parbattanews

পোশাকের কারণে নারী নির্যাতন অমুসলিম ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে অনেক বেশি

পোশাকের কারণে নারীর হয়রানীর বিষয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমে মুসলিম দেশগুলোকে প্রায়শ শিরোনাম করলেও যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণা বলছে, পোশাকের কারণে নারীর প্রতি হয়রানী মুসলিম দেশগুলোর চেয়ে ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে অনেক বেশি ঘটে। বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার ধ্বজা ওড়ানো দেশগুলোতে মুসলিম দেশের চেয়ে অনেক বেশি নারী পোশাকের কারণে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হয় বলে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের থিংক ট্যাংক পিউ রিসার্চ সেন্টার বলছে,  ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৬টি দেশের নারীরা তাদের পোশাক খুব বেশি ধর্মীয় অথবা খুব বেশি ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ায় সামাজিক হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ মৌখিক কটূক্তি থেকে শুরু করে শারীরিক আঘাত, এমনকি হত্যা এমন হয়রানির মধ্যে পড়ে৷

পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণার বরাতে ডয়েচে ভেলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, উক্ত  ৫৬টি দেশের মধ্যে ৪২টি দেশে নারীরা ধর্মনিরপেক্ষ পোশাক রীতি লঙ্ঘন করায়, অর্থাৎ হিজাব বা অন্যান্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর ১৯টি দেশের নারীরা ধর্মীয় পোশাক রীতি না মানায়, অর্থাৎ হিজাব না পরায় কিংবা ধর্মীয় রীতির সঙ্গে মেলে না এমন পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷

জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইসরায়েল ও রাশিয়ায় নারীদের দুই অভিজ্ঞতাই হয়েছে৷

৫৬টি দেশের মধ্যে ইউরোপের দেশ ২২টি৷ এর মধ্যে ২০টি দেশে নারীরা হিজাব বা অন্য ধর্মীয় পোশাক পরায় হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ আর দুটি দেশে হিজাব না পরায় নারীদের হয়রানি হতে হয়েছে৷

২০১৮ সালে ডেনমার্কে এক চালক হিজাব পরা এক মুসলিম নারীকে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন৷ জার্মানিতে এক নারী একজন মুসলিম নারীকে মেরে তার হেডস্কার্ফ খুলে ফেলার চেষ্টা করেন৷ এই অঞ্চলের ১৬ দেশে নারীরা হয়রানিতে পড়েছেন৷

২০১৮ সালে হেডস্কার্ফ না পরায় এক নারীকে হামলা করায় মালয়েশিয়ায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালের কিরঘিস্তানে বিলবোর্ডে বিভিন্ন রকম ইসলামি পোশাক পরিহিত নারীর ছবি বিতর্ক তৈরি করেছিল৷ এই অঞ্চলের সাত দেশের নারীরা পোশাকের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন৷

২০১৮ সালে কেনিয়ার কিছু অংশে নারী শিক্ষকদের হিজাব পরার নিয়ম করা হয়েছিল৷ আর লাইবেরিয়ায় হেডস্কার্ফ পরায় মুসলিম নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ ছয়টি দেশে নারীদের হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে৷

২০১৮ সালে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে এক হিন্দু স্কুলে এক মুসলিম নারীকে হিজাব না খুললে স্কুল থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল৷ ২০১৬ সালে ক্যানাডায় এক নারী এক হিজাব পরিহিতার দিকে থুতু ছুড়ে তার হিজাব ও চুল ধরে টান দিয়েছিলেন৷ পাঁচ অঞ্চলের মধ্যে একমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোতে নারীরা হিজাব বা ধর্মীয় পোশাক পরার চেয়ে না পরায় বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন৷

২০১৬ সালে কাতারে এক মুসলিম নারী হিজাব না পরে খবর উপস্থাপনা করায় সমালোচিত হয়েছিলেন৷ ২০১৮ সালে ইসরায়েলের একদল অর্থডক্স ইহুদিকে তাদের দৃষ্টিতে ‘অভদ্র’ পোশাক পরায় এক তরুণীর দিকে চিৎকার ও তাকে ধাওয়া করতে দেখা গিয়েছিল৷

ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতিনীতির উপর সরকার ও সমাজের বিধিনিষেধ নিয়ে প্রতিবছর রিপোর্ট করে পিউ রিসার্চ৷ এ লক্ষ্যে প্রথমে কয়েকটি প্রশ্ন ঠিক করা হয়৷ তারপর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার প্রকাশিত ১৯টি রিপোর্টে থাকা প্রতিটি দেশের তথ্যের মধ্যে ঐ প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজা হয়৷ এভাবে ‘সরকারি বিধিনিষেধ সূচক’ ও ‘সামাজিক হয়রানি সূচক’ প্রকাশ করা হয়৷ ছবিঘরের তথ্যগুলো ২০২০ সালে প্রকাশিত হয়েছে৷

Exit mobile version