parbattanews

প্রতিবন্ধী ডাব বিক্রেতার এসএসসি পাস

unnamed (1) copy

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

প্রচণ্ড গরমে পানছড়ির প্রধান সড়কে দাঁড়ালেই দেখা মিলে খর্বকায় প্রতিবন্ধী ডাব বিক্রেতা বোধিপ্রিয় চাকমার। এবারের এসএসসিতে পানছড়ি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনালে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ থেকে সে জিপিএ ৪.০৭ পেয়ে পাস করেছে।

বোধিপ্রিয় ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির সূতকর্ম্মা পাড়া গ্রামের মৃত সুকুমার চাকমা ও বিনা চাকমার ছেলে। বিদ্যালয় ছুটির পর ও বন্ধের দিনে কাঠ ফাটা রোদ উপেক্ষা করে কখনো ভ্যান কখনো ঠেলা গাড়িতে ফেরি করে ডাব বিক্রি করাই তার নিত্য কাজ। তাছাড়া মানুষের জমিতে বদলা, রাজ মিস্ত্রির জোগালীসহ অন্যান্য কাজও করে থাকে। পরিবারের ছয় সদস্যের মধ্যে চার জনই প্রতিবন্ধী। তার বড় বোন মনোবালা চাকমাও পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু অভাবের তাড়নায় মেধার বিকাশ প্রস্ফুটিত হবার আগেই অন্নের সন্ধানে পাড়ি জমায় ঢাকার এক ছোট-খাট কোম্পানীতে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিজস্ব কোন জায়গা জমি না থাকায় এলাকার কালাচাদ চাকমার জায়গায় ঝুপড়ির মত ঘর বেঁধে কোন রকমে তাদের বসবাস। বোধিপ্রিয় খুবই মেধাবী। তার দুটি পা খর্বকায়। এইচএসসিতে খরচ বেশি তাই চিন্তিত তার পরিবার। কেউ সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে না এলে হয়তো তার স্বপ্ন  অধরা থেকে যাবে বলে এলাকাবাসীর ধারনা।

বোধিপ্রিয় চাকমার সাথে আলাপকালে জানা যায়, বিদ্যালয় ছুটি শেষে ডাব বিক্রিসহ অন্যান্য কাজ করে সন্ধ্যায় হারিকেন আর বাতির নিভু নিভু আলোতেই নিয়মিত লেখাপড়া করেছে। প্রতিবন্ধী মায়ের কষ্ট, দু’বেলা ঠিকমত খেতে না পারা, পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে যাওয়া, খাতা-কলম ও স্কুল ড্রেস কিনতে না পারার জ্বালা ছিল নিত্য সঙ্গী। তার স্বপ্ন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হবার কিন্তু অভাবের সংসারে সে আশা কতটুকু পূরণ হবে তা আজো বলতে পারছেনা। বর্তমানে তার একটাই লক্ষ্য শত বাধা পেরিয়েও এইচএসসিতে ভালো পয়েন্ট নিয়ে পাশ করা।

পানছড়ি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলী চাকমা জানায়, বোধিপ্রিয় মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায়ও সে ভালো নম্বর পেয়ে সব বিষয়ে পাশ করত।

৫নং উল্টাছড়ি ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান সুব্রত চাকমা বলেন, এ মেধাবী নিরীহ প্রতিবন্ধী পরিবারের ছেলেটির লেখাপড়ার খরচ মিটাতে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা দরকার।

প্রতিবন্ধী ও গরীর পরিবারে জন্ম নিয়ে হারিকেন ও বাতির আলোয় পড়ালেখা করেও সে বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে একটু সহযোগিতার হাত বাড়ালেই হয়তো বোধিপ্রিয়র স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন পাড়া প্রতিবেশীরা।

Exit mobile version