parbattanews

পেকুয়ায় শেষ হলো প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা

পেকুয়া প্রতিনিধি:

নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী আমেজ ততই বাড়ছে। পেকুয়ায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আর মাত্র ১টা দিন বাকি।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪ মার্চ। প্রার্থীরা যার যার মত করে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে প্রচার-প্রচারণায়। গণসংযোগ, পথসভা ও ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করছেন। কুলাকুলি ওকুশল বিনিময় করে নিজের প্রতীকের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।

প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায়ের জন্য নেমে পড়েছেন। সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো পেকুয়া। চায়ের দোকানে ঝড় উঠেছে পছন্দের প্রার্থীদের দোষগুণ নিয়ে। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের হিসেব-নিকেশ পাল্টে যাচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পেকুয়ায় এবার তিন হেভিওয়েট প্রার্থী ভোট যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যদিওবা তিন হেভিওয়েট প্রার্থীই আওয়ামী লীগেরই।

তবে বর্তমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের ২ বিদ্রোহী প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম গিয়াস উদ্দিন। তিনি নির্বাচন করছেন আনারস প্রতীক নিয়ে। অপর প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে। তারা দু’জনই নাগরিক কমিটির মনোনীত ও জনগণের মনোনীত ব্যানারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তবে এবার নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর সাথে লড়াই হবে দু’বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে।

আবুল কাসেম দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলেও নির্বাচনী মাঠে তার অবস্থান সন্তোষজনক কম। চাটুকারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে নৌকার মাঝি কাসেম। হাইব্রিডদের ভীড়ে স্থান নেই ত্যাগী নেতা-কর্মীদের। দু:সময়ের নেতাকর্মীরা এখন অচেনা মুখ।

মানুষ এখন তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। শুরুর দিকে অবস্থান চাঙ্গাভাব থাকলেও এখন ধীরে ধীরে ভাটা পড়েছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, হাইব্রিডদের সুযোগ সুবিধা দেয়া, দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দেয়াসহ নানা অভিযোগ নেতাকর্মীদের। অন্তর জ্বালায় পুড়ছে দলের নেতাকর্মীরা। পাওয়া না পাওয়ার বেদনায় দূরে সরছে নেতাকর্মীরা। স্বজন প্রীতি ও আত্মীয়করণ নৌকার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একইভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিরীহ মানুষ, বিএনপি-জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি, জেল জুলুম, মামলা দিয়ে হয়রানির হুমকি দিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগের চাঁদর জড়িয়ে আছে তার বিরুদ্ধে।

এসব কারণে ভোটে একটি বড় ধাক্কা লাগতে পারে বলে সচেতনমহল দাবি করছেন। দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে মামলায় রেহাই পায়নি খোদ দলীয় নেতাকর্মীরাও। একটি পক্ষকে খুশি করতে কয়েকটি মামলার অলংকার পরায় দলীয় নেতাকর্মীদের।

এদিকে সময়ের সাথে সাথে ভোটের মেরুকরণও পাল্টে যেতে শুরু করেছে।

ভোটাররা জানায়, এস এম গিয়াস উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে মূলত হবে লড়াই। জনগণ এখন দু’জনের দিকে ঝুঁকছে। গিয়াস উদ্দিন একজন ক্লিন ইমেজের লোক। শিক্ষিত, মার্জিত, নম্র ও ভদ্র লোক। তার বিরুদ্ধে কোন লেপন নেই। সৎ ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে তার গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে।

ভোটাররা জানায় তার সমর্থন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন গিয়াসের কথা বলছে। তবে তারা নিরব রয়েছে। ভোটের দিন নিরব বিপ¬ব ঘটাবে।

একইভাবে জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থাও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। তার রয়েছে বিশাল যুবসংগঠন। তারুণ্যের প্রতীক জাহাঙ্গীর। তরুণরা যোগ দিয়েছে দোয়াত কলম মার্কার দিকে। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে তার নিজস্ব অনুসারী। এবারের নির্বাচনে তিনি একজন শক্তিশালী প্রার্থী।

স্থানীয়রা জানান সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জাহাঙ্গীরকে দমিয়ে রাখা অনেকটা কষ্টসাধ্য হবে।

টইটং, রাজাখালী, শীলখালী ইউনিয়নের সচেতন মহল জানান, এখানে দোয়াত কলম ও আনারস মার্কার অবস্থা ভাল। আনারস মার্কার সমর্থকরা নিরবে রয়েছে। মূলত দু’বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটে এগিয়ে থাকবে। নৌকার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে। টইটং এ চেয়ারম্যান জাহেদের কারণে নৌকার ভরাডুবি হওয়ার আশংকা আছে।

তারা জানায়, চেয়াম্যান জাহেদ যে পক্ষে অবস্থান নিবে তার বিপরীতে অবস্থান নিবে সাধারণ জনগণ। সুষ্ঠু ভোট হলে, জনগণ ভোট দিতে পারলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা এগিয়ে থাকবে।

একই মনোভাব প্রকাশ করলেন মগনামার সচেতন মহল। তারা জানায়, ওয়াসিম বিষে আক্রান্ত মগনামাবাসি। ওই চেয়ারম্যানের কারণে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নিবে জনগণ। ওয়াসিমের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা নৌকার প্রার্থী কাসেম। মগনামায় দলীয় নেতাকর্মীদের উপর ওয়াসিম বাহিনীর হামলা, মামলা যেন প্রতিদিনের হোম ওয়ার্ক। সন্ত্রাসীদের জনপদ এখন মগনামা। এসবের খল নায়ক ওয়াসিম চেয়ারম্যান।

স্থানীয়রা জানায় আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক নেতার আশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওয়াসিম। এর নীতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটে। দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হল ২২ মার্চ রাত ১২ টায়।

এদিকে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ৪ প্লাটুন বিজিবি, ১ প্লাটুন র‌্যাব, ৭ প্লান্টুন পুলিশ এবং ৫০ জন পিবিআই সব সময় নির্বাচনী কাজে মাঠে নামছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম।

Exit mobile version