ফাইতংয়ের তিন ওয়ার্ডে ৩১টি অবৈধ ইটভাটা

fec-image

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের অবৈধ ইট ভাটার নগরী হিসেবে পরিচিত ফাইতং ইউনিয়ন। লামা উপজেলার এই ইউনিয়নে মাত্র তিন ওয়ার্ডে এবারো ৩১টি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চাষের জমি, পাহাড় আর বনাঞ্চল ধ্বংস করেই এ ইট ভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মাঝেমধ্যে জরিমানা করলেও প্রতিবছর দিব্যি অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার মালিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফাইতং ইউনিয়নে প্রবেশ পথে চারপাশের গাছগাছালি প্রাণহীন হয়ে আছে। বিগত বছরের ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালির ক্ষতচিহ্ন বর্ষা মৌসুমে কিছুটা কাটিয়ে উঠলেও সবুজের কোন চিহ্ন নেই।

এই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শিবাতলীপাড়া, মংবাচিংপাড়া ও মে অংপাড়া এলাকায় নয়টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। চলতি মৌসুমের জন্য এ সব ইটভাটার আশপাশে পাহাড় কাটতে দেখা যায়। পার্শ্ববর্তী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লাম্বাশিয়া, বড়খোলা, পুরোনো হেডম্যানপাড়ায় ১৫টি এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মানিকপুরে ৭টি ইটভাটা তৈরি হয়েছে।

এ সব ইটভাটা স্কুলের নিকটে, জনবসতি গ্রামের ভিতর, খালের তীরে ও সড়কের ধারে গড়ে উঠেছে। এলাকার লোকজন জানান, ফাইতং ইউনিয়নে কৃষিজমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এলাকার পরিবেশের ভারসাম্যও মারাত্মক হুমকির মুখে।

ইউনিয়নটির কতটুকু জমি ইটভাটার দখলে রয়েছে জানতে চাইলে ফাইতং মৌজার হেডম্যান উস্রামং মারমা বলেন, শুধু ফাইতং মৌজা নিয়ে গঠিত ফাইতং ইউনিয়নের মোট জমি ১৬ হাজার ২০৫ একর। ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৪০১ একর। এই তিন ওয়ার্ডের ১০ ভাগের ১ ভাগ জমি ৩১টি ইটভাটার দখলে রয়েছে। এই এলাকায় এখন চাষাবাদ করারও কোনো জমি নেই। তিন ওয়ার্ডের জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ বহিরাগত শ্রমিক ইটভাটায় কাজ করেন।

ফাইতং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শোয়ে ম্রা অং মারমা বলেছেন, ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তর লামার ইটভাটাকে প্রায় ২৭ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। তবে কোনো ইটভাটাই বন্ধ করা হয়নি। এ জন্য বর্ষা শেষে ইট পোড়ানোর মৌসুমের শুরুতে ইটভাটাগুলো আবারও ইট তৈরির কাজ শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইটভাটাগুলোতে এখন চলছে ইট তৈরির প্রস্তুতি। পাহাড় কেটে আনা হচ্ছে মাটি। বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে কাঠ। এবিসি ব্রিকস নামের একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হক বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে ইটভাটাগুলোর চুল্লি জ্বালানো হবে। ইট তৈরির জন্য মাটি কাটা, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহসহ অন্যান্য কাজ করা হচ্ছে। ফাইতংয়ের বনাঞ্চলে গাছ শেষ হওয়ায় চকরিয়া, ফাসিয়াখালী, বানিয়ারছড়াসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঠ আনা হচ্ছে।

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, একটি ইটভাটায় ছয় লাখ ইট পোড়াতে ছয় হাজার মণ জ্বালানি কাঠের প্রয়োজন। সেই হিসাবে ফাইতংয়ের ৩১টি ইটভাটায় প্রতিবছর ১৮ কোটি ৬০ লাখ ইট পোড়াতে ১৮ লাখ ৬০ হাজার মণ বা ৭৪ হাজার ৪০০ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল আহমদ নিজেও ইটভাটার মালিক। তিনি বলেছেন, তাঁর নিজেরসহ ৩১টি ইটভাটার একটিতেও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই। তবে মালিকেরা সবাই মূল্য সংযোজন কর, আয়কর দেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়। ভ্যাট ও আয়কর দেওয়ায় এ সব ইটভাটাকে পুরোপুরি অবৈধও বলা যাবে না।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ১৪ অক্টোবর ফাইতংয়ের সব অবৈধ ইটভাটাকে জরিমানা করা হয়েছে। ইটভাটা বন্ধে বাধ্য করতেই মালিকদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে-জান্নাত রুমি বলেছেন, ফাইতংয়ের ইটভাটাগুলো শুধু স্থানীয়দের দুর্দশা নয়, প্রশাসনেরও গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বন্ধ করলে মালিকেরা আদালতে যেতে পারেন। এ জন্য নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে মালিকেরা নিজেরাই ইটভাটাগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন