পেকুয়ায় হাম-রুবেল টিকাদান কর্মসূচীতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি

 corruption2

পেকুয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা :
পেকুয়া উপজেলায় হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সীমাহীন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এদিকে কয়েক দিন পূর্বে স্থানীয়দের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হলে অনিয়মের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, পেকুয়ার ৭ ইউনিয়নে হাম-রুবেলা ঠিকাদান কর্মসূচী মাঠ পর্যায়ে সুষ্টুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় থেকে ৭ লক্ষাধিক টাকারও বেশি বরাদ্দ দেওয়া  হয়েছিল। চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারা থেকে ১১ ফেব্রেুয়ারী পেকুয়া উপজেলায় এ কর্মসূচী দায়সারাভাবে বাস্তবায়ন করা হয়।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে. পেকুয়ায় হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচী শুরুর আগে ও পরবর্তী সময়ে অ্যাডভোকেসি সভা, সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, মাইকযোগে প্রচার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বরাদ্দকৃত বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ সরকারী নির্দেশমতে ব্যয় না করে নয়-ছয় করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গুটিকয়েক অসাধু কর্মকাচারী ভূঁয়া বিল-ভাউচার তৈরী করে সরকারী টাকা উত্তোলন করে নিজেদের মধ্যে ভাগভাগি করে নিয়েছেন। সরেজমিনে অনুসন্ধানে ও বেরিয়ে এসেছে এ কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ তছরুপের চাঞ্চল্যেকর বিষয়টি। 

পেকুয়ার ৭ইউনিয়নের এ কর্মসূচী চলাকালীন পেকুয়ার প্রতি ওয়ার্ড়ে একটি করে এমআর ক্যাম্পেইনের জন্য ৮শ’ টাকা করে ২১টি ওয়ার্ড়ের জন্য ১৬হাজার ৮শ’ বরাদ্দ থাকলেও কোন ওয়ার্ড়েই ক্যাম্পেইন করা হয়নি। অথচ পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের প্রধান সহকারী নেজাম উদ্দিন ভূঁয়া বিলের কাগজ তৈরী করে বিল উত্তোলন করেছেন। প্রতি ওয়ার্ড়ে ৩জন করে জন স্বেচাসেবকে টিকাদান কর্মসূচী চলাকালীন ১৫০টাকা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ৩০-৪০টাকা করে দেওয়া হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচীর শুরুর পূর্বে প্রতি ওয়ার্ড়ে ২৪জনের সমন্বয়ে অ্যাডভোকেসি সভা করার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এছাড়াও প্রতি ওয়ার্ড়ে কর্মরত একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক প্রত্যেকের জন্য হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচী চলাকালীন ১৭হাজার ৯শ’ টাকার পরিবর্তে তাদের দেওয়া হয়েছে ৭হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

এছাড়াও পেকুয়া উপজেলার সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দফতরের ৫০জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে ঠিকাদান কর্মসূচী শুরুর পূর্বে একটি অবহিতকরণ সভা করার বাধ্যবাদকতা থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আস্থাভাজন কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়েই নামমাত্র সভা করা হয়েছে। অথচ এ অবহিতকরণ সভায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য আপ্যায়ন বাবদ ৮০টাকা, খাতা-কাগজ-কলম বাবদ ৩০টাকা ও সম্মানি বাবদ ২০০টাকা হারে বরাদ্দ ছিল। যে কয়েকজনকে নিয়ে সভা করা হয়েছে তাদের চা-বিস্কুটে আপ্যায়ন করা হয়েছে মাত্র। দেওয়া হয়নি সম্মানি ভাতাও। এ ক্ষেত্রেও বরাদ্দের অর্থ আতœসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কর্মসূচী শুরুর পূর্বে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ৪০জন নেতাদের নিয়ে একদিনের একটি কর্মশালা আয়োজনের নিয়ম থাকলেও সেটিও না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী ভূঁয়া-বিল ভাউচার করে টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। কর্মসূচী শুরুর পূর্বে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক ও তাদের প্রতিনিধিদের ২০০জনের সমন্বয়ে একটি অবহিতকরণ কর্মশালা করার স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশ ছিল। কিন্তু তা না করে এ কর্মশালার জন্য বরাদ্দের পুরোটাই আতœসাৎ করা হয়েছে।

জানা গেছে, হাম-রুবেলা কর্মসূচী শুরুর পূর্বে পেকুয়া ৭ইউনিয়নের প্রত্যেক ইউনিয়নে ২দিন করে মাইকিং করার জন্য ৬০০টাকা করে মোট ৮হাজার ৪শ’ টাকা বরাদ্দ ছিল। অথচ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারীরা পাড়া-মহল্লার মসজিদের মাইক ব্যবহার করে প্রচার চালিয়েছে। এছাড়াও কর্মসূচী শুরুর পূর্বে একটি সিএনজি ভাড়া করে সেখানে ২টি মাইক লাগিয়ে ১দিন ১হাজার টাকা খরচ করে উপজেলা সদরসহ কয়েকটি ইউনিয়নে মাইকিং করে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এ কর্মসূচীতে বরাদ্দের বিপুল পরিমাণ সরকারী টাকা পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, প্রধান সহকারী নেজাম উদ্দিনসহ আরো কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মচারী ভূঁয়া বিল-ভাউচার তৈরী করে উত্তোলন করে নিয়েছেন। আর তা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। পুরো ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ‘কতিপয়’ অসাধূ কর্মকর্তাদের ও এখান উৎকোচ দেওয়া হয়েছে। পুরো বিষয়টি অবগত হয়েও জেলা সিভিল সার্জন পেকুয়ায় হাম-রুবেলা কর্মসূচীতে বরাদ্দের অর্থ লুটপাঠে জড়িতদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।    

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মচারী জানিয়েছেন,  গত কয়েক দিন পূর্বে হাম-রুবেলা কর্মসূচীর বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়লে পেকুয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: পূর্ণ বর্ধন (পিভি) বড়ুয়াসহ প্রধান সহকারী নেজামউদ্দিন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছন। তারা কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা আরো জানান, গত কয়েক বছর পূর্বে এখানে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পিভি বড়ুয়া যোগদান করার পর থেকে হাসপাতালের প্রধান সহকারী নেজাম উদ্দিনের সাথে আঁতাত করে হাসপাতালের বিভিন্ন বরাদ্দ লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছে। এ নিয়ে ওই কর্মচারীরা স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া দরকার বলে মনে করেন।

পেকুয়া উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সেক্রেটারী ডা: মো: আশেক উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে খুবই আন্তরিক, কিন্তু মাঠ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তাদের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি পেকুয়ায় হাম-রুবেলা টিকাদান কর্মসূচীতে অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে জরুরী ভিত্তিতে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।

 অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: পূর্ণ বর্ধন (পিভি) বড়ুয়া বলেন, বরাদ্দের পুরোটাই যথাযথ নিয়মে ব্যয় করা হয়েছে। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম ও দূর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। তিনি এসব সঠিক নয় বলে ও জোর দিয়ে দাবী করেছেন।
তবে এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা: পুচনু বলেন, পেকুয়ায় হাম-রুবেলা কর্মসূচীতে অনিয়ম দূর্নীতির আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।   

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন