প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে লক্ষীছড়ির ইউপি নির্বাচন

fec-image

সারাদেশের ন্যায় খাগড়াছড়ি জেলার দূর্গম জনপদ লক্ষীছড়িতে ৪র্থ ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইউপি নির্বাচন। লক্ষীছড়ি’র তিন ইউপিতে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট প্রার্থী ১১৭জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ও সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১০৬ জন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা। পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে ইউপির অলি-গলি, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনায়।

লক্ষীছড়ির ধারাবাহিক উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নৌকা প্রতীকে গণজোয়ার সৃষ্টিতে মাঠে নেমেছেন প্রার্থী ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও থেমে নেই ভোট আদায়ে। দেড় যুগের অধিক সময় তিন ইউনিয়নের কোনটিতেই আওয়ামী লীগের কেউই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না হলেও এই সময়েই অনুন্নত জনপদে বেশি উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবী করে এবার নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগ ।

লক্ষীছড়ি সদর ইউপিতে ভোটার ৮ হাজার ৮৭২। চেয়ারম্যান পদে ৪ জন। উষাজাই চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা (আনারস), স্বপন চাকমা (মোটরসাইকেল) ও জয়া চাকমা (চশমা) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

২ নং দূল্যাতলী ইউপিতে ভোটার ৫ হাজার ৮০৫জন। চেয়ারম্যান পদে ২ জন। উচাইপ্রূ মারমা (নৌকা) ও ত্রিলন চাকমা (চশমা)।

৩ নং বর্মাছড়ি ইউপিতে ভোটার ৫ হাজার ১৪৭জন।চেয়ারম্যান পদে ৫ জন। নীলবর্ণ চাকমা (নৌকা), হরিমোহন চাকমা (ঘোড়া), পাইসুখই মার্মা (চশমা), লক্ষীধন চাকমা (টেবিল ফ্যান) ও সুইশালা মারমা (আনারস)।

এছাড়াও চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ১০৬জন প্রার্থী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোটের জন্য নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

রোববার (১২ ডিসেম্বর )উপজেলার সদরে সাপ্তাহিক বড় হাটবার। ফলে তিন ইউনিয়নের দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সকাল থেকে গণসংযোগ চালিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের তিন প্রার্থী দলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দলে দলে ভাসমান দোকানদার ও দূর-দূরান্ত থেকে বাজারে আসা ভোটারদের হাতে হাতে লিফলেট ধরিয়ে দিয়ে অনুন্নত এই জনপদ আলোকিত করার স্বার্থে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে দলমত নির্বিশেষে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে দেখা গেছে।

এ সময় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উষাজাই চৌধুরী, উচাইপ্রূ মারমা ও নীলবর্ণ চাকমা পার্বত্য নিউজকে বলেন, এখানকার সুবিধাবঞ্চিত জনপদে থাকা সাধারণ মানুষ উন্নয়ন চায়। আর এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকার বিকল্প নেই, সেটিও তাঁরা বিশ্বাস করে। কিন্তু পাহাড়কে অনুন্নত রেখে নিজস্ব সুবিধা আদায়কারীরা নৌকা প্রতীকে ভোট প্রদান এবং প্রচার-প্রচারণায় গোপনে-আপডালে বাধা সৃষ্টি করছে। যা মোটেও প্রত্যাশিত না। সাধারণ ও সচেতন ভোটাররা বিষয়টি অনুধাবন করে এ বছর নৌকা প্রতীকে মূল্যবান ভোট দিবেন বলে আওয়ামী লীগ পরিবার আশাবাদী।

অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দোকান-পাটে ও নির্বাচনী অফিসে বসে ভোটারদের সাথে মতবিনিময়, গণসংযোগে ব্যস্ততা নজরে পড়েছে। এ সময় সদর ইউপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান প্রবিল কুমার চাকমা (আনারস) পার্বত্য নিউজকে বলেন, সদর ইউপি’র অসমাপ্ত উন্নয়ন শেষ করতে আমি আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে মাঠে নেমেছি। মাঠ ভালো, আমি আবারও জনপ্রতিনিধি হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন বেপারী পার্বত্য নিউজকে বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সদর ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ছিলেন, বর্তমান দলের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য রেম্রাচাই চৌধুরী। তাঁর সময়ে এই অনুন্নত জনপদে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারা শুরু হয়ে আজও সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু গত দেড় যুগের অধিক সময় তিন ইউপিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েও তৃণমূলে উন্নয়ন হোক সেটি তাঁরা মন থেকে চায় না। পক্ষান্তরে উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেন। তাই লক্ষীছড়িবাসীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে জনগণ ভোট দিবে বলে আমরা আশাবাদী।

উপজেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কিরণ বিকাশ চাকমা জানান, লক্ষীছড়ি’র তিন ইউপি’র ২৭টি কেন্দ্রের ৬৬টি বুথে ভোট গ্রহনে ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আগামী ১৭ ডিসেম্বর সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। আর তিনটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ব্যালট ও মালামাল নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন