প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় কক্সবাজারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম

Proposed_design_of_Coxs_Bazar_Stadium

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

এখন আর মাস কিংবা বছর নয়, আর মাত্র একদিন পরই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে কক্সবাজারবাসীর। প্রত্যাশিত সেই দিনক্ষণের গণনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। নানা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার পর এবার সত্যিই পূরণ হতে চলছে সাগরপাড়ের ক্রীড়ামোদী মানুষগুলোর স্বপ্ন। সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ লক্ষ্যে স্টেডিয়ামের ড্রেসিং রুম, গ্যালারি, ভিআইপি ও মিডিয়া বক্সে পুরোদমে চলছে রং তুলির শেষ আঁচড়। এর পরপরই নির্মাণ কাজের সমাপ্তি ঘটবে। একই সাথে সমাপ্তি ঘটবে কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন কক্সবাজার গলফ মাঠের ৮০ একর জমিতে গড়ে উঠা এ স্টেডিয়ামটি প্রথমে চলতি বছরের আগামী মার্চ মাসে টি-টৌয়েন্টি প্রমিলা বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ভেন্যু ও পরে অস্থায়ী ক্রিকেট স্টেডিয়াম হওয়ার কথা ছিল। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) প্রস্তাবিত ৮০ একর জমির মধ্যে প্রায় ৫৫ একর জমির উপর কাজও সমাপ্ত করে।

প্রায় ১ লাখ আসন বিশিষ্ট বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম স্টেডিয়াম হবে এটি। শুধু আসন সংখ্যা দিয়ে নয় নির্মাণ শৈলী, প্রযুক্তি, আধুনিকতায় ও অবস্থানগত দিক বিবেচনায়ও বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয়  স্টেডিয়াম এটি। শুধু তাই নয়, ইডেন, ও লর্ডসের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম এটি।

কিন্তু আইসিসি প্রতিনিধিদল বার বার পরিদর্শন করার পর ভেন্যু নিয়ে প্রথমে সন্তুষ্ট হলেও পরবর্তিতে টি-টৌয়েন্টি বিশ্বকাপে কক্সবাজার ভেন্যুটি বাতিল হয়ে যায়। এর পরপরই কক্সবাজারবাসী ভেন্যু বহাল ও স্থায়ী আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করে।

এদিকে, স্টেডিয়াম নির্মাণের শুরু থেকে পর্যটন করপোরেশন ও তথাকথিত পরিবেশবাদী সংগঠনসহ কয়েকটি বিশেষ মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছিলো কক্সবাজার স্টেডিয়াম নিয়ে। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রের বাঁধ ভেঙ্গে কক্সবাজারবাসীর লালিত স্বপ্ন এবার পূরণ হতে চলেছে।

জানা গেছে, পর্যটন শিল্পের বিকাশে কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সমুদ্র সৈকত তীরবর্তী গলফ মাঠে এই স্টেডিয়াম নির্মাণকালে প্রথমেই খোদ পর্যটন করপোরেশনের বাঁধার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

৮০ একর জমিতে গড়ে ওঠা কোটি টাকা খরচ করে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা বাকি যখন তখনই গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিল পর্যটন করপোরেশন। কক্সবাজারে তারকা মানের হোটেলের ভিড়ে ওই জায়গায় আরও একটি ফাইভ স্টার হোটেল বানাতে চায় পর্যটন করপোরেশন।

এ খবরে হতাশ কক্সবাজারবাসীর জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটাতে ছোট ভাইয়ের নামে করা স্টেডিয়ামটি নিজেই উদ্বোধন করতে আসছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। আর সেদিনই প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কক্সবাজারে টি-২০ বিশ্বকাপের ভেন্যু দেয়ার ঘোষণা দিবেন এমন আশার বুক বেধে এখন কক্সবাজারবাসী।

কক্সবাজার সদর-রামু আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি ছিল সাগর পাড়ে একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণ করা। তা কক্সবাজারবাসীর প্রাণের দাবিও ছিল। বর্তমান সরকার সেই দাবিটি পূরণ করছে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কথা আরও ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বে। ফলে পর্যটক বেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে কক্সবাজারের পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে।”

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্ন্তজাতিক শেখ কামাল স্টেডিয়ামের উদ্বোধন ছাড়াও সেদিন বিদ্যুৎ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও মহেশখালীর বেড়িবাঁধসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জানান, সরকার প্রধানের কক্সবাজার সফরকে কেন্দ্র করে ৫ স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হবে।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, “সমুদ্রতীরে দৃষ্টিনন্দন এই ক্রিকেট স্টেডিয়াম যে কারও মন ছুঁয়ে যাবে। এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ক্রিকেট খেলা দেখার পাশাপাশি সমদ্র দর্শন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের মুগ্ধ করবে। পাল্টে যাবে কক্সবাজারের চেহারা।”

উল্লেখ্য, এর আগে গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর এই স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন