parbattanews

প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উৎকণ্ঠা

শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি বজলুল ইসলাম ও নুর বশর বলেন, ‘হঠাৎ প্রত্যাবাসন নিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ও আতস্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জোরপূর্বক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে এমন গুজবে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে। তারা বলেন, প্রশাসনের সাথে প্রত্যাবাসন বিষয়ক বৈঠকে এ সব কথা তুলে ধরা হয়েছে।

তারা জানান, প্রত্যাবাসন নিয়ে কেউ যেন কোনও ধরনের গুজব ছড়াতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ‘রোহিঙ্গা নেতারা সেখানে বলেছেন, যেদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে এসেছি, সেই দেশে কীভাবে যাবো? আবারও নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসবো এদেশে? তারা গোপনে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আপত্তি জানান। একইসঙ্গে প্রত্যাবাসন বিষয় নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনারও দাবি জানান তারা।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্বাস করি, কিন্তু জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)-কে বিশ্বাস করি না। প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা বিভিন্ন কথা বলে যাচ্ছে। গত ২০১২ সাল থেকে সেদেশে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের এখনও স্বাধীনতা দেয়নি, এখান থেকে কীভাবে রোহিঙ্গারা যাবে?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের শিবিরে একটি কু-চক্রী মহল প্রত্যাবসন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। এ কারণে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। গোপনীয়তার মাধ্যমে তো প্রত্যাবাসন হতে পারে না। তাই, প্রত্যাবাসন-প্রক্রিয়া নিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করার দাবি জানাচ্ছি।’

জানতে চাইলে টেকনাফ লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘প্রত্যবাসন বিষয়ে ক্যাম্পে যেন কোনও ভূল তথ্য প্রচারিত না হয়, সেজন্য সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ক্যাম্প ইনচার্জরা।’

প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১৫-এর টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে নিয়মিত টহল দিয়ে যাচ্ছেন র‌্যাব সদস্যরা। প্রত্যাবাসন নিয়ে ক্যাম্পে কোনও গুজব ছড়াতে দেওয়া হবে না।’ গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়ান্দা সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

এদিকে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আগামী ২২ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত যাবে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার একটি দল। তবে, বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরিষ্কারভাবে কিছু না বললেও প্রত্যাবাসন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন।

প্রত্যাবাসনে রবিবার (১৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিসে আয়োজিত রোহিঙ্গা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, প্রত্যাবাসন যেকোনও সময় শুরু হতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পর্দার অন্তরালে অনেক কিছু হচ্ছে, চেষ্টা হচ্ছে। তবে সব চেষ্টা সফল হবে এমন নয়। আগামী কয়েক সপ্তাহ আমরা রোহিঙ্গাদের উৎসাহিত করবো, যাতে তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। এটা শুধু বাংলাদেশের না, এটা রোহিঙ্গাদেরও প্রধান উদ্দেশ্য। যদি তারা ফিরে না যায়, তবে শুধু জমির অধিকার নয় তারা তাদের সব অধিকার হারাবে।’

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেন, ‘প্রত্যাবাসন বাংলাদেশের কাছে সবসময় একটি অগ্রাধিকার এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে। অনেকে রোহিঙ্গা সমস্যাকে বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমারের সমস্যা বলে বর্ণনা করে। কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার এবং তাদের লোকদের মধ্যে সমস্যা।’

Exit mobile version