parbattanews

ফিরে দেখা: মাটিরাঙ্গার উন্নয়ন মেলা ‘শান্তি-সম্প্রীতির’ মেল বন্ধন

12.01.2017_Matiranga Unnayon Mela NEWS Pic

নিজস্ব প্রতিবেদক :

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশে একযোগে পালিত হয়েছে ‘উন্নয়ন মেলা-২০১৭’। সারাদেশের ন্যায় পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বৃহত পরিসরে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলা বিগত সময়ে বাস্তবায়িত সরকারের অর্জন ও বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য ও চিত্র প্রদর্শনের পাশাপাশি শান্তি-সম্প্রীতির মেল বন্ধনে পরিনত হয়। তিন দিনব্যাপী মেলাকে ঘিরে ছিল উৎসুক জনতার ভীড়। সকাল থেকে রাত অবধি বিভিন্ন বয়সী মানুষের  সরব উপস্থিতি মেলা আয়োজনকে পুর্ণতা দিয়েছে বলে মনে করেন মেলা আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আনোয়ারুল হক।

মেলার প্রথম দিনেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে মেলা মাঠের প্রবেশমুখে ফিতা কেটে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলার উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাহাড়ের অবারিত উন্নয়কে যারা অস্বীকার করছে তাদেরকে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের দলভুক্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মানে সকলকে সাথে নিয়ে করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ৪৩টি স্টল সহ ৬৩টি স্টল নিয়ে শুরু হওয়া এ মেলা মাটিরাঙ্গার মানুষের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন মেলায় আগতদের অনেকইে।

 মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রশাসনের বিভাগীয় প্রধান, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক-সাংবাদিক ও এনজিও কর্মীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ সাফল্য ও নাগরিক সেবার উদ্ভাবনসহ এমডিজি অর্জন ও এসডিজি বাস্তবায়ন শীর্ষক সেমিনার। সরকারের এমডিজি অর্জন ও এসডিজি বাস্তবায়ন শীর্ষক এ সেমিনারের মাধ্যমে না জানা অনেক তথ্য জানার সুযোগ তৈরী করেছে বলে মনে করেন, সেমিনারে অংশ নেয়া মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএম জাহাঙ্গীর আলম ও মাটিরাঙ্গা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হিরনজয় ত্রিপুরা। তাদের মতে এমন সেমিনার সরকারের কর্মকাণ্ডকে অনেকদুর এগিয়ে নেয়াসহ জনগণের জানার পথকে সুগম করবে।

সরকারের এ উন্নয়ন মেলাকে শুধুমাত্র তথ্য নির্ভর স্টলের মধ্যে না রেখে বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে মেলা আয়োজন কমিটি বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরে জন্য আয়োজন করে ‘চিত্রাঙ্কণ, রচনা ও ক্যুইজ’ প্রতিযোগিতার। মেলার দ্বিতীয় দিনে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ মেলার আয়োজন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের মাঝে সরকারের গৃহিত ও বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেই মনে করেন মেলা আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান।

বর্তমান সরকারের মেয়াদে মাটিরঙ্গা উপজেলায় বাস্তবায়িত ইনেভেশন কার্যক্রমকে জনগণের মাঝে তুলে ধরতে মেলার তৃতীয় দিনে আয়োজন করা হয় ‘ইনোভেশন সেমিনার’। সেমিনারে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাটিরঙ্গা উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আসাদুজ্জামান। মানুষকে সহজে জানার সুযোগ করে দিতেই এমন সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ইনোভেশন সেমিনারে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম মিয়া ও মাটিরাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি এমএম জাহাঙ্গীর আলম আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

মেলার তৃতীয় দিনে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় ব্যতিক্রমী আয়োজন জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী ‘শান্তি সম্মেলন’। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস বিরোধী শান্তি সম্মেলনে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবুল আমিন প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সারাদেশের উন্নয়ণ মেলা যেখানে তথ্য ও চিত্র প্রদর্শনীর মধ্যে সিমাবদ্ধ ছিল সেখানে মাটিরাঙ্গায় ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে এমন ব্যাতিক্রমী আয়োজন মেলাকে নতুন রূপ দিয়েছে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব আলহাজ হাফেজ মাওলানা. হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, মেলা বলতেই যেখানে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি সেখানে এমন পরিচ্ছন্ন আর বিষয় ভিত্তিকআয়োজন মেলাকে প্রাণবন্ত করেছে। শান্তি সম্মেলন মানুষে মানুষে ভাতৃত্ববোধকে জাগ্রত করেছে বলে মনে করেন মাটিরাঙ্গা সার্বজনীন গৌতম বৌদ্ধ বিহারের বিহার অধ্যক্ষ মঙ্গলজ্যোতি ভিক্ষু। তার মতে প্রতিটি মেলাতেই এমন আয়োজন থাকা উচিত।

সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে মেলার তৃতীয় দিনের অন্যতম আয়োজন ছিল ‘উন্নয়ন বির্তক’। ‘তথ্যপ্রযুক্তিই বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের মুল চাবিকাঠি’ শীর্ষক উন্নয়ন বিতর্কে মাটিরাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ ও গুইমারা কলেজের মধ্যে প্রাণবন্ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। মাটিরাঙ্গা ডিগ্রী কলেজককে হারিয়ে গুইমারা কলেজ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বিতর্কে গুইমারা কলেজ দলের দলনেতা তমা বড়ুয়া শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হয়।

প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে কম্বল বিতরনের মাধ্যমে মানবিক দায়িত্ব পালন করেছে মাটিরাঙ্গা ডিগ্রী কলেজ ও গুইমারা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা মেলার তৃতীয় দিনে মেলা মাঠে দুই শতাধিক প্রতিবন্ধী মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয় উষ্ণ কম্বল। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কম্বল বিতরনের মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে মানবিক দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বলেন, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান।

মেলাকে শুধুমাত্র সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধ না রেখে মেলায় আগতদের জন্য প্রতিদিনই মেলা মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। যেখানে মাটিরাঙ্গা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর সঙ্গীত পরিবেশন করে। এছাড়ও শিশু-কিশোরদেরদের জন্য ছিল আকর্ষনীয় নাগরদোলা ও ট্রেন রাইড। ছিল মৃত্যুকুপে প্রাইভেট কার ও মোটর সাইকেল রেইচ।

পুরস্কার বিতরনীসহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে মাটিরাঙ্গায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘উন্নয়ন মেলা’র। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেযারম্যান কংজরী চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার সমাপ্তি ঘোষনাসহ পুরস্কার বিতরণ করেন। মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মাটিরাঙ্গা জোন অধিনাযক লে. কর্ণেল কাজী মো. শামশের উদ্দিন, পিএসসি ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শামছুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেযারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামগ্রিক উন্নয়নের কথা সবাই জানে, আর জানেনা তারা, যারা জানতে চায়না। চোখ বন্ধ করে তাকালে কিছু দেখা যাবেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চোখ খুলে দেখুন, সব পরিস্কার হয়ে যাবে। সত্যকে মেনে নেয়ার মানসিকতা সৃষ্টির পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের জানার আগ্রহ আমাদের এ আয়োজনকে স্বার্থক করেছে।

এদিকে একটি স্বার্থক মেলা আয়োজনে প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিয়ে মাটিরাঙ্গা জোন অধিনাযক লে. কর্ণেল কাজী মো. শামশের উদ্দিন, পিএসসি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গুলোকে জনগণের আরও সামনে নিয়ে আসতে হবে। আর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরই সে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

পরে তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন মেলায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী এবং মেলায় অংশ গ্রহণকারী স্টলগুলোর মধ্যে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার, সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

Exit mobile version