parbattanews

প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত বান্দরবান

10866864_796046473799205_2103644348_n

স্টাফ রিপোর্টার :

পাহাড়ী কন্যা বান্দরবানে প্রকৃতির নির্মল ছোঁয়া পেতে এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। বছরের বিশেষ দিনগুলোতে সরকারি ছুটির সময় পর্যটকদের ঢল নামে বান্দরবান জেলায়।

দেশী পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকরা এই অঞ্চলের সৌন্দর্য্য উপভোগে ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ি জনপদে। বান্দরবানে কি নেই? প্রাকৃতিক লেক, ঝরনা, বাদুড়গুহা, আলীর সুড়ঙ্গ, ঝুলন্ত সেতু, স্বর্ণমন্দির, পর্বত চূড়া এবং ভিন্ন ভাষার এগারোটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় সংস্কৃতি।

তবে এখানকার অপার সৌন্দর্যে পর্যটকরা মুগ্ধ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা, আবাসন, নিরাপত্তা এবং পর্যটন স্পটগুলোর আরও উন্নয়নের দাবি পর্যটকদের। সরকার এবং স্থানীয় পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সদিচ্ছার অভাবে পাহাড়ে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পরিকল্পিত উন্নয়নই এই অঞ্চলের অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বান্দরবান আবাসিক হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত বছর পর্যটন ব্যবসায় ধস নামে। এসময় অনেক হোটেল-মোটেল ও খাবার হোটেলের দোকান বন্ধ করে দেয় মালিক পক্ষ। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠায় পর্যটন শিল্পেও স্বস্তি ফিরেছে। নভেম্বর মাস থেকে জেলায় দেশী-বিদেশী পর্যটক আশা শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার থেকে রড় দিনের সরকারি ছুটি থাকায় শনিবার পর্যন্ত বান্দরবানে জেলা শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায়ও হোটেল-মোটেল, রেস্ট হাউজ এবং গেস্টহাউসগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। এক সিটে ডাবলিং করেও থাকছেন পর্যটকরা।

দুর্গমাঞ্চলে পাহাড়িদের মাচাংঘর গুলোতে পর্যটকরা অন্যরকম রাত কাটাতে পেরে বেশ খুশি। আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোসহ পাহাড়ি পল্লিগুলোতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবন-সংস্কৃতি উপভোগে ব্যস্ত সময় পার করছে পর্যটকরা।



অনুন্নত সড়ক ব্যবস্থা পর্যটন শিল্পে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে মনে করেন আগত পর্যটকরা। সড়ক উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহযতর ও উন্নত করার দাবী জানিয়েছেন ঢাকা থেকে বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটক হামিদ ও আবিদুর রহমান দম্পতি। তারা জানান, বাংলাদেশে এত সুন্দর স্পট আছে বান্দরবানে বেড়াতে না আসলে জানতে পারতাম না। বান্দরবানে পাহাড়ের সাথে পাহাড়ের মিতালি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সব চেয়ে বেশী মুগ্ধ হয়েছি নীলাচলে বেড়াতে গিয়ে। তারা আরো বলেন, পর্যটন স্পটগুলোতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা হলে দেশী পর্যটকের পাশাপশি বিদেশী পর্যটকের ভীড় আরো বাড়বে।

এদিকে পর্যটকের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ-রেস্ট হাউজ মালিকসহ পর্যটনশিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

তবে পর্যটকবাহী পরিবহনগুলোর প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নীলাচল স্পটে যাবার সময় একবার টোল ও দ্বিতীয়বার টিকেট নেয়ার বিষয়টি যন্ত্রণাদায়ক। ছোটখাটো সমস্যাগুলো পর্যটনশিল্পের বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। প্রশাসনের কঠোর নজরদীরর দাবী করেন পর্যটকরা।

এদিকে ভূমি জটিলতায় পর্যটন শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়ের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারিভাবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং কক্সবাজারসহ চারটি জেলাকে সম্পৃক্ত করে নেওয়ার প্যাকেজ উন্নয়ন পরিকল্পনা দীর্ঘ ছয় বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি। এ ছাড়া ২০০৯ সালে পর্যটন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পটগুলো পরিদর্শন করে বান্দরবানে নীলাচল থেকে স্বপ্নচূড়া, চিম্বুক পাহাড় থেকে জীবন নগর পর্যন্ত দুটি এবং রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে আরও তিনটি ক্যাবল কার নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারের উদ্যোগটি এখনও শুধু পরিকল্পনা এবং পরিদর্শনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিন পার্বত্য জেলার পর্যটন স্পটগুলো পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

প্রতিবছর এই সময়ে বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন ঘটে। জেলা সদরের অদূরে নীলাচল, মেঘলা, স্বর্ণ মন্দির, পর্বত চুড়া এবং নীলগিরি, বাদুরগুহা, আলীসুরঙ্গ, বগালেক, পর্বত শৃঙ্গ তাজিংডং, কেউক্রেড়াডং এ পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে শহরের কাছে সাঙ্গু নদীতে নৌকা ও ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে পর্যটকদের বেড়াতে দেখা গেছে। রিজুক ঝর্ণা ও শৈলপ্রপাতে ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভাসাচ্ছে পর্যটক তরুণ তরুণীরা।

এখানে রয়েছে মারমা, ত্রিপুরা, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমি, খেয়াং, পাঙ্খো, চাকমা, চাক এবং লুসাইসহ ১১টি পাহাড়ী সম্প্রদায়ের বসবাস। দেশের অন্যকোথাও এতগুলো পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর বসবাস নেই। পাহাড়ীদের বৈচিত্র্যময় জীবন চিত্র যে কারো মনকে উৎফুল্ল করে।

এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যানেজার এইচ এম আল মুজাহিদ জানান, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে পর্যটন স্পট গুলোকে সৌন্দর্য্য বর্ধণ করা হয়েছে। পর্যটকদের আবাসন, যানবাহন এবং খাওয়ার রেস্টুরেন্টগুলোতে পর্যটক হয়রানী বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কাজি মজিবর রহমান জানান, পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন, টয়লেট সুবিধা এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার দূরবীন ব্যবস্থার দাবী জানানো হয়েছে।

Exit mobile version