parbattanews

পেকুয়ায় অপচিকিৎসায় এক গৃহবধূর মৃত্যু, আদালতে মামলা

পেকুয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের পেকুয়ায় অপচিকিৎসায় এক গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের এমডি ও ডাক্তারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (২৩ এপ্রিল) অপচিকিৎসার শিকার আয়েশা বেগমের স্বামী ফজল করিম বাদী হয়ে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরান জাদিদ মুকুট ও হাসপাতালের ডাক্তার রুবেল সাদাত চৌধুরীকে বিবাদী করে চকরিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আদালত মামলা আমলে নিয়ে পেকুয়া থানার ওসিকে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল সাত মাসের অন্ত:স্বত্তা আয়েশা বেগমের (২৮) হঠাৎ প্রসব বেদনা শুরু হলে তার স্বামী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাকে পেকুয়া কবির আহমদ চৌধুরী বাজারস্থ পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

সেখানে ডাক্তার রুবেল সাদাত চৌধুরী তার স্ত্রীর ভূল চিকিৎসা করে জরায়ুর মুখ ও প্রসাবের নাশিকা কেটে ফেলেন।

পরে তার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখান থেকে চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর গত ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ২ ঘটিকার দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান গৃহবধূ। সে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের হাজী পাড়া গ্রামের দিনমজুর ফজল করিমের স্ত্রী।

আয়েশা বেগমের স্বামী ফজল করিম জানান, ‘আমার স্ত্রী সাত মাসের অন্ত:স্বত্তা হওয়ায় শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ১৪ এপ্রিল পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালের চিকিৎসক রুবেল সাদাত চৌধূরী পরীক্ষা নিরীক্ষা করানোর পর বলেন, গর্ভের ভিতর বাচ্চার সমস্যা হয়েছে ডিএনসি করে বের করতে হবে।

ভর্তির সময় বলা হয়েছিল মহিলা ডাক্তার দিয়ে ডিএনসি করাবেন। কিন্তু ডিএনসি করান ডাক্তার রুবেল সাদাত চৌধুরী নিজেই। ডিএনসি করানোর ১ঘন্টা পর থেকে আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক রুবেল সাদাত চৌধুরী। আসার সময় জেনারেল হাসপাতাল থেকে ডিএনসি করানোর ফাইলটি না দেওয়ায় অনেক কষ্টে পড়তে হয়।

গত ১৭ এপ্রিল দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হ্সাপাতালে ভর্তি করি। এদিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পর চিকিৎসক বলেন, স্ত্রীর জরায়ুর মুখাবয় ও প্রসবের নাশিকা কেটে যাওয়ায় ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতিদিন ৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। তার স্ত্রী গত রাত ২টার দিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

এ বিষয়ে তিনি পেকুয়া থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে যান। কিন্তু পেকুয়া থানা পুলিশ তার অভিযোগটি গ্রহণ না করে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আদালতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জানতে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক রুবেল সাদাত চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন‘ প্রতিদিন কত রোগী যে তিনি দেখেন; তার সঠিক হিসাব তার কাছে নাই। এ বিষয়ে জানার জন্য তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগোযাগ করতে পরামর্শ দেন।

পরে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরান জাদিদ মুকুট বলেন ‘রোগীর কোন আত্মীয় স্বজন আমাদের বিষয়টি জানায়নি। তবে সংবাদ মাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয় পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালের অপচিকিৎসার কারণে আয়েশার মৃত্যু হয়েছে এবং আদালতেও হত্যা মামলা করানো হয়েছে।

এটা একটা সাজনো নাটক। আমাদের প্রতিপক্ষ হয়ে পেকুয়া মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আতিকুর রহমান যড়ষন্ত্রমূলক ভাবে করেছে । তিনি পেকুয়াতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে আধিপাত্য বিস্তার করার জন্য এ কৌশল নিয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে তাতে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।

এদিকে ডাক্তারের ভূল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া আয়েশা বেগমের ৬ বছর বয়সী লাকী আক্তার ও ৪ বছর বয়সী আশেক উল্লাহ নামের দুই শিশু সন্তান রয়েছে। গত ২০ এপ্রিল চমেক হাসপাতাল থেকে লাশ যখন বাড়ি পৌঁছে তখন দুই অবুঝ শিশু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

এদিকে উক্ত ঘটনাকে ধামা চাপা দিতে বুধবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতাল মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সে চিকিৎসায় মারা যায়নি বলে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনেছেন এবং খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।

Exit mobile version