parbattanews

প্রায় দুই যুগ পর হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেল পরিবার!

হারিয়ে যাওয়া তাসলিমার সাথে তার পরিবার

কি বলবেন একে, অবিশ্বাস্য? রূপকথার গল্প? লেখাটা পড়ার পর তা আপনি বলতেই পারেন। এ যে কল্পকাহিনীকেও হার মানানো বাস্তব জীবনের এক অবিশ্বাস্য কাহিনী! এ কাহিনী একটি পরিবারের নিরলস, অক্লান্ত চেষ্টার কাহিনী, তাঁর অপরিসীম ধৈর্য্যের কাহিনী, সন্তানের প্রতি পরিবারের অপার ভালবাসার কাহিনী।

তাসলিমার বড় বোন সাজেদা আক্তার সাথী জানান, ১৯৯৫ সালের কথা। তাসলিমার বড় বোন সাজেদা আক্তার সাথীর বয়স ছিল ৭ বছর। আর হারিয়ে যাওয়া তাসলিমা আক্তারের বয়স ছিল ৫ থেকে ৬ বছর। একদিন তাসলিমা এবং সাথী দুইজনই খেলতে খেলতে মাইনী বাজার লঞ্চঘাটে চলে যায়। এমন সময় তাসলিমার ক্ষুধা লাগলে তার বড় বোন সাথী তাকে রেখে খাবারের জন্য দোকানে যায়। তার কাছে টাকা না থাকায় খাবার নিয়ে আসতে দেরি হয়ে যায় সাথীর। ফলে ফিরে এসে তার ছোট বোন তাসলিমাকে খুঁজে পায়নি। এরপর সাথীও প্রায় একমাস নিখোঁজ ছিলেন।

পরে সাথী যার ঘরে আশ্রিত ছিল। তখন মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় সেই ব্যক্তি তার বাবাকে একটি চিরকুট পাঠায়। ঐ চিরকুট পেয়ে বাবা তার এক মেয়ে সাথীকে পেলেও আরেক মেয়ে তাসলিমাকে খুঁজে পায়নি। এরপর গোটা শহর ও তার আশেপাশের এলাকায় মেয়েকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছেন তার বাবা। এমনকি মাইকিংও করা হয়েছিল, কিন্তু তবুও খুঁজে পাওয়া গেল না হারিয়ে যাওয়া তাসলিমাকে। শিশু তাসলিমাকে হারানোর আর্ত্মনাদে বাবা ও মায়ের দু’চোখের অশ্রু ঝরে কাটিয়ে দিল দীর্ঘ ২৪ বছর।

হারিয়ে যাওয়া তাসলিমা আক্তার জানান, যখন তাসলিমার বয়স ৫ থেকে ৬ বছর। তখন লংগদু উপজেলার মাইনীমূখ লঞ্চঘাট থেকে অপরিচিত দুইজন মহিলা প্রলোভন দেখিয়ে তাসলিমাকে নিয়ে যায়। ঐ মহিলারা তাসলিমাকে কাজের মেয়ে হিসেবে কোনো এক বিত্তশালীর বাড়িতে তুলে দেয়। এই বাড়িতে প্রায় ১৬ বছর কাজ করছেন। তাকে সেখানে অনেক শোষণ নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছিল। এই বাড়ির ঠিকানা জানাতে চাইলে তিনি ঠিকানাটি জানাতে অনিচ্ছুক প্রকাশ করেন। এভাবেই কেটে গেল ২৪ বছর তবুও তার পরিবারকে কাছে পাওয়ার আশা হারায়নি তাসলিমা। বর্তমানে তাসলিমা আক্তারের তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ঢাকার গন্ডারিয়া এলাকা বাস করেন বলে তিনি জানান।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নের গুচ্ছ শিবির গ্রামের কেরামত আলী ফরাজীর মেয়ে তিনি।

এদিকে দিন যতই যাচ্ছে তাসলিমা তার পরিবারকে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠছে। তাসলিমা ঢাকা এফ এম ৯০.০৪ রেডিও তে প্রচারিত আর জে কিবরিয়ার পরিচালনায় জীবনের গল্প অনুষ্ঠানে নিয়মিত শ্রোতা ছিলেন। অবশেষে তাসলিমা চিন্তা করলো এই অনুষ্ঠানে যদি তার জীবনের গল্পটি বলে তার পরিবারকে ফিরে পাওয়া যায়, তার এটি বৃথা আশা ছিলো। এর কিছুদিন পর জীবনের গল্প অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হলো তাসলিমার। দিনটি ছিল গত ১৪ নভেম্বর শনিবার। ঐ দিনেই লাখো শ্রোতার মাঝে শুরু করলো তার জীবনের গল্প। তখন ঐ অনুষ্ঠানের শ্রোতা হিসেবে ছিলো তার পরিবারকে চিনে এমন লোকজন। সে সুবাধে ঔ ব্যক্তিগুলো তার এ তথ্যগুলো পরিবারকে জানালো। জানার পর তার পরিবার ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য ঢাকা এফএম ৯০.৪ রেডিও স্টুডিওতে যায়। পরে সেখানে তাসলিমার মা, বোন ও ছোট ভাই বুঝতে পারলো এটাই তাদের ২৪ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছোট মেয়ে তাসলিমা।

তাসলিমার ছোট ভাই শাকিল জানান, অবশেষে গত ২০ নভেম্বর বুধবার প্রায় দুই যুগ পর মা, বোন ও ছোট ভাইয়ের সাথে পুনর্মিলন হয় তাদের হারিয়ে যাওয়া বোন তাসলিমার সাথে। এরপর পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে দেখা হলে কেউই আর নিজেদের আবেগকে সামলে রাখতে পারেননি। অনেকেই এই বিস্ময়কর ঘটনা উদযাপনও করেছেন আনন্দের সাথে। এলাকায়ও বইছে আনন্দের উৎসব। তাকে দেখতে এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত ভীড় জমাচ্ছে বলে তিনি জানান।

Exit mobile version