পেকুয়ার রাজাখালীতে অবৈধ অগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি: আইজির নির্দেশ উপেক্ষিত

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া:
অবৈধ অগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানিতে এক আতংকিত জনপদের নাম হচ্ছে কক্সবাজার জেলার পেকুযা উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়ন। এখন প্রায় প্রতি রাতেই গুলির বিকট শব্দ শুনা যায় পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে। বিশেষ করে এ ইউনিয়নের বামূল পাড়া, চড়ি পাড়া, সুন্দরী পাড়া, বদিউদ্দিন পাড়া, সবুজ বাজার, আমিন বাজার সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ইদানিং ভয়ানকভাবে প্রকাশ্যে অগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন, সড়ক ডাকাতি, লুটপাট, ছিনতাই বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।

গত ১ মাসে সড়কে ব্যারিকেট দিয়ে ডাকাতি, দুপক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ, লুটপাট ও ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনকভাবে পুলিশ একটি বারের জন্যও ঘটনাস্থলে যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। রাজাখালীতে ধারাবাহিক ক্রাইমের প্রেক্ষিতে স্থানীয় লোকজন সম্প্রতি আইজির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করলে তিনি কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু উর্ধ্বতন এ কর্মকর্তার নির্দেশ স্বত্ত্বেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে সাংবাদিকদের জানান অভিযোগকারী বকশিয়াঘোনা এলাকার আহমদ কবীর।

তার অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, স্থানীয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বাবুলের প্রত্যক্ষ মদদে শেফায়েত উল্লাহ মনু, মহিবুল্লা, মনছুর, খোরশেদ, কালা মিয়া সহ ১৫/২০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র “চাষী ভাইরা চালাকী করলে তোদের কপালে দু:খ আছে” শিরোনামে একটি উড়োচিঠি দিয়ে প্রতি লবণ চাষীকে ২ হাজার টাকা করে চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। যারা এ টাকা প্রদান করেনি তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন, গুলি, হামলা, মামলা। লুট করা হয় লবণ মাঠের পলিথিন, গরা সহ যাবতীয় সরঞ্জাম।

এমনকি চাষীরা জমিতে চাষ করতে গেলে তাদেরকে দিন দুপুরে গুলি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয় তাতে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্দ্যোগে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে “ইউপি ফরম নং-১০” শিরোনামে ট্যাক্স, রেট ও বিবিধ প্রাপ্তী রশিদ ছাপিয়ে ‘বিবিধ’ নামে প্রতি লবণ বোট থেকে ৬শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন জানান, গত ৫ মার্চ বামুলা পাড়ায় ডবল ব্রীজের পাশে সড়কে ব্যরিকেট দিয়ে ডাকাতির সময় ডাকাতদল ও গ্রামবাসীর মধ্যে অন্তত ৩০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়েছে। ঘটনার দিন রাত ৯টার দিকে বাড়ী যাওয়ার সময় বামুলা পাড়ার ডবল ব্রীজের পাশে সশস্ত্র ডাকাতের কবলে পড়ে উপজেলার রাজাখালীর সুন্দরী পাড়ার মৃত তাজর মুল্লুকের ছেলে নুরুল হোছাইন। এসময় ডাকাতরা তার সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

পরে নুরুল হোছাইন এলাকায় গিয়ে জানালে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোকতার, আকতার ও যুবলীগ নেতা টিপু ও বি.এন.পি নেতা রুহুল আমিন, জুবাইর কোম্পানী, স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলীর নেতৃত্বে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে ডাকাতদের প্রতিহত করতে চাইলে ডাকাতদল আনুমানিক ২৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে গ্রামবাসীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। গ্রামবাসীরাও তাদের লাইসেন্সধারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ৪/৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে ডাকাতদের গুলির জবাব দেয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

সুন্দরী পাড়ার বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, বামুলা পাড়ার ডাকাত নুরুচ্ছফার ছেলে আনছার, বাচ্চু, গোলাম শরীফের ছেলে আরিফ, বজল আহমদের ছেলে হাছিম আলী সহ সশস্ত্র ডাকাতদল প্রকাশ্যে প্রায়সময় পথচারীদের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়গুলো পুলিশকে সাথে সাথে জানানো হলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। একই অভিযোগ করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াজেদ আলী ও মহিলা মেম্বার সাজেদা বেগম।

এছাড়াও সবুজ বাজার এলাকায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল গ্র“পের সাথে স্থানীয় বিএনপির একটি গ্র“পের সাথে প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুকযুদ্ধে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ সহ গুরুতর আহত হলে এঘটনায়ও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এছাড়াও বামূলা পাড়া এলাকায় এরশাদ আলী ওয়াকপ এষ্টেটের জমি নিয়ে চেয়ারম্যান বাহিনী ও ছৈয়দনূর বাহিনীর মধ্যে কয়েকদফা গুলাগুলির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এছাড়াও মাস দুয়েক আগে সবুজ বাজারের ৪ টি দোকানে হানা দিয়ে ডাকাতদল কয়েকলক্ষ টাকার মালামাল ও নগদ অর্থ লুট করে নিয়ে গেলেও এ ঘটনাকে ডাকাতি বলেও স্বীকার করতে চায়নি পুলিশ।

এয়ারআলী খান উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র চয়ন, একই স্কুলের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা জানান, প্রতি রাতেই গুলির শব্দ শুনছি আমরা। আতংকে আমাদের পড়ালেখারও মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। রাত নামলেই আমরা ভয়ের মধ্যে থাকি এবং ভীতি নিয়ে রাত কাটাই। সুন্দরী পাড়া এলাকার মাষ্টার রমিজ আহমদ জানান, রাজাখালীর অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িটি প্রত্যাহার করার পর থেকেই রাজাখালীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হচ্ছে। তিনি বলেন, এলাকার অবস্থা এতই খারাপ যে, কোন মানুষই নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারছেন না। রাত নামলেই গুলি আর ডাকাতের ভয়ে রাত কাটাতে হয় আমাদেরকে।

স্থানীয়রা জানান, পেকুয়া থানা পুলিশের নীরব ভূমিকা ও পুলিশ ফাঁড়ি প্রত্যাহারের কারণে রাজাখালীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতি দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। শীঘ্রই এ অবস্থার উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়া না হলে বড় ধরনের কোন ঘটনা যেকোন সময় ঘটে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে পেকুয়ার থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নীলু কান্তি বড়–য়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পুলিশ ফাঁড়িটি প্রতিস্থাপনের জন্য উপরে লেখালেখী করা হয়েছে। যেখানেই কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে থানা পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন