ফের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করতে পারে: ভারতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয়

ডেস্ক নিউজ:
নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে সমঝোতার আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। এতে সেনাবাহিনী ফের ক্ষমতা দখর করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ভারতীয় দৈনিক বিজনেস স্ট্যান্ডার্স।

বৃহস্পতিবার পত্রিকাটি তাঁর অনলাইন ভার্সনের সম্পাদকীয়তে জানায়, যদি এমনটা হয় যে সহিংসতা কেবল বেড়েই যাচ্ছে, তাহলে দেশটির ক্ষমতায় উর্দি পরা লোকেরা হস্তক্ষেপ করতে পারে। আর যদি সেনাবাহিনী ফের ক্ষমতা দখল করে, জানুয়ারির ভেতরে তারা ব্যারাকে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।

পত্রিকাটি জানায়, নিজেদের ক্রমাগত ভুল পদক্ষেপের জন্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অংশত হ্রাস পাচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করার পর দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলোও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

মানবাধিকারকর্মী ও পর্যবেক্ষকদের বরাতে ব্যবসা-বাণিজ্যভিত্তিক পত্রিকাটি আরও জানায়, নানা অনিয়মের ভেতর দিয়ে এই বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিরোধী দল বিএনপি ও জামায়াতের অভিযোগ, ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন ছাড়া এই ট্রাইব্যুনাল ভিন্ন কিছু করছে না। বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন সদস্যের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছে এই আদালত। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া চলছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিও কমে গেছে।

ভারতের প্রায় তেরটি রাজ্য থেকে প্রকাশিত হয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্স পত্রিকা। মূলত ভারত ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে গুরুত্ব দেয় এই দৈনিকটি। ভারতজুড়ে এক হাজার শহরের পাঠকদের কাছে পৌছায় এই পত্রিকা। বাংলাদেশের বাণিজ্য নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি।

দুর্বল কাজের পরিবেশের কারণে বাংলাদেশের দুই হাজার দুইশ’ কোটি ডলারের পোশাক খাতে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। অথচ রপ্তানিতে আশিভাগ অবদান রাখে এই খাত। হরতালে কারখানা উৎপাদন হচ্ছে না, রপ্তানি আয়ও পড়ে গেছে, জানায় বিজনেস স্ট্যান্ডার্স।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপোড়েন তৈরি হতে পারে বলে এমন আশংকার কথা বলে এই পত্রিকা জানায়, জনমত জরিপ বিএনপির পক্ষে, তারাই ফের ক্ষমতায় যাচ্ছে বলে ধরে নেয়া হয়। অথচ দলটির বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থের প্রতিকূলে। ভারতবিরোধী বিষয় আশয়ের সাথে দলটির ঐক্য। বিপরীতে গেলো পাঁচ বছরের আওয়ামী শাসনের অধীনে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য বেড়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি বলেছে, উপমহাদেশে ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য হয়েছে পাঁচশ কোটি ডলার। গেলো পাচ বছরে সীমান্ত হাট, মুদ্রা বিনিময়ের সুযোগ ও পরিবহণ যোগাযোগও বেড়েছে। বাণিজ্য ও ট্রানজিট ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। যাতে করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নতুন কর্মস্থল সৃষ্টি করেছে।

তবে আন্ত:নদী পানির অংশিদারিত্ব, সীমান্ত চুক্তিসহ বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে মিমাংসায় না পৌছানোয় বাংলাদেশে ভারতপন্থী আওয়ামী লীগ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। যেটাকে দূর্ভাগ্য হিসাবে উল্লেখ করেছে ওই পত্রিকা।

পত্রিকাটি জানায়, ভারত আওয়ামী লীগের সমর্থনকে দুর্বল করতে সহায়তা করেছে। বিশেষ করে বেশকিছু দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদিতে সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আন্ত:নদী পানির অংশিদারিত্ব এখন বিতর্কিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজ্যর সরকারের আপত্তিতে ছিটমহলের বিনিময় ও সীমান্ত চুক্তি-২০১১ ঝুলে আছে। বছরের পর বছর ধরে সীমান্ত হত্যাকাণ্ড চলছে। দেখামাত্রই গুলি-বিএসএফের এই নীতির কারণে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে বাংলাদেশে।

কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখার দায়ে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যকে খালাস করে দেয়া হয়েছে। যা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব কারণে খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় চলে আসতে পারেন। তখন মৌলবাদীদের চাপে ভারতবিরোধী নীতি গ্রহণে বাধ্য হতে পারেন তিনি।

সূত্র: টাইমনিউজবিডি ও বিডিটুডে
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন