parbattanews

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অ্যামনেস্টির খোলা চিঠি : পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বিদেশিদের ভ্রমণ বাধা দূর করার আহ্বান

amnesty

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক :

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ‘আদিবাসী’ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে বিদেশিদের ভ্রমণ বাধা দূর করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে গত জানুয়ারিতে জারি করা যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও এনজিও’র কার্যক্রম মনিটরিং ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা, বিদেশি অতিথি ও কূটনীতিদের ভ্রমণ ও স্থানীয় পর্যায়ে বৈঠক নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে তা বাতিল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রকাশিত চিঠিতে দেখা যায়, সংগঠনের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষণা পরিচালক ও ট্রানজিশন লিড ডেবিড গ্রিফিথস্ স্বাক্ষরিত চার পৃষ্ঠার ওই চিঠিটি প্রধানমন্ত্রী বরাবর গত ১২ অক্টোবর ২০১৫ পাঠানো হযেছে।

সংগঠনটির ভাষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় ‘আদিবাসী’ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। অন্যদিকে ওই প্রজ্ঞাপনের প্রয়োজনীয়তাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তারা এটি প্রত্যাহার চান।

উল্লেখ্য, গত ৭ জানুয়ারি ২০১৫ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘শান্তিচুক্তি পরবর্তী পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ক’ এক সভায় দেশী-বিদেশী ব্যক্তি/সংস্থা কর্তৃক পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়িদের সাথে সাক্ষাতের সময় স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি-এর উপস্থিতি, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভ্রমণে ইচ্ছুক বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণের একমাস আগে অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করার বিধান, পার্বত্য চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসমূহের দায়িত্ব পালন করা, পার্বত্য জেলাসমূহে পুলিশ/আনসার বাহিনীতে কর্মরত প্রাক্তন শান্তিবাহিনীর সদস্যদের পর্যায়ক্রমে অন্য জেলায় বদলির ব্যবস্থা ইত্যাদি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

বিজিবি’র একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে শান্তিচুক্তি পরবর্তী পার্বত্য চট্রগ্রামের পরিস্থিতি ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ৪ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ থেকে তিন পার্বত্য জেলার জেলা প্রশাসকদের নিকট ১১ দফা নির্দেশনা সম্বলিত ফ্যাক্স পাঠানোর পর এ তথ্য জানা যায়।

কিন্তু এ নির্দেশনা জারির পর দেশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। দেশের অনেকেই সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি ও তাদের দেশের দেশি-বিদেশি সমর্থক ও পৃষ্ঠপোষকরা এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি কিছু সংস্থা ও ব্যক্তির সমালোচনার মুখে পার্বত্য তিন জেলায় বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি উঠিয়ে নেয় সরকার। ফলে আগের নিয়মেই জেলা প্রশাসকদের অনুমতি নিয়ে পার্বত্য তিন জেলায় বিদেশিরা ভ্রমণ করতে পারছেন। তবে বিদেশি গবেষকদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এই অনুমতির জন্য ২০ দিন আগে আবেদন করতে হবে।

তবে সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রেখে দেশের অখণ্ডতা নিশ্চিত রাখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই প্রজ্ঞাপন বলবৎ রাখার প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য বলেও মনে করছেন অনেকে।

 

Exit mobile version