পুলিশের ধরাছোয়ার বাহিরে পেকুয়ায় গভীর পাহাড়ি অরণ্যে অস্ত্রধারীদের আস্তানা

bonduk-judd

এ.এম.জুবাইদ,পেকুয়া:
পেকুয়ার টইটং এ প্রভাবশালী একটি সশস্ত্র ডাকাত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে গভীর পাহাড়ি এলাকায় গোপন আস্তানা করে ডাকাতি, চুরি, চাঁদাবাজি, সামাজিক বনায়নের জায়গা জবর দখল করে বৃক্ষ নিধনসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, উপজেলার টইটং ইউনিয়নের রমিজপাড়া সংগ্রামের জুম এলাকায় স্থানীয় টুনুমিয়ার ছেলে আলোচিত ভন্ড বৈদ্য শফিকের নেতৃত্বে মুজিব, হাবিবুর রহমান, আজিজ, মিজান ও ডাকাত মানিক সহ উপজেলার চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে একটি স্বশস্ত্র ডাকাত সিন্ডিকেট গঠন করে সামাজিক বনায়নের জায়গা জবর দখল, পাহাড়ি লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, সাধারণ লোকজনের গরু লুট, মাদক ব্যবসার বিস্তার করে প্রকাশ্য অস্ত্রের মহড়া চালিয়ে ডাকাতি ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে স্থানীয় লোকজনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো বলেন, ওই সিন্ডিকেট জোসনা আক্তার বালি নামক একটি খারাপ যুবতীর মাধ্যমে কৌশলে উঠতি বয়সের মেয়েদের নিয়ে জিম্মি করে বিভিন্ন অপরাধী লোকজনকে নিয়ে মাদক সেবন করতে আসা লোকদের আনন্দ ফুর্তির আয়োজন করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। স্থানীয় লোকজন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যান এমনকি পেকুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও তারা সাড়া না দিয়ে তাদের অপরাধ কর্ম বীরদর্পে চালিয়ে গেলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনি প্রদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, এ সিন্ডিকেট মৃত ফয়জ আহমেদের স্ত্রী আয়েশা বেগমের ৬ কানি জায়গা, আবদুল আজিজের ২ কানি, লতিফা বেগমের ৬ কানি, মো. হানিফের ২ কানি জায়গা সম্প্রতি অস্ত্রধারী বাহিনী দিয়ে জবর দখল করে নিয়েছে। এব্যাপারে টইটং ইউনিয়ন পরিষদ ও পেকুয়া থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করলেও তাদের ডাকে প্রশাসন সাড়া দেয়না। স্থানীয় লোকজন বলেন, বিগত ৩/৪ মাসে ওই সিন্ডিকেট স্থানীয় রমিজ পাড়ার নুরুল আলমের ১টি গাভী, তমিজ উদ্দিনের ছেলে নজির আহমেদের ১০টি গরু, আবদুল জব্বারের ছেলে ইলিয়াসের ৭টি, মৃত জাফর আলমের ছেলে অসিউর রহমানের ৩টি, সাবেক মেম্বার নুরুচ্চাপার ৩টি, বাচা মিয়ার ছেলে জামালের ২টি, নেজাম উদ্দিনের ১টি, দেলোয়ারের ৩টি গাভী ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের বাগান নষ্ট করেছে এমন অহেতুক অভিযোগ তুলে দুইহাজার টাকা করে আদায় করেছে যারা টাকা দিতে অস্বীকার করেছে তাদেরকে প্রকাশ্য আগ্নিয়াস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা আদায় করেছে বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

সম্প্রতি মগনামা ঘাট ও পেকুয়া চৌমুহনী এলাকা থেকে অনেক লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে শফিক বৈদ্যে আস্তানায় আটকে রেখে টাকা আদায় করে ছেড়ে দিয়েছে বলে চাওর হলেও ওই সিন্ডিকেটটি শক্তিধর হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করতে সাহস পায়না। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় বনবিভাগের ও সামাজিক বনায়নের ভূমি জবর দখল করে গড়ে তোলা আস্তানায় ২০০৮ সালের ২০ আগষ্ট টইটং বনকানন বাজারের একটি ডাকাতির ঘটনার সুত্র ধরে পুলিশ শফিক বৈদ্যের গোপন আস্তানার আবিস্কার করে। সে সময় উন্মোচিত হয় বৈদ্যালির অন্তারালে একটি সুড়ঙ্গ করে শফিক বৈদ্য যে ভন্ডামী করতো তার বিবরণ। সে সময় পেকুয়া থানা পুলিশ তার ওই সুড়ঙ্গ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ডাকাতি হওয়া মালামাল ভুয়া বৈদ্যালী জিন হাজিরার সরঞ্জাম উদ্ধার করে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তখন থেকে তার কাছে আর লোকজন আর আগের মতো চিকিৎসা নিতে আসেনা।

দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এলাকায় আবার ফিরে এসে দাপটের সাথে আবারো সিন্ডিকেট করে ডাকাতি চাদাবাজি বনদস্যূতা মাদক ব্যবসা চালাতে থাকে। সম্প্রতি ৫ শ সদস্যের বন রক্ষা কমিটি গঠন করার কথা বলে প্রতি সদস্যকে এক একর জমি বনবিভাগ থেকে রেজিষ্ট্রি নিয়ে দেয়ার কথা বলে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা চাদা ধার্য্য করে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কাউকে এক তিল জায়গা দেয়নি। ভোক্তভোগীরা টাকা বা জায়গা চাইতে গেলে উলটো তাদের ধমকিয়ে মেরে ফেলার ভয় দেখায় বলে কথিত বনরক্ষা কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন। এব্যাপারে বন রক্ষা কমিটি সদস্য ওই শফিক বৈদ্য ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা যে মিটিং করেছে তার ভিডিও ফুটেজ ও অডিও ফুটেজ এবং প্রকাশ্য অস্ত্রবাজির ভিডিও ফুটেজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দায়ের করতে প্রস্তুতি নিলে ওই সিন্ডিকেট অবৈধ মেয়েদের দিয়ে ও তাদেরকে নারী নির্যাতন মামলায় জড়ানো হুমকি দিচ্ছে বলেও বন রক্ষা কমিটির অনেক সদস্য অভিযোগ করেন।

টইটং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিনের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, বন রক্ষা কমিটির ঘটনা তিনি শুনেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় তারা অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি উপজেলার চিহ্নিত ডাকাতদের আনাগোনা ওই আস্তানায় চোখে পড়ার মতো বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে। বনভূমি ও সামাজিক বনায়নের জায়গা জবর দখল করে বসতভিটা ছাড়া করার অভিযোগে পেকুয়া থানায় থানায় দায়ের করা আয়েশা বেগমের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মঈন উদ্দিন আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে নাই আমি তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন