ফের রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা

fec-image

মিয়ানমার থেকে নতুন করে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গাদের ঢল নামার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান সংঘাতের বাহানায় মিয়ানমার কৌশলে রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বিতাড়িত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রামের রোহিঙ্গাদের এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে করে আবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সংঘাতের বিষয়ে নজর রাখা বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বিষয়ে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না গেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে নতুন করে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা বিতাড়িত হবে। আর এসব রোহিঙ্গার বেশিরভাগেরই গন্তব্য হবে বাংলাদেশ। এতে নতুন করে বাংলাদেশকে আরও সংকটে পড়তে হবে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইনের মংডুতে মিয়ানমারের ৯ হাজার সেনা সদস্য অবস্থান করছে। রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্য এলাকাগুলোতেও বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। তারা আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরইমধ্যে ১৩ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে মংডুতে রোহিঙ্গাদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বুচিডংয়ে রোহিঙ্গারা রাস্তায় বের হলে সেনা ও বিজিপি সদস্যদের মারধরের শিকার হচ্ছে। জোর করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

মংডুতে বসবাসরত কয়েকজন রোহিঙ্গা মোবাইল ফোনে অভিযোগ করে বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধের বাহনা করে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে চাইছে মিয়ানমার। সেনা সদস্যরা তাদের এলাকাগুলো একে একে ঘিরে ফেলছে। ফেরিসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এলাকা না ছাড়লে ২০১৭ সালের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে বলেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা বাংলাদেশে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কক্সবাজার ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গা নেতারাও একই কথা বলছেন। তারা জানান, স্বজনদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। এদিকে, সম্প্রতি শতাধিক রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ থেকে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আশ্রয় নিচ্ছে। মিয়ানমার থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা আসলে উখিয়াবাসীর আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, রোহিঙ্গারা ইয়াবা ব্যবসা, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাস, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে স্থানীয়দের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। আমরা স্থানীয়রা বিপদে আছি, আমরা কোথায় যাব। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সিলগালা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‌রোহিঙ্গারা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ পেলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। দেশটাই হুমকির মুখে পড়বে। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ বিষয়ে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানানো। আর যা যা করা প্রয়োজন তা সবই দ্রুত করা উচিত।

যুদ্ধের বাহানায় মিয়ানমার আরও রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করার অপচেষ্টা করছে-এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে যা হচ্ছে-সে ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর রাখছি। নতুন করে একজন রোহিঙ্গাও যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আর কোনো রোহিঙ্গাকে দেশে ঢুকতে দেব না। আরও রোহিঙ্গার বোঝা বহন করা সম্ভব নয় উলে­খ করে তিনি বলেন, সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ইতোমধ্যে দুদফা তলব করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিজিবি সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের ওপরে নজর রাখা হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। যুগান্তর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজার, ঢলের আশঙ্কা, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন