parbattanews

পেকুয়ায় ৬ দিনেও গ্রেফতার হয়নি হত্যা মামলার আসামি

কক্সবাজারের পেকুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসহাবুল করিম জিহাদ হত্যা মামলার ১১ আসামিকে ঘটনার ৬ দিন অতিবাহিত হলেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর স্থানীয়রা একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিল। পরে নিহতের পরিবার থানায় এজাহার দিলে ওই আসামিকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে চকরিয়া থানা পুলিশ।

তবে হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও চোরাই মোবাইল বেচাকেনার সাথে জড়িত নোমানসহ ১১ জন আসামি পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে গ্রেফতার না পারায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী।

তবে চকরিয়া থানা পুলিশ বলছেন, কলেজ ছাত্র জিহাদের খুনিদের ধরতে মাঠে কাজ চলছে এবং ইতোমধ্যে ১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা স্টেশনে পেকুয়া সিকদার পাড়া থেকে কৌশলে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আসহাবুল করিম জিহাদ (২২) কে। জিহাদ পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মকছুদল করিমের ছেলে এবং কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন।

ঘটনার পর গত ৩ ডিসেম্বর নিহত কলেজ ছাত্রের পিতা বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২ থেকে ৩ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা হলেন, নোমান (২৫), মোবারক (২৩), মো: বখতিয়ার (২৫), মো: বোরহান (২৩), মো: আমজাদ, মো: দানব প্রকাশ দানু (২২), সাইফুল ইসলাম (৩০), মো. সোহেল (২০), মো: রমিজ রানা (২০), মো. মুবিন (২২), ফারুক (২২)। এর সবাই কোনখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড়ের ছড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এছাড়া মামলার অপর আসামি একই ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়া গ্রামের টমটম চালক সোহান (২০)।

চকরিয়া থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে বাদী মকছুদুল করিম উল্লেখ করেছেন, তার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদ (২৩) কক্সবাজার সিটি কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। ১ নম্বর আসামি নোমানের কাছ থেকে প্রায় ২-৩ মাস পূর্বে আমার ছেলে ত্রিশ হাজার টাকা পাওনা ছিল। ১নং আসামি ওই টাকা আমার ছেলেকে আজ দেবে, কাল দিবে বলে কালক্ষেপণ করে আসছিল। পরবর্তীতে ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে ১নং আসামি নোমানের সাথে পাওনা টাকার বিষয়ে আমার ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন কৌশলে ১নং আসামীর নেতৃত্বে অপরাপর আসামীরা আমার ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

মামলার বাদী এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টার সময় আমার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদকে (২৩) মামলার প্রধান আসামি পাওনা ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনাস্থ কামাল হোসেনের দোকানের সামনে আসতে বলে। আমার ছেলে পেকুয়া থেকে মোটর সাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা নোমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা টাকা লেনদেন সংক্রান্ত আক্রোশে পরিকল্পিতভাবে হাতে ধারালো দা, ছোরা, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক দেশীয় অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ছেলেকে টানা-হেঁচড়া করে সড়কের পাশে নিয়ে যায়। এরপর রোমান তার কোমর থেকে ধারালো ছোরা বের করে তার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকের বাম পার্শ্বে গুরুতর আঘাত করে। এরপর নোমানের সাথে থাকা অপরাপর সন্ত্রাসীরা একজোট হয়ে জিহাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রদ্বারা নির্মমভাবে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই জিহাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।

জানা যায়, ঘটনার পর আশেপাশের লোকজন সন্ত্রাসীদের কবল থেকে জিহাদকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে গাড়ীযোগে চিকিৎসার জন্য পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদের শরীর পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর পেকুয়া থানা পুলিশ হাসপাতালে এসে নিহত জিহাদের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করেন। এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে জিহাদের ময়না তদন্তে শেষে গত ২ ডিসেম্বর বিকালে পেকুয়া সিকদার পাড়া গ্রামে জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

নিহতের পিতা মকসুদুল করিম জানান, আমার ছেলে খুবই মেধাবী ও ভাল মনের অধিকারী ছিলেন। খুনিরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ছেলেকে তো আর ফিরে পাবোনা। তার ছেলের খুনীদের দ্রুত গ্রেফতার চান তিনি।

চকরিয়া থানার ওসি শেখ মো. আলী বলেন, ঘটনার পর ১ জনকে গ্রেফাতর করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামির কাছ থেকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধী গ্রহণ করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে জন্য পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

এদিকে কলেজ ছাত্র জিহাত হত্যার মামলার আসামিদের গ্রেফতার দাবিতে গত ৩ ও ৪ ডিসেম্বর পেকুয়া চৌমুহুনী এলাকায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নিহত জিহাদের সহপাঠী ও এলাকাবাসীরা।

Exit mobile version