প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রামগড়ের পাতাছড়ায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রীতি সভা শেষ হওয়া মাত্রই সন্ত্রাসীদের হামলা

Untitled-3

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার ২নং পাতাছাড়া ইউনিয়নের দুর্গম হাজাছড়া এলাকার কর্ণেল বাগানের বিভিন্ন ফলজ গাছ কেটে ফেলা ও স্থানীয় পাহাড়ীদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি বৈঠক শেষ হতে না হতেই বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কর্ণেল বাগানে আবারো পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। এসময় সন্ত্রাসীরা কর্ণেল বাগানের প্রহরীদের অস্ত্রের মুখে বাগান থেকে বের করে দিয়ে আবারো কর্ণেল বাগানের অবশিষ্ট অংশ কাটার খবরে পাতাছড়া এলাকায় আবারো উত্তেজনা তৈরী হয়েছে। এসময় সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বাঙ্গালীদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি প্রদান করে।

সম্প্রীতি বৈঠক শেষে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পাতাছড়া ত্যাগ করা মাত্রই তৃতীয় দফায় বাগানে সন্ত্রাসীদের হামলা ও শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে বের করে দিয়ে সন্ত্রাসীরা বাগানের বিভিন্ন অংশে নির্মিত চারটি ঘর দখল করে সেখান থেকে প্রহরীদের বের করে দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাঙ্গালীরা বিষয়টি সেনাবাহিনীকে অবগত করানো ছাড়াও আত্মরক্ষায় সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাগানের দিকে ছুটে যায়। এসময় তারা অস্ত্রধারী পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করারও চেষ্টা করে বলেন স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে।

এদিকে খবর পেয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা বাগান ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ে অবস্থান নেয়। আর বাঙালীরা বাগান সংলগ্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে। দু’পক্ষের মাঝখানে সেনাবাহিনী অবস্থান নিলেও পাহাড়ীরা বাঙালীদের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও টর্চের আলো ফেলে সংঘর্ষের আহ্বান জানায়। দু’পক্ষের মুখোমুখি অবস্থানে ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বুধবার রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে রামগড় উপজেলা প্রশাসন ও সিন্দুকছড়ি জোনের উদ্যোগে সম্প্রীতি সভা অনষ্ঠিত হয়। রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সম্প্রীতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিন্দুকছড়ি জোনের সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর মুহিব। এছাড়াও পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম আলমগীর, উপজাতীয় নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা, উপজেলা ত্রিপুরা কল্যান সমিতির সভাপতি নবীন ত্রিপুরা, পাতাছড়া ইউপি সদস্য আশুতোষ রোয়াজা, ইউপি মহিলা সদস্যা আনিতা রোয়াজা, অমিত কার্বারী ও যামীনি কার্বারী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বৈঠকে পাতাছড়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো: আবু বক্করসহ স্থানীয় বাঙ্গালী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সম্প্রীতি সভায় উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ এলাকায় সম্প্রীতি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, দুস্কৃতিকারীরা যত শক্তিশালীই হোক তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। উপজাতীয়দের নিরীহ প্রজা হিসেবে উল্লেখ করে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করাসহ এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন।

এদিকে বাঙ্গালী নেতাদের পক্ষ থেকে বারবার সৃজিত বাগানের ফলজ গাছ কেটে ফেলাসহ বাগানের শ্রমিকদের মারধোরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিচারের দাবীসহ ক্ষতিগ্রস্ত বাগানের নিরাপত্তার দাবী জানানো হয়। এসময় এলাকায় নিরীহ পাহাড়ী ও বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে একটি স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানান বক্তারা।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য মেজর মুহিব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনে পাহাড়ী বাঙ্গালীদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তাছাড়া সম্প্রতি হাজাছড়ায় নির্মম ভাবে ফলজবাগান কাটার তীব্র সমালোচনা করেন।

প্রসঙ্গত, মাত্র ছয় দিন পুর্বে গত ১৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নস্থ হাজাছড়া এলাকার চাঁদা না দেয়ায় সৃজিত বাগানের ১৩ হাজার আম ও কলা গাছ কেটে ফেলে উপজাতী সন্ত্রাসীরা। ফলজ গাছ কাটা ছাড়াও সন্ত্রাসীরা বাগানের ৮ হাজার ফুট পানির পাইপ, ১ হাজার লিটারের ২ টি পানির ট্রাংক ও ২ টি জেনারেটর ভাংচুর করে। এতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে বাগান মালিক দাবী করেছেন।

এ হামলার পর পাহাড়ীরা বাঙালীদের দায়ী করে স্থানীয় পর্যায়ে মানববন্ধন করে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে বাঙালীরা মানববন্ধন করার উদ্যোগ নিলে স্থানীয় প্রশাসন বাঙালীদের নিবৃত করে শালিশী মিমাংসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু শালিসী মিমাংসায় কার্যত মৌখিক আশ্বাস ছাড়া কোনো ফলপ্রসু উদ্যোগ না থাকায় বাঙালীরা হতাশ হয়ে পড়ে। এদিকে সালিশ শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবার হামলা হওয়ায় বাঙালীরা আন্দোলনের চিন্তা ভাবনা করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন