parbattanews

প্রতিবন্ধী হয়েও অন্য প্রতিবন্ধীদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছেন খাগড়াছড়ির কিশোর চাকমা

একটি দূর্ঘটনায় প্রায় পঙ্গু কিশোর চাকমা নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে না পারলেও নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে এখন অন্যের স্বপ্ন বুনছেন তিনি। খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে কিশোর চাকমা গড়ে তুলেছেন ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন ও ট্রেনিং সেন্টার’।যেখানে হুইল চেয়ারে বসে অন্য প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। দিচ্ছেন পরামর্শ। তার এমন উদ্যোগকে অণুকরণীয় বলছেন স্থানীয়রা।

 ৯ বছর আগের কথা। গাজীপুরের একটি কলেজে পড়তো কিশোর চাকমা। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনার পাঠ শেষে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু ডিগ্রিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ২০০৯ সালে হোস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে মেরুদণ্ডে আঘাত পায় কিশোর। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকলেও কোন উন্নতি হয়নি।

দূর্ঘটনার পর থেকে সাভারের পঙ্গু হাসপাতালে টানা দু’বছর চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ রপ্ত করেন। ২০১২ সালে খাগড়াছড়িতে ফিরে গরীব, এতিম ও প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে পড়ানো শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাঁর মত শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বড় পরিসরে কিছু করার তাড়না থেকে খাগড়াছড়ির জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের বেতছড়িমুখ এলাকায় গড়ে তোলেন ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন ও ট্রেনিং সেন্টার’। যেখানে বিনামূল্যে সেলাই ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পাশাপাশি পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীদের নিজ ঘরে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি। নিজের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেও  নিজে হুইল চেয়ারে বসে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন অন্য প্রতিবন্ধীদের।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের কমলছড়ি ইউনিয়নের বেতছড়িমুখ এলাকার বাসিন্দা প্রতিবন্ধী কিশোর চাকমার নাম এখন সবার মুখে মুখে। ১২/২৪ ফিটের জরাজীর্ণ একটি বেড়ার ঘর তার। ঘরটির অর্ধেক জায়গাজুড়ে ছয়টা সেলাই মেশিন এবং দু‘টো কম্পিউটার। সেখানে প্রতিবন্ধীদের কেউ কম্পিউটার শিখছে কেউবা সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শুধু কি প্রতিবন্ধী? নাহ। স্থানীয় ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনার ফাঁকে বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন এবং ট্রেনিং সেন্টার’। যেখান থেকে শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন প্রশিক্ষনার্থীরা।

স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন ও ট্রেনিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর চাকমা জানান, ১৫ জন প্রতিবন্ধী নিয়ে ২০১৮ সালে পৈত্রিক ভিটায় প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে দুটি বিভাগে মোট ৩১জন প্রশিক্ষনার্থী রয়েছে। এছাড়াও দুইজনকে নিজের ঘরে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছেন।মূলত কম্পিউটারের কাজ এবং পরিবার থেকে কিছু নিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। 

কিশোরের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তাঁর পাশে থাকার কথা জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান বলেন, কিশোর চাকমার এ উদ্যোগ অনুকরনীয়। তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

পরিবার, সংসার, সংগঠন। সবকিছু মিলে হতাশা থাকলেও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কিশোর চাকমা। তাঁর ‘স্বপ্ন প্রতিবন্ধী সংগঠন ও ট্রেনিং সেন্টার এর পাশে সরকার ও বিত্তবানরা দাঁড়ালে জেলায় প্রতিবন্ধীদের আলোর দিশারী হতে পারে এই প্রতিষ্ঠানটি।

Exit mobile version