parbattanews

ফেনী নদীর মাঝখানে কূপ খনন করে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নিতে চায় ভারত

সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর মাঝখানে ইনটেক ওয়েলে বা কূপ খনন করে পাইপের মাধ্যমে সমঝোতার ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলন করে নিতে চাচ্ছে ভারত। জল প্রবাহের ভারতীয় অংশে না করে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে কূপ খননের প্রস্তাবনার বিষয়ে প্রকৌশলগত যর্থাথতা খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) একটি প্রতিনিধিদল শীঘ্রই ফেনী নদী পরিদর্শনে আসছেন বলে র্নিভরযোগ্যসূত্রে জানাগেছে।

এদিকে, প্রায় ৩৬টি পাম্প বসিয়ে ফেনীনদী থেকে অবৈধভাবে ভারতের পানি প্রত্যাহারের বিষয় সুরাহার আগে সমঝোতার ১.৮২ কিউসেক পানি দেয়ার ব্যাপারে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা যায়, আশির দশকের পর বিভিন্ন সময়ে ভারত ত্রিপুরার সাবরুমের নানা স্থানে আর্ন্তজাতিক সীমান্ত আইন লংঘন করে শূণ্য রেখা হতে দেড়শ গজের মধ্যে প্রায় ৩৬টি শক্তিশালি পাম্প মেশিন বসিয়ে ফেনীনদী থেকে একতরফাভাবে পানি তুলে নিচ্ছে।

এ পাম্পগুলোর প্রতিটির ন্যূনতম ক্ষমতা দুই কিউসেক। এ হিসেবে ৩৬ টি পাম্প মেশিনে চুক্তি ছাড়াই ৭২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে তারা। যৌথ নদী কমিশন ( জে আরসি) সূত্রে যানা যায়, ২০১০ সালে যৌথ নদী কমিশনের ৩৭ তম বৈঠকে সাবরুম শহরের মানুষের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ১.৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের সিদ্ধান্ত ছিল।

২০১২ সালে কারিগরি কমিটির বৈঠকে ৭টি শর্তসাপেক্ষে খাবার পানি সরবরাহের জন্য ‘লো লিফ্ট’ পাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০১৯ সালের আগষ্টে ঢাকায় সচিব পর্যায়ে বৈঠকে বাংলাদেশ এ প্রতিশ্রুতি রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে। এরই ধারাবাহিকতায় ঐবছরের ৫ অক্টোবর ভারতে শীর্ষ বৈঠকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নেয়ার বিষয়ে একটি যৌথ সমঝোতা স্মারক সই হয়।

জানা যায়, সমঝোতা অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ১.৮২ কিউসেক পানি তুলবে ভারত যার পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে ৫২ লিটার এবং দিনে প্রায় ৪৫ লাখ লিটার। সূত্র জানায়, ৭টি শর্তে ভারতকে ১.৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের সম্মতি দেয়া হয়েছে। শর্তের মধ্যে রয়েছে লঞ্চিং অ্যাপ্রোচ (পাইপ) এর প্রশস্ততা ৭.৬৫ মিটারের পরিবর্তে ৪.৫ মিটার হবে। পাম্পের বৈশিষ্ট্য চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশে সরবরাহ করতে হবে। ফেনী নদী হতে পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১.৮২ কিউসেকের বেশি হবে না, যা উভয় দেশের প্রকৌশলীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। বাস্তবায়নের পর উভয় দেশের প্রকৌশলীদের দ্বারা পাম্পের সক্ষমতা যাচাই করা হবে।

ত্রিপুরার সাবরুম শহরে ১.৮২ কিউসেক পানি সরবরাহ পাইপ একটির বেশি হবে না। ইনটেক ওয়েলের (কূপ) অবস্থান যৌথভাবে উভয় দেশের প্রধান প্রকৌশলীগণ নির্ধারণ করবেন। ইনটেক ওয়েলের বিপরীতে ফেনী নদীর বাংলাদেশের দিকে ভাঙন দেখা দিলে ভারতীয় পক্ষ উক্ত অংশের নদী তীর সংরক্ষণমূলক কাজ বাস্তবায়ন করবে। এদিকে, সমঝোতার ১.৮২ কিউসেক পানি তুলে নিতে নদীর জলপ্রবাহের ভারতীয় অংশে ইনটেক ওয়েল (কূপ) খনন না করে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে করতে চাচ্ছে ভারত।

জানা যায়, রামগড় সাবরুম সীমান্তে মৈত্রী সেতু সংলগ্নে তারা এ কূপ করতে চাচ্ছে। ভারতের এ প্রস্তাবনা খতিয়ে দেখতে গত শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পনি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল) মো. রমজান আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল রামগড় সীমান্তের মৈত্রী সেতু সংলগ্ন ফেনী নদীর অংশ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন।

ভারতের আগ্রহ অনুযায়ি নদীর মাঝখানে কূপ হলে বাংলাদেশ অংশে কোন ক্ষতি হবে কি না এসব বিষয় খতিয়ে দেখেন। প্রতিনিধিদলে পাউবো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী(নকশা) জীবন কুমার বিশ্বাস, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক নব কুমার চৌধুরি, চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক-২ নাহিদুজ্জামান খান, জেআরসি’র নির্বাহি প্রকৌশলী আনোয়ার কাদির ও রামগড়ের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা র্নিবাহি অফিসার (ইউএনও) উম্মে হাবিবা মজুমদারসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, প্রাথমিক ধারণা নেয়ার জন্যই এ প্রতিনিধিদল সরেজমিনে পর্যবেক্ষন করে গেছেন। কিছুদিনের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল পুনরায় স্থানটি পরিদর্শনে আসবে। সমঝোতা স্মারকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ি দুদেশের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা যৌথভাবে ইনটেক ওয়েলের(কূপ) স্থান চূড়ান্ত করবে।

রামগড়ের ভারপ্রাপ্ত ইউএনও উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, প্রতিনিধিদলটি নদীর বর্তমান পানি প্রবাহ, ইনটেক ওয়েল (কূপ) খননের সম্ভাব্য স্থান পর্যবেক্ষন করেন। তিনি বলেন, এটা ছিল প্রাক পর্যবেক্ষন। চূড়ান্ত স্থান নির্ধারণ করার জন্য সপ্তাহ খানের মধ্যে জেআরসি’র উচ্চ পযায়ের একটি প্রতিনিধিদল রামগড়ে আসবেন।

Exit mobile version