ফেতনার যুগে ঈমান রক্ষার পাঁচ উপায়

fec-image

ইরবাজ বিন সারিয়া (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এমন ওয়াজ করলেন যে তাতে অন্তরগুলো ভীত-সন্ত্রস্ত হলো, চক্ষুগুলো অশ্রুসিক্ত হলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, মনে হচ্ছে এটি বিদায়ি উপদেশ। তাই আমাদের কিছু উপদেশ দিন। তিনি বললেন, আমি তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি তাকওয়া তথা আল্লাহভীতির এবং নেতার কথা শোনা ও তার আনুগত্য করার, যদিও একজন কৃতদাস তোমাদের নেতৃত্ব দেয়।

নিঃসন্দেহে তোমাদের মধ্য থেকে যে আমার পর জীবিত থাকবে অচিরেই সে অনেক মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। দ্বিনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভব করা থেকে তোমরা বিরত থাকবে।

কেননা প্রত্যেক নব-উদ্ভাবিত বিষয় ভ্রষ্টতা। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, ‘তোমরা উহা মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে।’ এ কথার অর্থ সুন্নতকে তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে, তা নিয়ে গবেষণা করবে, তার প্রতি সর্বদা আমল করবে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে, যেমন করে হারিয়ে বা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে কোনো ব্যক্তি কোনো জিনিসকে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে থাকে। (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব, হাদিস : ৩৭)

হাদিস বিশারদরা বলেন, আলোচ্য হাদিসে মহানবী (সা.) ফেতনার যুগে ঈমান ও ইসলাম রক্ষার উপায় বর্ণনা করেছেন।

এ ক্ষেত্রে তিনি পাঁচ বিষয় উল্লেখ করেছেন। তা হলো,

১. আল্লাহভীতি অর্জন করা : কেননা আল্লাহভীতি একজন মানুষ যাবতীয় পাপাচার থেকে রক্ষা করে এবং আল্লাহর আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কোরো। নিশ্চয়ই সর্বোত্তম পাথেয় আল্লাহভীতি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)

২. নেতার আনুগত্য করা : ধর্মীয় নেতৃত্ব দানকারী আলেমদের পাশাপাশি রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দানকারীরা যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হয়, তবে তাদেরও আনুগত্য করতে হবে।

এমনকি নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিকে কোনো কারণে অপছন্দ করলেও তার অবাধ্য হওয়া যাবে না।
৩. বিবাদ-বিভক্তি পরিহার করা : মুসলমানের দায়িত্ব হলো বিবাদ বিভক্তি পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ থাকা। বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠায় দ্বিনি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

৪. কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করা : কেননা হাদিসের ভাষ্যমতে ব্যক্তি যতক্ষণ কোরআন ও সুন্নাহর ওপর অটল থাকবে, ততক্ষণ সে সত্যচ্যুত হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘তোমাদের মাঝে দুটি বিষয় ছেড়ে গেলাম। যত দিন তা আঁকড়ে ধরে রাখবে, তত দিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নত।’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ৩)

৫. খোলাফায়ে রাশেদার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা : ইসলামের প্রধান চার খলিফা আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন ও রাসুলের আনুগত্যে যে পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন, তা মেনে চলা মুসলমানের দায়িত্ব। তাদের অনুসৃত পথেই পরবর্তীদের সাফল্য নিহিত।

৬. বিদআত পরিহার করা : বিদআতের খোলস চমৎকার হলেও তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়ংকর। কেননা বিদআত মূলত মানুষের নফসানিয়্যাতের (প্রবৃত্তিপূজার) ফসল। আর দ্বিন হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের নাম। তাই সর্বাবস্থায় বিদআত পরিহার করা আবশ্যক। আল্লাহ সবার ঈমান-আমল রক্ষা করুন। আমিন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন