পেকুয়ায় অবশেষে ইউএনওর হস্তক্ষেপে রাজাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন

pic pekua 26-5-2014

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া:
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তিন বছর পর ইউএনওর হস্তক্ষেপে পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৬ মে সকাল ১১ টায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কার্যালয়ে ইউপির ৮ জন সদস্য উপস্থিত হয়।

এসময় সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ পদে ৭ নং ওয়ার্ডের এমইউপি নুরুল আবছার এবং প্যানেল চেয়ারম্যান-২ পদে ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য মো: আব্বাছ উদ্দিন, প্যানেল চেয়ারম্যান -৩ পদে ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য ছাদেকা বেগম নির্বাচিত হয়। পরে ইউপি সদস্যরা বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সিকদার বাবুলের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেনের কাছে লিখিত ভাবে অনাস্থা পত্র জমা দেয় এবং সচিব স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিচালক স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম, জেলা প্রশাসক কক্সবাজার, উপ পরিচালক স্থানীয় সরকার কক্সবাজারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অনুলিপি প্রদান করেন।

এদিকে রাজাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করায় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান এলাকাবাসী। তথ্য নিয়ে জানা গেছে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল এর অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তে এসে ইউনিয়ন পরিষদে কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে গেছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত টিম। এদিকে চেয়ারম্যানের এসব অনিয়ম দুর্নীতি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় বরাদ্দ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত টীমের সদস্যরা। এ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় রাজাখালী ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত হচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠে। 

জানাযায়, এলজিএসপির প্রকল্পের টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাৎ, সরকারী বিভিন্ন বরাদ্দে অনিয়ম দুর্নীতি, ৩ বছরেও প্যানেল চেয়ারম্যান নির্ধারণ না করা, উপজেলার সমন্বয় সভায় ধারাবাহিক অনুপুস্থিতি, বছরের পর বছর ইউনিয়ন পরিষদের কোন বৈঠক না করা, সরকারী নলকূপ প্রদানের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা নেয়া, স্থানীয়দের ট্যাক্সের টাকার কোন হিসাব না দেয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান বাবুলের বিরুদ্ধে। ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন কার্যক্রম ভিজিট করতে আসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খানের নেতৃত্বে একটি তদন্ত টিম।

তদন্ত টীমের সদস্যদের কে স্থানীয় ইউপি সদস্যদরা জানান দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তাছাড়া এল জি এসপির অধীনে দেয়া ৬ টি প্রকল্পের ৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৯২ টাকা সম্পূর্ণ আত্মসাত করে চেয়ারম্যান বাবুল। এ যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদে দেয়া টি আর, কাবিখা, কাবিটা, ওয়ান পারসন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর টাকা ভূঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে ইউপি সদস্যদর বঞ্চিত করে নিজেই আত্মসাত করে রাজাখালীর ওই বিতর্কিত চেয়ারম্যান। শুধু তাই নয়, স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে সরকারী যে ট্যাক্সের টাকা আদায় করা হয় তারও কোন হিসাব নেই পরিষদে।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মহসিন জানান তদন্ত টীম পরিষদের ওয়ান পারসন, এলজিএসপির ক্যাশ বই, রেজোলেশন খাতা, নোটিশ বই, পরিদর্শন রেজিষ্টার সহ যাবতীয় কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে গেছেন। তদন্ত টিম উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন করে পরিষদ সচল করার জন্য নিদেশ দেন। এ ব্যাপারে রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের নব-নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও ইউপি সদস্য নুরুল আবচার বদু জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও চেয়ারম্যান বাবুল নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এতদিন প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেনি। চেয়ারম্যানকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করেনি।  

এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মীর শওকত হোসেন জানিয়েছেন, রাজাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দীর্ঘদিন ধরে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত না করায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্টান ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকান্ডকে আরো গতিশীল করতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে।  

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন