ফের উত্তপ্ত পাহাড়: মে মাসে হতাহত ১৮

নিজস্ব প্রতিনিধি, রাঙামাটি:

থামছেই না পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের খুন আর পাল্টা খুনের মহড়া। একের পর এক হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় পাহাড় ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। চলতি মে মাসে রাঙামাটিতে ৯টি হত্যাকাণ্ড এবং ৯ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে।

এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদা আদায়, এলাকা নিয়ন্ত্রণ এবং সামনে জাতীয় নির্বাচনে নিজেদের শক্তি জানান দিতে একের পর এক এই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো।

এদিকে সোমবার (২৮ মে) ভোরে রাঙ্গামাটি’র বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের ব্রাশ ফায়ারে ‘ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট’ (ইউপিডিএফ-প্রসিত গ্রুপ)’র তিনজন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। এ সময় তাদের এক কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, নিহতরা হলেন- সাজেক এলাকার সুগোরচুগো চাকমা ওরফে স্মৃতি (৫০), ঝগড়াবিল এলাকার অটল চাকমা (৩০) ও সঞ্জীব চাকমা (৩০)। আহত ইউপিডিএফ কর্মীর নাম কানন চাকমা। নিহতদের মধ্যে সঞ্জিব চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সদস্য।

পুলিশ ও ইউ.পি.ডিএফ’র বাঘাইছড়ি-সাজেক ইউনিটের পরিচালক জুয়েল চাকমা জানিয়েছেন, সোমবার (২৮ মে) ভোর ৫টার দিকে সাজেক ইউনিয়নের গঙ্গারাম করল্যাছড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে অবস্থানরত ইউপিডিএফ’র চার নেতা-কর্মীর উপর ব্রাশ ফায়ার করে গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ (বর্মা গ্রুপ) এবং জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা গ্রুপ)’র ক্যাডাররা। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজনের মৃত্যু হয়। প্রতিপক্ষের ব্রাশ ফায়ারে একজন আহত হয়। তার নাম কানন চাকমা।

সন্ত্রাসী এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইউপিডিএফ’র প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিরণ চাকমা স্বাক্ষরিত সোমবার দুপুরে গণমাধ্যমে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ইউপিডিএফ। বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার জন্য তারা জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা গ্রুপ) এবং গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ (বর্মা গ্রুপ) কে দায়ী করেছে।

এ বিষয়ে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা জেএসএস সংস্কার (এমএন লারমা গ্রুপ) এবং গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফকে (বর্মা গ্রুপ) দায়ী করে বলেন, আমাদের নেতা-কর্মী হত্যা করে ইউপিডিএফ-কে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। জন্মলগ্ন থেকেই ইউপিডিএফ’র উপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। কিন্তু কোন অপশক্তিই ইউপিডিএফ’র অগ্রযাত্রাকে রোধ করতে পারেনি। ইউপিডিএফ ভবিষ্যতেও সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে।

এ সময় তিনি হামলাকারী সংগঠন গুলোর নেতা পেলে, সুদর্শন ও অংশুমানকে চক্রান্তের খপ্পর থেকে বেরিয়ে এসে সংগ্রামী জনতার কাতারে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।’

এদিকে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে গণতান্ত্রিক ইউ.পি.ডি.এফ (বর্মা গ্রুপ)’র মুখপাত্র লিটন চাকমা বলেন, ‘আমরা এমন জঘন্য ঘটনার সাথে কোন ভাবেই জড়িত নই’।

একই বিষয়ে জেএসএস সংস্কার’র (এমএন লারমা গ্রুপ) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরাও সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে বলেন, ‘ইউপিডিএফ গত ৬ মাস ধরে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর যে নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে আজকের ঘটনা তাদের কর্মের ফল। আমাদের কর্মীরা কাউকে প্রত্যাঘাত করেনি’।

সাজেক থানার ওসি নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘এলাকায় বর্তমানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকা চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে।’

উল্লেখ্য, গত ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিহত হন প্রতিপক্ষের ব্রাশ ফায়ারে। আহত হয় তার দেহরক্ষি। গত ৫ মে তার দাহক্রিয়ায় যোগদান করতে আসার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক বাঙ্গালী গাড়ী চালকসহ গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফ’র ৫ শীর্ষ নেতা-কর্মী নিহত হয় এবং আহত হয় ১০ জন। ২৮ মে’র সাজেক’র ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ১ জন আহত হয়।

পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর হানাহানিতে চলতি মাসে সর্বমোট ৯ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়েছে। এতে বর্তমানে পার্বত্য এলাকায় বলতে গেলে উত্তপ্ত অবস্থাই বিরাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন