parbattanews

প্রবল বর্ষণে লামার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : পাহাড় ধসে শতাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত

unnamed

এম.রহমান, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:
এক মাসের ব্যবধানে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে আবারো বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদী, লামাখালসহ পাহাড়ি ঝিরিগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীর দুই সহস্রাধিক মানুষ।

এছাড়া পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ও পাহাড় ধসে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পাশাপাশি পৌর এলাকাসহ ফাইতং ও আজিজনগর ইউনিয়নে শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় পাহাড় ধসে আহত হয়েছে ৫জন। এ টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এর চেয়েও ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

শনিবার বিকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গ্যাজ রিডার মো. আবু তৈয়ব জানিয়েছেন। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ধসের আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসন, লামা পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ গুলোর পক্ষ থেকে মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দিনগত রাত থেকে মুষুলধারে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। আর এ টানা বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদী, লামাখাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে শনিবার বিকাল নাগাদ লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্ট্যান্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা ও ফাইতং ইউনিয়নের মনিন্দ্র পাড়া প্লাবিত হয়।

এতে হলিচাইল্ড পাবলিক স্কুল, নুনারবিল মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি রয়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে ধস দেখা দেয় বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত পাহাড় গুলোতে। পাহাড় ধসে শনিবার সকালে লামা পৌরসভা এলাকার বড়নুনারবিল পাড়ার রিক্সাচালক নুর উদ্দিন, মধুঝিরি গ্রামের ছকিনা, জাকের ও ফরিদের বসতঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অপরদিকে, ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম জানিয়েছেন, গত তিন দিনের ভারি বর্ষণের কারণে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে ৫০-৬০টি বসতঘরের আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সোনাইছড়ি খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে মনিন্দ্র ত্রিপুরা পাড়া প্লাবিত হয়।

আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজেমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাহাড় ধসে ৫০টি বসতঘর সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় বসতঘরে পাহাড় ধসে পড়ে মিশন পাড়ার নুর আহমদসহ ৫ ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়াও প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে পড়ে ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, ঢলের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যবসায়ী ও পরিবারগুলো তাদের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে কেউ কেউ আবার ক্ষতির সম্মুখিন হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চাষীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। তবে কি পরিমাণ ফসল নষ্ট তা এখনো নিরুপণ করা যায়নি।

পাহাড়ি ঢলে লামা পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে পৌরসভা মেয়র মো. আমির হোসেন বলেন, মাইকিং করে বন্যায় প্লাবিত ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

লামা পৌর এলাকা, ফাইতং ও আজিজনগর ইউনিয়নে পাহাড় ধসে শতাধিক বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ জানান, শনিবার ভোর থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কনট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

Exit mobile version