ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না রাঙামাটির কাঁঠাল চাষীরা

p...1

 নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি

বাংলা সালের প্রথম মাস বৈশাখের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাঙামাটির বাজারে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল আসতে শুরু করেছে। হাট-বাজারগুলো এখন কাঁঠালের মৌ-মৌ সুগন্ধে ভরপুর। প্রতিদিন বোট ভরে বাগান চাষী কাঁঠাল বাজারে নিয়ে আসছে। পাইকারের হাত ঘুরে এসব ফল চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু চাওয়া পাওয়ার জটিল হিসাব-নিকাশে কাঁঠালের দাম নিয়ে পরস্পর বিরোধী অভিযোগ তুলেছেন, ক্রেতা-বিক্রেতা ও মধ্যস্বত্ত্বভুগী পাইকারেরা।

বাগান চাষী ও বিক্রেতারা অভিযোগ  করেছেন, তারা কাঁঠালের ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না, পক্ষান্তরে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন স্থানীয় ফল হিসেবে যে দামে তাদের কাঁঠাল পাওয়ার কথা, তার চেয়ে অনেক চড়া দাম দিয়েও তারা সুবিধামতো কাঁঠাল কিনতে পারছেন না।

ক্রেতাদের অভিযোগ, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে কৃষকের কাঁঠাল বাজারে নামার আগেই তাদের কব্জায় চলে যাচ্ছে। এতে স্থানীয় বাজারে কাঁঠাল সহজভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, ফড়িয়া পাইকারেরা কৃষকদেরও ন্যায্য দাম দিচ্ছে না, আবার স্থানীয় ভোক্তাদের কাঁঠাল প্রাপ্তিও বাধাগ্রস্থ করছে, মাঝখান থেকে টু-পাইস কামিয়ে তারা বগল বাজাচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ বা তদারকির জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ না থাকায় ফলের বাজারে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

এ বছর রাঙামাটিতে কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। শহরের ট্রাক টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন কাঁঠাল বোঝাই প্রচুর গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাক টার্মিনাল কর্তৃপক্ষের হিসাব মতে, প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০টি কাঁঠাল বোঝাই গাড়ি রাঙামাটি শহর ছেড়ে যাচ্ছে। তবে প্রচুর উৎপাদনের পরও কাঁঠাল বাগান হতে বাজারে নিয়ে আসার জন্য বাগান চাষী পরিবহন খরচ ও বিভিন্ন ধরনের টোল পরিশোধসহ অন্যান্য খরচের কারণে কাঁঠালের পিছনে যে ব্যয় হচ্ছে সে হিসেবে তারা কাঁঠালের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাঙামাটি কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটিতে এবছর ২৭৫৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে (এই হিসাব পূর্বের সৃজিত অনুপাতে)। হেক্টর প্রতি ২৭ টন কাঁঠাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এবছর প্রায় ৭৪,৩৮৫টন কাঁঠাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানায় তারা। রাঙামাটি জেলার সকল উপজেলাতেই কাঁঠাল ভালো উৎপাদন হলেও নানিয়ারচর ও বুড়িঘাট এলাকায় কাঁঠালের উৎপাদন বেশি হয় বলে জানিয়েছে কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের এক হিসবে জানা গেছে ফলের মৌসুমের তিন মাসে রাঙামাটি জেলা থেকে শুধুমাত্র জাতীয় ফল কাঁঠাল ক্রয় বিক্রয়ে অন্তত ১৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়।

রাঙামাটি মৌসুমি পণ্য ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবুল কাশেম জানান, এবছর প্রচুর পরিমাণ কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের সমিতির সদস্যরা ইতোমধ্যে কাঁঠাল ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তিনি জানান, প্রথমদিকে কাঁঠালের দাম একটু বেশি থাকলেও এখন কাঁঠালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। প্রথমদিকে প্রতিশত কাঁঠালের ক্রয় করা হয়েছে ছয়-সাত হাজার টাকায় এখন সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কাঁঠালের দাম কমে প্রতিশত কাঁঠাল ক্রয় করা হচ্ছে তিন-চার হাজার টাকা।

নানিয়ারচর উপজেলার ইসলামপুর এলাকার কৃষক মেহেদী হাসান জানান, তাঁর বাগানে পঞ্চাটি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এবার কাঁঠালের ফলনও ভালো হলো। এসব গাছ থেকে এবার ১ লক্ষ বা ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রির প্রত্যাশা। তিনি আরো জানান, তাদের বাগানে সরাসরি গাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় জেলার বাইরে থেকে বড় ব্যবসায়ীরা কাঁঠাল ক্রয় করে নিয়ে যায়। এতে তাদের পরিবহন খরচ বেঁচে যায়। ব্যবসায়ীরাও সহজেই এস্থান থেকে কাঁঠাল ক্রয় করে নিয়ে যেতে পারে।

কিন্তু রাঙামাটির সাধারণ ক্রেতারা কাঁঠালের বেশি দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বনরূপা বাজারে কাঁঠাল ক্রয় করতে আসা বিশ্বজিৎ চাকমা বলেন, কৃষকরা খুচরা বিক্রি না করাতে ৩০-৪০ টাকার কাঁঠাল ৭০-৮০টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে। বড় কাঁঠালের দাম তো আরো বেশি। তিনি বলেন, প্রকৃতমূল্যটা কৃষকও পাচ্ছে না। আবার আমাদেরও বেশি দামে কাঁঠাল ক্রয় করতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীরাই বেশি লাভবান হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন