আইনপেশায় আমার জানামতে, মাদককারবারীদের অর্জিত অবৈধ সম্পদ ক্রোকের এই ধরণের আদেশ সর্বপ্রথম দেয়া হলো।

কক্সবাজারে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম বলেন-সরকারের “মাদকের বিরুদ্ধ জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বনে ইয়াবাবাজদের সকল সম্পদ তদন্ত করে পুলিশের সিআইডি’র ইকনোমিক ক্রাইম স্কোয়াড, এনবিআর, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এজন্য তাদের নিকট পত্র পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন- রায় হওয়া মামলাটি দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হলো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি’র স্পেশাল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দিন আল আজাদ মুঠোফোনে সিবিএন-কে শোকরিয়া জ্ঞাপন করে বলেন, অত্যন্ত শ্রম, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সাথে তদন্ত ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক কাজ করেছি। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এরায় মাদক প্রতিরোধ অভিযানে নিয়োজিত সকল পুলিশ সদস্যকে প্রেরনা ও প্রত্যয়ে সমৃদ্ধ করবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, এই রায় ইয়াবাবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে আরও গতিশীল করবে। দ্রুত সম্পদশালী হওয়ার জন্য ইয়াবা কারবারের দিকে ঝুঁকে পড়া ইয়াবাবাজদের সংখ্যা কমে আসবে।

Exit mobile version