পেকুয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীকে ডেকে এনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠালেন ওসি

fec-image

পেকুয়ায় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিকে থানায় ডেকে এনে মামলা দিয়ে জেলে পাঠালেন পেকুয়া থানার নবাগত ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার। এ খবর পেকুয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ওসির এমন কাণ্ডে সর্বত্রে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ঘৃণা তৈরি হয়েছে। পুলিশের ওসির প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যেও অসন্তোষসহ ঘৃণাভাব দেখা দিয়েছে।

রবিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১১ টার দিকে পেকুয়া থানায় এ কাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতার দেখানো যুবকের নাম নেজাম উদ্দিন ছোটন (২৮)। তিনি উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাওলার পাড়ার মৃত নুরুল হোছাইন প্রকাশ পুতুর ছেলে। ছাত্রলীগ মগনামা ইউনিয়ন শাখার সাবেক সভাপতি শাহজাহান মিয়া জানান, নেজাম উদ্দিন ছোটন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। ২০১৪ সালে শাহজাহান মিয়া ও আরিফুল ইসলামের ইউনিয়ন কমিটিতে নেজাম উদ্দিন ছোটন ছাত্রলীগ মগনামা ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি ছিলেন। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের ইউনিয়ন কমিটিতেও তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।

প্রাপ্ত সুত্রে জানায়, শনিবার (১৭ অক্টোবর) নেজাম উদ্দিন ছোটন বিকেলের দিকে মুহুরীপাড়া ফায়সাল মার্কেটে একটি চায়ের দোকানে বসে চা নাস্তা করছিলেন। এ সময় সিকদারপাড়ার নুরুল হকের ছেলে শহিদুল্লাহ মুঠোফোনে ছাত্রলীগ নেতা নেজাম উদ্দিন ছোটনকে গালিগালাজসহ হাকাবকা করে। কেন মুহুরীপাড়ায় আসছিস এমন প্রশ্ন করে শহিদুল্লাহ। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে মুঠোফোনে বকাবকি হয়। এর কিছুক্ষনের মধ্যে শহিদুল্লাহ লোহার রড নিয়ে সেখানে আসে। এ সময় ছোটন প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত সেখান থেকে সটকে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা শহিদুল্লাহকে ধাওয়া দেয়। এর কয়েক মিনিট পর শহিদুল্লাহর পক্ষে কলিমুল্লাহ নামক এক যুবক অস্ত্র হাতে নিয়ে বাজারে এসে ভীতি সঞ্চার করে। স্থানীয়রা জড়ো হয়ে কলিমুল্লাহ ও শহিদুল্লাহকে দ্বিতীয় দফায় ধাওয়া দেয়। এ সময় তারা মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের বাড়িতে অবস্থান নেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সোলতান মোহাম্মদ রিপন চৌধুরী জানান, নেজাম উদ্দিন ছোটনকে প্রাণনাশের জন্য শহিদুল্লাহ ও তার ভাই আবদুল্লাহ লোহার রড নিয়ে বাজারে পৌছে। খবর পেয়ে লোকজন জড়ো হয়ে এ দু’জনকে ধাওয়া দিয়েছে। চেয়ারম্যান ওয়াসিমের হুকুমে শহিদুল্লাহ ও তার ভাই আবদুল্লাহ ছোটনকে ধরে নিয়ে যেতে আসছিল। পরদিন রবিবার সকাল ১১ টার দিকে আমরা ছোটনকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম। একজন এস,আই ছোটনকে বলেছিল ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে। আমরা ৪/৫ জন তাকে নিয়ে থানায় গিয়েছিলাম। ওসি সাহেবের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ ওসি আমাদের সামনে থেকে নেজাম উদ্দিন ছোটনকে থানা হাজতে ঢুকিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়। এ সময় পুলিশ জোয়ানরা নেজাম উদ্দিন ছোটনকে হাজতে ঢুকিয়ে ফেলে।

ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনাম জানান, সকালে আমি ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে নেজাম উদ্দিন ছোটনকে থানায় দেখা করার বিষয়ে আলাপ করেছি। তিনি বলেছিলেন তাকে নিয়ে এখানে আসেন। বিষয়টি মিটমাট হয়ে যাবে। এরপর আমরা ছোটনকে নিয়ে গিয়েছি। যাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার দেখায়। আমরা ওসিকে প্রশ্ন করেছিলাম। কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তার কি পূর্বে কোন মামলা ছিল। এর জবাব ওসি দেননি। তিনি আমাদেরকে চরমভাবে অপমান করেছে। আমরা একটু পরিবর্তনের জন্য আগ্রহী ছিলাম। ওসি ছোটনকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এজাহার থানায় পৌছে এরপরে। ছাত্রদলের সাবেক দুর্ধর্ষ ২ ক্যাডার আলী আকবর ও জয়নাল চৌমুহনী বসে আরিফ কম্পিউটার দোকান থেকে এজাহার লিখে ওসিকে দিয়েছে। পেকুয়া থানায় ওই এজাহারটি ওই দিন দুপুরের দিকে রুজু করে। যার নং ০৮/২০। এখন আমরা কি প্রশ্ন রাখতে পারি। এ ওসি কি ওয়াসিমের টাকা নিয়ে ছাত্রলীগ আ’লীগকে মামলায় দিয়ে জেলে পাঠানোর জন্য নেত্রী চাকুরী দিয়েছেন।

ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আজিম বাবুল বলেন, ওসিকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। এমন অবিচার আমরা আর কতদিন দেখব। ওয়াসিমের টাকায় এ মগনামায় কয়েক বছরের মধ্যে অন্তত ২০ জনের অধিক আ’লীগের নেতা-কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। যুবলীগ কর্মী সালাহ উদ্দিনকে অস্ত্র দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে এ ওয়াসিম চেয়ারম্যান। স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী আবুল হাসেম ছাত্রলীগ ইউনিয়ন শাখার সাবেক সভাপতি শওকতকে ইয়াবা ও অস্ত্র মামলা দিয়ে জেলে ও এলাকাছাড়া করেছে।

মগনামা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ’লীগ সহসভাপতি আলমগীর জানান, ওয়াসিমকে আমি সন্ধ্যার দিকে ফোন দিয়ে বলেছি আর কতজন আ’লীগকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠালে তোমার মনের প্রশান্তি আসবে। আমরা রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি দেব। একজন রাজাকারের অনুচর ধানের শীষের চেয়ারম্যান তার ক্ষমতার জোর এত কোথায়। আমরা এ ওসির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আশ্রিত হব। আর কত নিরীহ মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার চলবে। এর সমাধান হতে হবে।

প্রবীণ ব্যক্তি জাফর মেস্ত্রী জানান, আমরা কোথায় গিয়ে বিচার পাব। আগে যারা ওসি ছিল এদেরকে ম্যানেজ করে ওয়াসিম আ’লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে জুলুম নিপীড়ন করেছে। কিছু দিন একটু কমেছিল। এ ওসি আসার সাথে সাথে আবার জুলুম শুরু হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতা ছোটন নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে অবিচার। শহিদুল্লাহ জখমী নয়। এরপরও হাসপাতালে ভর্তি দেখিয়ে কাল্পনিক ঘটনা উল্লেখ করে ৩ জন নিরাপরাধ ছেলের বিরুদ্ধে ওয়াসিম চেয়ারম্যানের টাকায় মামলা নিয়েছে ওসি। আমরা প্রতিবাদ করব রাস্তায় নেমে।

ইউনিয়ন আ’লীগ সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, এর আগেও নেজাম উদ্দিন ছোটনকে ওয়াসিম বাহিনীর সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করেছিল। মামলা দিয়েছিল উল্টো জখমী ছোটনদের বিরুদ্ধে। মূলত আ’লীগ নেতা-কর্মীদের উপর ওয়াসিমের জুলুম নিপীড়ন। আমরা এখন কোথায় যাব। নেত্রী এ ওসিকে চাকুরী দিয়েছে দলের কর্মীদের জেলে পাঠানোর জন্য? এটি কি অবিচার নয়।

মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মকছুদ মিয়া জানান, আমরা এ ওসির অপসারণ চাই। কেন ওয়াসিমের টাকায় একজন শিক্ষিত ছেলেকে বিনা কারণে জেলে পাঠালো। আমি বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবকলীগের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক। আমরা রাজনৈতিকভাবে ওয়াসিম ও এ ওসির বিরুদ্ধে কর্মসুচি দেব।

ছাত্রলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখার সাবেক সভাপতি মমতাজুল ইসলাম বলেন, এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্গন। আ’লীগ নিধনের সুপরিকল্পিত নক্সা বাস্তবায়নের কাজ। আমি ছোটনের নি:শর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ চক্রান্তকারীর বিরুদ্ধে এ্যাকশন চাই। পেকুয়া থানার ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি মামলার আসামী। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা কখন হয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি জানান, মামলাটি হয়েছে ১৮ অক্টোবর। রাত্রে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি সাইফুর রহমান মজুমদার জানান, মামলাটি দিনে হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, পেকুয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন