parbattanews

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পুরুষরাও নারী নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে- সুলতানা কামাল

12696242_10207728242899356_241822834_n

স্টাফ রিপোর্টার:

‘নারীদের ক্ষেত্রে ক্ষমতা চিহ্নিত হয় ঠিকই কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ হয় পুরুষদের হাতে। আদিবাসীদের মধ্যে আগে ধর্ষণ শব্দটা ছিল না, বর্তমানে আদিবাসী পুরুষও এ ধরনের নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। শুধু আদিবাসী নয় গোটা সমাজে এখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি আমরা দেখছি।’ বিভিন্ন অপকর্মের বিচার না হওয়ার কারনেই নারী নির্যাতনের মাত্রা বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এ্যাভোকেট সুলতানা কামাল।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর ‘ডেইলি স্টার’ কার্যালয়ের সেমিনার হলে ‘বাংলাদেশের আদিবাসী গোষ্ঠীর নারীদের সামগ্রিক পরিস্থিতি রিপোর্ট- ২০১৫’ এর মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত রাঙ্গামাটিস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রেরণা প্রশ্ন করেন, ‘ শুধু বাঙালী নয় পাহাড়ীরাও এখন নারী নির্যাতন শুরু করেছে। আদিবাসীদের মধ্যে ছেলেরা এখন অনেক সমস্যা সৃষ্টি করছে। আদিবাসী ছেলেরাও এখন নারীদের প্রতি সহিংস আচরণ করছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রধান অতিথি এ্যাভোকেট সুলতানা কামাল কলেন, আদিবাসীদের মধ্যে আগে ধর্ষণ শব্দটা ছিলনা, বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পুরুষও এ ধরনের নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। শুধু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সমাজে নয়, পুরো সমাজেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। তাই দিন দিন সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উন্নয়ন সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় কাপেং ফাউন্ডেশন ও ‘বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক’ এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমার সভাপতিত্বে অনুুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওবায়দুল হক, আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা মুরং, বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বয়ক চৈতালী ত্রিপুরা প্রমূখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পার্বতী রায়।

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওবায়দুল হক বলেন, এই রিপোর্ট বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী। কারন, সম্প্রতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের উপর সহিংসতা বেড়ে গেছে। যদিও তাদের সংখ্যা খুবই কম কিন্তু সার্বিক ভাবে দেখলে এটা একটা বৃহৎ সংখ্যা। আমরা নির্যাতনের সংঙ্গা দিতে পারিনা। সে জন্য অনেক নির্যাতনের সংবাদ রিপোর্টে আসে না। সম্প্রতি চার বছরের একটি শিশু নির্যাতিত হয়েছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক বোধদ্বয় বাড়াতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখে আমরা খুবই বিচলিত। একদিকে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এই সহিংসতা হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া। পাহাড়ের সংস্কৃতি আলাদা হতে পারে কিন্তু মনে রাখতে হবে তারা আমাদের দেশের নাগরিক। তাদের প্রতি আমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে তা সঠিক ভাবে পালন করতে হবে।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ‘আদিবাসী নারী ও কন্যা শিুশুদের প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মোট ৪৩৪ জন আদিবাসী নারী ও কন্যশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, এবং এখানেএমন কোন দৃষ্টান্ত নেই যেখানে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে। উপরন্তু ২০১৫ সালে ৬৯ টি ঘটনার মধ্যে ৩৮টি পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং বাকিগুলো সমতলে সংঘটিত হয়েছে। এসব ঘটনার বেশির ভাগ ভিকটিম পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ছিল। আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক বিষয়ের মধ্যে ধর্ষণ অন্যতম। ২০১৫ সালে ১৪টি ধর্ষণ, ১২টি গণধর্ষণ, ১১টি শারীরিক লাঞ্চনা, ৬ টি শারীরিক ও যৌন হয়রানি, ১৬টি ধর্ষণের চেষ্টাসহ ৬৯টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভূমি বিরোধ ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের কারনে আদিবাসী নারীরা সহিংসতার শিকার হয়েছেন।’

Exit mobile version