parbattanews

প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

ফাইল ছবি

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শাপলা কুঁড়ি কঁচিকাঁচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও একজন সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

খোঁড়া অজুহাতে শিশু শিক্ষার্থীদের অমানুষিক নির্যাতন, প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করা, উপবৃত্তির টাকা ঠিকমত না দেওয়া, ভর্তিকালে অবৈধ টাকা আদায়, অভিভাবকদের সাথে অসদাচরণ, টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার ফলাফলে অনিয়ম, পড়া না পারলে টয়লেট পরিস্কার করিয়ে শাস্তি, স্কুলের থালা-বাটি ধোয়ানো ও ঝাড়ু দেয়ার কাজে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারসহ নানা অভিযোগ করা হয়।

অভিযুক্তরা হলেন- স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী রাণী পাল ও সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিম।

মাথা টেপানো, উকুন দেখানো, হাতের আঙ্গুল টানানো, হাতপাখা দিয়ে বাতাস করানোর মতো অভিযোগও রয়েছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সদর উপজেলা কম্পাউন্ডের ভেতরে সরকারি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিভাবে এত অনিয়ম হতে পারে, তা অভিভাবক মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

শামসুন্নাহার বিথী নামক একজন সচেতন অভিভাবক ৩৪টি অভিযোগ বিস্তারিত লিখে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলেন।  অসংখ্য ভুক্তভোগি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের স্বাক্ষরসহ ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডিসির কাছে দেয়া অভিযোগটির সুরাহা এখনো হয়নি। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। যে কারণে তারা দম্ভোক্তি করে বেড়াচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

শামসুন্নাহার বিথী বলেন, ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে নওরিন জান্নাত নিঝুমকে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে যাই। সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিমের মাধ্যমে আমার কাছ থেকে কৌশলে টাকা দাবি করেন প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী রাণী পাল। পরে টাকা না দিলেও ভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে সন্তুষ্ট করি। আমার মতো অনেক অভিভাবক নানা ধরণের হয়রানির শিকার। যদিওবা তারা সন্তানের ভবিষ্যত চিন্তা করে প্রতিবাদ করে না।

ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষার খাতায় কম নাম্বার দিয়ে বেশি নাম্বারের জন্য টাকা আদায়, ক্লাস ঠিক মতো না করিয়ে ১,২,৩ নং ক্রমিকের ছাত্রীদের দিয়ে নাম লেখানো ও সেই নাম ধরে পেটানো, ছাত্রীদের দিয়ে ক্লাস করানো, খাতা দেখানো, কোন অভিযোগ দিলে উল্টো শাসানো, তুচ্ছ অপরাধে বেঞ্চের নীচে মাথা ঢুকিয়ে পেটানো, ছাত্রছাত্রীদের জামা-কাপড় তুলে মারা, পরীক্ষার প্রশ্ন কোচিংয়ে জানিয়ে দেয়া, পরীক্ষা চলাকালে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করে শিক্ষার্থীদের সময় নষ্ট করা, স্কাউট ও বিভিন্ন সরঞ্জামের নামে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নেওয়াসহ আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে।

প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী রাণী পালের স্বামীর বীমা কোম্পানিতে পলিসি খোলতে বাধ্য, সামর্থ না থাকলে ছেলে মেয়েদের স্কুল থেকে বের করে দেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগি শামসুন্নাহার বিথী। যেগুলো তদন্ত করলে সত্যমিথ্যা প্রমাণিত হবে।

ভুক্তভোগি শামসুন্নাহার বিথী বলেন, শুনেছি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযোগকারি হিসেবে তো আমাকে ডাকা হয়নি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, তৎকালীন ইউএনওর নির্দেশে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নেতৃত্বে গঠিত টিম আমাদের ডেকেছিলেন। প্রত্যেকের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন।  তবে, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অপপ্রচার দাবি করেন প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী রাণী পাল।

তিনি বলেন, অভিযোগের পর গঠিত কমিটি আমাদের ডেকেছিলেন। সাক্ষাতকারে আমাদের কথা আমরা বলেছি। অভিভাবকরাও বক্তব্য দিয়েছেন। অভিযোগের এক সপ্তাহ আগেও অভিযোগকারী আমার স্কুলে আসেন। চা-নাস্তা খেয়ে গেছেন। তখনো তো বলেন নি। পরে অভিযোগ কেন? বুঝলাম না। অভিযোগকারীর মেয়ে ৫ম শ্রেণি পাশ করে প্রশংসাপত্র নিয়ে চলে গেছেন। তার স্বামীও আমার স্কুলের ছাত্র ছিল। সমাধান হওয়ার পরও কেন আবার অভিযোগ? দুঃখ প্রধান শিক্ষিকা শিল্পী রাণী পালের।

স্কুলের সভাপতি ইউএনও। সব দেখভাল তিনি করেন। সবাই আমার সম্পর্কে জানেন। উপজেলা প্রশাসনের পেটের ভেতরের একটি স্কুলে অনিয়ম সম্ভব? প্রশ্ন শিল্পী রাণী পালের। প্রয়োজনে অভিযোগকারীর সঙ্গে বসতে তিনি অভিপ্রায় প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার সুইটি বলেন, এটা আগের অভিযোগ। আমি যোগদানের পরে এ সংক্রান্ত কোন বিষয় আমার কাছে আসেনি। কেউ জানায়ও নি। তাই কিছু বলতে পারছি না।

Exit mobile version