প্রধানমন্ত্রীকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে জমিসহ বাড়ি পেল টেকনাফের কিশোর মামুন

fec-image

প্রধানমন্ত্রীকে মুঠোফোনের মাধ্যমে একটি ক্ষুধে বার্তায় সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে জমিসহ টিন শেড সেমি পাকা বাড়ি পেলেন টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকার মামুন (১৭) নামের এক কিশোর। তাও সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের এক অজপাড়া গা থেকে । সামন্য খুদে বার্তা পেয়ে প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতার হাত বাড়ান মামুনের পরিবারের দিকে। বর্তমানে বিশ শতক জমির ওপর টিন শেড পাকা বাড়ি মালিক কিশোর মামুনের পরিবার।

সোমবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং কেরুনতলীতে মামুন ও তার পিতা রিক্সাচালক রমজান আলীসহ পরিবারের কাছে সম্পত্তির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। দ্ররিদ্র মামুনের পরিবারের প্রাপ্তিতে খুশি তার প্রতিবেশীরাও।

জানা যায়, তারা (মামুনেরা) ৪ ভাই ও এক বোন। বোনের বিয়ে হয়েছে। তার বাবা-মাসহ বর্তমানে ৬ জনের সংসার। নিজেদের কোনো জমি এবং ঘর নেই। বন বিভাগের জমিতে কোনো রকমভাবে বসবাস করছে। পুরো সংসার হতভাগা রিকশাচালক বাবা রমজান আলীর কাঁধের ওপর। অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণী থেকেই পাঠ চুকিয়ে নিতে বাধ্য হয় সে।

কিশোর মামুন এরপর একটি দোকানে মাসিক তিন হাজার টাকায় চাকরি নেয়। কিন্তু কভিড লকডাইনের কারণে সেই চাকরিও এখন নেই। ছোট তিন ভাইয়ের মধ্যে দুজন নুরানী মাদরাসায় পড়ে। তাই অনলাইন পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নাম্বার প্রকাশিত হলে সংগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয় নেন তিনি ।

মাসদুয়েক পূর্বে নিজ পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মোবাইলে একটি খুদে বার্তা প্রেরণ করে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক রমজান আলীর ছেলে মামুন। খুদে বার্তায় মামুন লিখেন ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি এক অসহায় পরিবারের সন্তান। আমাদের জমিও নেই ঘরও নেই। আপনার সহযোগিতা চাই।’ মামুনের এই খুদে বার্তায় সাড়া দিয়ে তাৎক্ষণিক কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা কিশোর মামুন। তিনি বলেন ‘পরিবারের লাগাতার অভাব-অনটনে এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়ি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হব। প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল নম্বর খুঁজে বের করে সাহস করে মোবাইলে দুয়েকবার সরাসরি রিং দেয়। কিন্তু মোবাইল রিসিভড না হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত নেয়-এবার সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খুদে বার্তা (ম্যাসেজ) প্রেরণ করবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। ম্যসেজ পাঠানোর পরের দিন থেকে তার সাথে যোগাযোগ শুরু করে প্রধানমন্ত্রীর লোকজন মাত্র দুই মাসের মধ্যে তার একটি স্বপ্নের জমি ও ঘর পেয়ে যান। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এবই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

জেলা প্রশাসক বলেন- ‘প্রধানমন্ত্রী নিজের মোবাইলে এরকম খুদে বার্তাটি পেয়েই নির্দেশনা প্রদান করেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।’ এরপর জেলা প্রশাসক টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ব্যাপারটি অবহিত করেন। টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিন গিয়ে মামুন নামের সেই কিশোরকে খুঁজে বের করে তাকে নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে যান। মামুনের কাছে বিস্তারিত জেনে জেলা প্রশাসক ও টেকনাফের ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) আবুল মনসুর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী, হোয়াইক্যং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনর রশিদ সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মাচারি,স্থানীয় মিডিয়াকর্মীরা।

উদ্বোধন শেষে মামুনের পিতা রমজান আলীকে একটি টমটম (অটো রিক্সা) দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন